ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি: ৪৫০০ কোটি ডলার ক্ষতি, নিহত ৪৮ – ‘হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশি নেই’

Wednesday, October 31, 2012

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি চলে গেলেও এখনো ভয়াবহ জের রয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৪৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। অর্থনীতিবিদরা প্রায় চার হাজার ৫০০ কোটি (২৫ বিলিয়ন) ডলার ক্ষয়ক্ষতির ধারণা করছেন।

বুধবার খুলছে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। তবে এখানে কেবল ফ্লাইট অবতরণ করতে পারবে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এদিকে, এদিনই খুলেছে নিউইয়র্কে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম পুঁজিবাজার ওয়াল স্ট্রিট। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তা বন্ধ ছিল। কয়েকটি রাজ্যের ৬৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে নিউইয়র্কের ম্যানহাটন থেকে এক বাঙালী জানান, ২৭ ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় রাত ১টায় বিদ্যুৎ এসেছে।
স্যান্ডির আঘাতে বহু মানুষ সবকিছু হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্থানীয় সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সহায়তায় এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “আমেরিকা আপনাদের সঙ্গেই আছে। এতে পুরো জাতির হৃদয় আজ ক্ষতবিক্ষত।” স্যান্ডির আঘাত হানার পর এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করা হচ্ছে।
গত সোমবার স্থানীয় সময় রাত আটটার দিকে ৮০ মাইল বেগে সামুদ্রিক এই ঝড় যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের ৮০০ মাইল জুড়ে আঘাত হানে। ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় জলোচ্ছ্বাস। নিউইয়র্কে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১৪ ফুটের মতো। এর ফলে শহরের নিচু এলাকা, ম্যানহাটন পুরোপুরি প্লাবিত হয়।
প্রেসিডেন্ট ওবামা নিউইয়র্ক ও নিউজার্সিকে উপদ্রুত এলাকা বলে ঘোষণা করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বুধবারই পরিদর্শনে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে আরও সময় লাগবে। সাবওয়ে সিস্টেম অনেকাংশেই অকেজো হয়ে পড়েছে। সাতটি সাবওয়ে টানেল পানির নিচে রয়েছে। এগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
টেলিফোন করে ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি কবলিত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের খোঁজ খবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হতাহতদের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের ভেতরে কোনো বাংলাদেশি নেই। নিউ ইয়র্ক সময় মঙ্গলবার রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৬টা) ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্কে টেলিফোন করেন শেখ হাসিনা। মোমেনের কাছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সর্বশেষ পরিস্থিত জানতে চান তিনি। মোমেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দারুণ উদ্বিগ্ন স্যান্ডি কবলিত এলাকার প্রবাসীদের ব্যাপারে। তিনি সবার মঙ্গল কামনা করেছেন।”
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি জানান, দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে আর সবার মতো বাংলাদেশিরাও অন্ধকারে রয়েছেন। অনেকের বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ৬টা) ঘণ্টায় ১২৯ কিলোমিটার বেগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি উপকূল অতিক্রম করে রাতভর তাণ্ডব চালায় প্রলয়ঙ্করী স্যান্ডি। পূর্ণিমার প্রভাবে রেকর্ড ১৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় নিউ ইয়র্ক শহরের নিচু এলাকা। ক্যাসিনোর জন্য বিখ্যাত আটলান্টিক সিটিও চলে যায় প্রায় ৮ ফুট পানির নিচে।
হাডসন নদীর পানি উপচে তলিয়ে যায় লোয়ার ম্যানহাটনের বেশ কিছু এলাকা। রাস্তার বিভিন্ন টানেল ও সাবওয়েগুলো সয়লাব হয়ে যায় পানিতে।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে নিউ ইয়র্ক রাজ্যকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কেবল এ রাজ্যেই নিহত হয়েছেন ১৮ জন। দুর্গত ১৩টি রাজ্যে সব মিলিয়ে ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল পর্যন্ত।
দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে টানা দ্বিতীয় রাতের মতো অন্ধাকারে কাটাতে হচ্ছে অন্তত ৮০ লাখ মানুষকে। ১৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সাবওয়ে টানেলে পানি ঢুকে পড়ায় নিউ ইয়র্কের গণ পরিবহন ব্যবস্থা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।
মোমেন জানান, নিউ ইয়র্ক সিটি ও আটলান্টিক সিটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নেয়া বাংলাদেশিরা এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি। বুধবার বিকাল নাগাদ (বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাত) তারা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে
Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License