তুহিনুল হক তুহিন
সীমান্ত এলাকাগুলোতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র কঠোর নজরদারি থাকা সত্ত্বেও সক্রিয় রয়েছে মাদকদ্রব্য চোরাচালান সিন্ডিকেট। সিলেটের সীমান্ত পথ ব্যবহার করে রাতের আধারে মাদক ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে নিয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। চক্রটি বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে দীর্ঘদিন থেকে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক চোরাচালানের ব্যবসা।
পরবর্তীতেএগুলো সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মাদকের স্পটগুলোতে অধিক মূল্যে বিক্রি করা হয়।
গত দুই মাসে বিজিবি প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্যআটক করে। তবে এগুলোর অধিকাংশই পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়! দীর্ঘদিন থেকে সীমান্তে বিজিবি থাকার পরেও প্রকাশ্যেই মাদক আসছে মাদক। কিন্তু রহস্যজনক মাদক চোরাচালানের মূল হোতাদেরকে আটক করতে পারেনি বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবস্থা অনেকটা এমন যে, মাদক ধরা পড়লেও বাহক বরাবরই থাকে অধরা। এ নিয়েও নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটের সীমান্ত এলাকায় মাদকদ্রব্যের বেপরোয়া চোরাচালান নিয়ে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র কঠোর নজরদারি থাকার পরও কিভাবে মাদক ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে সীমান্ত পথে নিয়ে আসে মাদকদ্রব্য। ব্যবসার সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বেশি মাদকের চালান আসে- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালাইরাগ সীমান্ত দিয়ে। এছাড়াপাংথুমাই,ভুগলা, সুতারকান্দি,বিছানাকান্দি, গোয়াইঘাট, সোনারহাট,জাফলং, সালুটিকর, উন্নাপুন গ্রাম, উৎমা, মাঝের গাও, বরমসিদ্দিপুর, চন্দন নগর, তামাবিল এবং সংগ্রাম সীমান্ত দিয়ে মাদকের চোরাচালান আসে।গত দু’মাসে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদকের লক্ষ লক্ষ টাকার চালান এসেছিল। এর মধ্যে ঐসব এলাকা থেকে বিজিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে-অফিসার চয়েজ, ফেন্সিডিল, মদ, ভারতীয় বিয়ার । আর এই সব উদ্ধারকৃত মাদক স্থানীয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অফিসে জমা দেয় বিজিবি।
মাদক চোরাকারবারীসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে ভারত থেকে রাতে নিয়ে আসে মাদক। বিজিবিকে ফাঁকি দেয়ার জন্য মাদক চোরাকারবারী সীমান্ত এলাকার গহিন পথ ব্যবহার করে। কোনভাবে যদি বিজিবি সংবাদ পেয়ে যায় তাহলে বিজিবি ঐ স্থানে পৌছানোর আগেই তারা সংবাদ পেয়ে মাদকের চালান ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আর তখন বিজিবি চোরাকারবারীদের না পেয়ে মাদকের চালান জব্দ করে অভিযান শেষ করে চলে আসেন। মাদক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা অনেক সময় বিজিবিকে মোটা অংকের টাকার বিনীময়ে সীমান্ত পথে ভারতে গিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসি। তবে মাদকের ছোট-বড় চালানের ভিন্ন রেট রয়েছে বিজিবি’র। তাছাড়া অনেক সময় বিজিবি যদি মাদকের চালাসহ আটক করলে তখন টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ব্যবসায় শুধু সিলেটের মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক ব্যবসায়ীরাসিলেটের সীমান্ত পথ থেকে মাদকের চালান গ্রহণ করেন। পরববর্তীতে মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে এগুলো সিলেট থেকে অন্যান্য স্থানে পাচার করে দেয়। এভাবেই চলছে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের চোর-পুলিশ খেলা।
সিলেটের দুই সীমান্ত থানা পুলিশ জানায়, বছরের প্রায় সময়ই বিজিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানের ঝোঁপ-জঙ্গল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আটক করে। মাদক ব্যবসায়ীরা রাতরে আধারে ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকের বিপুল পরিমাণ চালান নিয়ে এসলেও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এগুলো তারা পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখে যায়। তাছাড়া বিজিবিপরিত্যক্ত অবস্থায় মাদক দ্রব্য উদ্ধারের কারণে তারা থানায় মামলা দায়ের করে না।
কোম্পানীগঞ্জ থানায় বিজিবি’র মাদক উদ্ধারের মামলার সংখ্যা খুবই কম।। গত ১৯সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবারবিজিবি বাদী হয়ে এ থানায় মাদক আইনে মামলা নং-১৬ দায়ের করে এবং অক্টোবর মাসে মাদকের কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।
থানারভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ উদ্দিন আহমদ জানান, সীমান্ত এলাকায় মাদকের চোরাচালান বন্ধে বিজিবি’র পাশাপাশি পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে। পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদেরকে হাতেনাতে আটক করে তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করে। গড়ে প্রতি মাসে পুলিশ ৬/৭ মামলা দায়ের করে।
গোয়াইনঘাট থানারভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান খান জানান, বিজিবি’র মাদক উদ্ধারে আমার এ থানায় গত কয়েক মাসে উল্লেযোগ্য তেমন কোন মামলা নেই। তবে মাদক উদ্ধারে পুলিশের দায়ের করা মামলা রয়েছে।
No comments:
Post a Comment