অধরাই রয়ে গেল সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্ন। মৎস্য পাথর ধান সুনামগঞ্জ এর প্রাণ এ তিন প্রবাদ যেনো হারিয়ে যাচ্ছে বা হারাবার পথে। নানা সম্পদে ভরপুর এই সুনামগঞ্জে কাঙিখত উন্নয়ন হচ্ছে না। স্বপ্ন দেখার আগেই যেনো সব ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে মহাজোট সরকারের নানা পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে উল্টো। অনেক পরিকল্পনাই ভেসে যাচ্ছে নদীর জলের মতো। যে অঞ্চলের সম্পদ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে সে অঞ্চলই ধুঁক মরছে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে। সুনামগঞ্জ যে তিমিরে ছিলো আজো সে তিমিরেই আছে। মাটির পিদিম জ্বলা জনপদে আজো সে পিদিম জ্বলছে খুঁরে খুঁরে। সুনামগঞ্জের প্রায় অঞ্চলেই বিদ্যুতের আলো ঝলমলে ছায়া পড়েনি এখনো। এ কারণে এ জনপদের বাসিন্দাদের ক্ষোভও অনেক। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকারের অনেক প্রার্থীই নানা প্রতিশ্র“তি দেন এই অঞ্চলের উন্নয়নে। কিন্তু তাদের দেয় প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়ন হয়েছে কতটুকু, এ নিয়ে যেনো হিসেব কষছেন হাওরপাড়ের বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জে সংসদীয় আসন ৫টি। এ আসনগুলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তাই উন্নয়ন নিয়ে স্বপ্ন দেখেন হাওরঘেরা জনপদ সুনামগঞ্জবাসীও। মহাজোট সরকারের নানা উন্নয়ন ভাবনা যখন সাধারণের মাঝে পৌছে, তখন সংস্কৃতির তীর্থস্থান সুনামগঞ্জবাসীও আশায় বুক বাধেন। উন্নয়ন হবে এলাকায় এমন স্বপ্নেও হাবুডুবো খান হাওরপাড়ের বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের আওয়মী লীগের এমপি ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে আশার সঞ্চার হয়, তিনি হয়তো মন্ত্রী হবেন, পাল্টে দেবেন ভাটির জনপদের করুণ অবস্থা। কিন্তু না। হয়নি এমনটা। মহাজোট সরকারের প্রায় শেষলগ্নে এসে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্ত্রীত্ব পান। নতুন করে ভাবনা শুরু হয় সুনামগঞ্জবাসীর মধ্যে। এবার তারা অনুন্নতের গ্ল¬ানি মুছবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সর্বত্র বইবে উন্নয়নের জোয়ার। কিন্তু এক ঝিলিকেই হারিয়ে গেছে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সকল স্বপ্ন। তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। অর্থ কেলেঙ্কারীর ঘটনায় মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন তিনি। সেই সঙ্গে ফিকে হয়ে যায় উন্নয়ন নিয়ে স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোর। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সেই বিতর্ক আজো পিছু ছাড়েনি। অবশেষে ফের মন্ত্রীত্ব পান তিনিÑদফতরবিহীন। আবারো স্বপ্নে বিভুর সেই হাওরঘেরা জনপদের বাসিন্দারা। দফতরবিহীনমন্ত্রী এলাকার উন্নয়ন করবেন, এ নিয়েই যেন তাঁন নির্বাচনী এলাকার মানুষের স্বপ্ন। তবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওই ঘটনাকে ইস্যু করেছেন এ আসনে তাঁর চির প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির প্রার্থী নাছির উদ্দিন চৌধুরী। তিনি এ বিষয়কে সামনে রেখেই এলাকায় গণসংযোগ করছেন, আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হবেনÑএমন আশা নিয়েই সামনে হাঁটছেন।
এদিকে. সুনামগঞ্জ-১ আসনের সরকার দলীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অহরহ। ক্ষমতার দম্ভোক্তিসহ রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগও। এলাকার বালু মহালে লুটপাট হয় তার মদদপুষ্টদের ইশারায়Ñএমন অভিযোগের তীরও তার দিকে। তিনি এলাকার উন্নয়ন না করে নিজের উন্নয়ন করছেনÑএরকম অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় এটাকে কাজে লাগাচ্ছেন এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাংবাদিক উমর ফারুক আল-হাদী। হাদী অভিযোগ করে বলছেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনে নানা সম্ভাবনা রয়েছে। এ এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগাতে পারলেই উন্নয়ন হবে এলাকার। কিন্তু এ আসনের জনপ্রতিনিধি তা করতে পারছেন না। তিনি শুধু নিজের আখের গোছাচ্ছেন। এ আসনে শুধু হাদীই নন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ডা. রফিক চৌধুরী, বিএনপি নেতা মোতালেব খান ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুল হকও আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তারা ঊভয়েই এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এভাবে সুনামগঞ্জ ৫ টি আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সকল এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় প্রত্যেক আসনে সুযোগ নিতে চাচ্ছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি সাবেক যুগ্মসচিব এমএ মান্নানও এলাকার উন্নয়ন করেননি। এ নিয়ে তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে আছে ক্ষোভ, হতাশা। তিনি এলাকায় খুব একটা থাকেন না, এমন অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় উন্নয়ন নিয়ে তার কোন পরিকল্পনা না থাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের মাঝেও। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীর সাথেও তার দূরত্ব রয়েছে। এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে মাঠে কাজ করছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী লে. কর্ণেল (অব) সৈয়দ আলী আহমদ ও জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। তারা উভয়েই মাঠে কাজ করছেন, আর বর্তমান এমপি এমএ মান্নানের ব্যর্থতার দিক তুলে ধরছেন সাধারণের মাঝে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে এমপি মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। ধোপাজান বালু মহাল থেকে তার অনুসারীরা নিয়মিত চাঁদা নেয়ার ঘটনাও সাধারণের নজরে এসেছে। যদিও তিনি সরাসরি এ কাজে জড়িত নয়। তবে তার অনুসারীরা ধোপাজান বালু মহাল থেকে চাঁদা উত্তোলন ও দখল দারিত্ব করে আসলেও তিনি তা আমলে নেন নাÑএমন কথাও বলছেন অনেকে। মতিউর রহমানের এমন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে সাধারণের মাঝে পৌছে যাচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ ফজলুল হক আসপিয়া।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে স্বজনপ্রীতির। প্রশাসন চলে তার কথায়, ইশারায়। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে যতটা ভাবার কথা ঠিক তার চেয়ে বেশি ভাবেন নিজের স্বজনদের নিয়ে। তাই আগামি নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তার ঘনিষ্টজনেরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছে বিএনপি। এ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তারা সবাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। যারা প্রার্থী হয়ে মাঠে কাজ করছেন তারা হলেনÑবিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান । তবে মিলন ও মিজান তারা দু’জনই দাবি করছেন আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় হাই কমান্ডের দৃষ্টি পাবেন। সুনামগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায় মহাজোট প্রার্থীদের বিপক্ষে কতটা জনমত তৈরি করতে পারেন সে বিষয়ে নজর রাখছেন সচেতন নাগরিকরা।
No comments:
Post a Comment