সোহেল আহমেদঃ কুরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই এবারও যত্রতত্র বসেছে পশুর হাট। অনুমোদন ছাড়া কুরবানির হাট বসেছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। ঈদকে সামনে রেখে নগরীর সৌন্দর্য ধরে রাখতে সিটি মেয়র জানিয়েছিলেন নগরীতে এবার বসবেনা অবৈধ পশুর হাট। মেয়রের কথায় সায় দিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাফ জানিয়েছেন, একমাত্র ইজারাদার কাজিরবাজার ছাড়া কোথাও অনুমোদন দেওয়া হবেনা পশুর হাটের। কিন্তু শেষ মুহুর্তেই মেয়র ও কমিশনার কেউ কথা রাখতে পারেননি। অনুমোদন ছাড়া নগরীর সুবহানীঘাট, কয়েদির মাঠ এবং শাহী ঈদগাহ মাঠেও বসেছে পশুর হাট। কারা বসিয়েছেন এসব হাট এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অবৈধ পশুর হাট নিয়ে ইজারাদার, মেয়র এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। সিটি মেয়র আরিফুল হক চেীধুরী সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অসহায়ত্ব জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাকে সহযোগিতা করছেন না। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে মেয়রকে সব ধরনরে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নগরীর অবৈধ পশুরহাট উচ্চেদ নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে সিটি মেয়র। অনুমতি না নিয়ে পশুর হাট স্থাপন করায় মেয়র ব্যর্থ না অসহায় এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে নগরীর সচেতন নাগরিকদের কাছে। জানা গেছে, কুরবানির পশু বেচাকেনার জন্য একমাত্র বৈধ স্থায়ী হাট হচ্ছে কাজিরবাজার পশুর হাট। গত বছর সিটি কর্পোরেশন থেকে অস্থায়ীভাবে কয়েদির মাঠ এবং উপজেলা থেকে শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ কুরবানির পশু বেচাকেনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এবার সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চেীধুরী ঘোষণা দেন, ঈদকে সামনে রেখে নগরী সৌন্দর্য রক্ষা এবং যানজটমুক্ত রাখতে অন্য কোথাও পশুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হবেনা। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন। মেয়রের সঙ্গে আলোচনা শেষে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি একই কথা জানিয়েছেন। তাদের নির্দেশ ঠিকটাক চলছিল ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই ছন্দপতন ঘটে মেয়র ও প্রশাসনের নির্দেশের। কিন্তু ঈদের তিনদিন পূর্বে পশুর হাটের নিয়ন্ত্রনকারীরা নগরীতে মাইকিং করে কুরবানির পশুর হাটের নিত্যনতুন স্থান জানিয়ে দেন জন সাধারণকে। হাটের নিয়ন্ত্রনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ জানান উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেওয়ায় হাট বসানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, শাহী ঈদগাহ মাট উপজেলার অংশ বিশেষ হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান এ মাঠকে অনুমোদন দিয়েছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসএমপির সহকারী উপ-পুলিশ কমিশনার আইয়ুব আলী জানান,নগরীর কয়েকটি স্থানে নতুন পশুর হাট বসায় প্রশাসন প্রথমে ধারণা করে সিটি কর্পোরেশন শেষ মুহুর্তে হয়তো অনুমোদন দিয়েছে হাটের। কিন্তু মেয়র আরিফুল হক চেীধুরী অনুমোদন না দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে পুলিশ মেয়রকে নিয়ে এসব পশুর হাটে অভিযান চালায়। আজকের মধ্যে হাট উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যতায় ম্যজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় হাট উচ্ছেদ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এক যে চমক দেখাচ্ছিলেন তা এবার ছন্দপতন ঘটল। নগর সুরক্ষায় তার গ্রহন করা সিদ্ধান্ত ও উদ্যাগ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে তা হোচট খেলো। আর এজন্য মেয়র আরিফ দায়ি করেছেন প্রশাসন ও একটি রাজনৈতিক দলকে। পুলিশ ও জেলা প্রশাসন তাকে সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ অবস্থায় নতুন করে চ্যালেঞ্জ ও সংকটের মুখে পড়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। ঈদকে সামনে রেখে তার নির্দেশ উপেক্ষা করে ও অনুমতি ছাড়াই নগরীতে বসেছে একাধিক অবৈধ পশুর হাট। গতকাল শনিবার বিকালে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে আরিফুল হক চৌধুরী নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি নগরীকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে আবারও সকলের সহযোগিতা চান। সংবাদ সম্মেলন শেষে মেয়র আরিফ নগরীর অবৈধ পশুর হাট পরিদর্শন করে তা সরিয়ে নেয়ার জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন।
যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা সিটি কর্পোরেশনের কাজে সহযোগিতা করছেন। মেয়রের বক্তব্য সঠিক নয় বলেও তারা দাবি করেন। এছাড়া মেয়র আরিফ ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের যে শর্তে ঈদে ব্যবসার কথা বলেছিলেন তা তারাও মানছেনা। এর পেছনে কোনো শক্তি কাজ করছে বলে তিনি গতকালের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।
নগরীতে অবৈধ পশুর হাট : মেয়র অসহায় না ব্যর্থ
Saturday, October 12, 2013
Labels:
# সুরমা টাইমস
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment