আমাদের সিলেট ডটকম:
এবার মাতৃভূমি ছেড়েই পালানোর ব্যবস্থা করছেন আলোচিত-সমালোচিত ওসি আতাউর। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিপদ বুঝে আর দেশেই থাকছেন না আতাউর। যেকোনো দিন লন্ডন পাড়ি জমাবেন তিনি। সেই বন্দোবস্ত আগেই করা ছিলো। গ্রেফতার এড়াতে খুব গোপনে লন্ডন যেতে পাসপোর্ট ভিসার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। জানা গেছে, লন্ডন যেতে ব্যর্থ হলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত যাবেন আতাউর। সেখানে তার মামার বাড়ি।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘ঈদের দিন পর্যন্ত সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার গ্রামের বাড়িতে ছিলেন আতাউর। বিদেশে যাতে পালাতে না পারেন এজন্য বিমানবন্দর ও বন্দর স্টেশনগুলোতে নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, হাইকোটের্র অফিসিয়াল নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি। নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে মামলা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলে মামলা দেওয়া হবে।
এদিকে বার বার মোবাইল ফোনে ও সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টার পরও ওসি আতাউর রহমানকে পাওয়া যায় নি। শুক্রবার পর্যন্তও সাংবাদিকদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিলো।
উল্লেখ্য, সিলেট কোতোয়ালি থানায় ওসি আতাউরের যোগদানের পর থেকে কোতোয়ালি থানায় ঘটতে থাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। জিন্দাবাজারের মতো ব্যস্ততম এলাকায় সন্ধ্যা রাতে মার্কেটের দারোয়ানকে খুন করে স্বর্ণের দোকান লুট করা হয়। এ অবস্থায় আতাউরকে বদলি করা হয় মৌলভীবাজার সদর থানায়। কিন্তু সেখানে যোগদান না করে তদবির করে আবার ফিরে আসেন নিজ জেলার কোতোয়ালী থানায়।
তার সম্পর্কে বিস্তর অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, কেউ তার কক্ষে প্রবেশের আগেই খুলে রাখতেন টেবিলের ড্রয়ার। ড্রয়ারে ফাইলপত্র নয় ঢুকতো টাকা। টাকার বিনিময়ে হতো আসামি ধরা-ছাড়ার খেলা। কাউকে মামলায় জড়িয়ে দেওয়া, রিমান্ডে আনা-নেওয়া সব কিছুর মাঝেই ছিলো ড্রয়ারের ব্যবহার। আর আসামি নির্যাতনের কোন মাত্রা বাকি রাখেননি ওসি ‘মামু’ আতাউর। টাকার লোভী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠায় তিনি সিলেটে ‘মামু’ নামেই পরিচিত হয়ে উঠছিলেন। পুরো নাম আতাউর রহমান বাবুল। যখন যে সরকার তখন তার লেবাস লাগিয়ে বাগিয়ে নেন পোস্টিং।
সেই ধারাবাহিকতায় কনস্টেবল থেকে থানার ওসিও তিনি। সিলেটেই একাধিক ফ্লাট বাড়ি কিনেছেন। অভিজাত বিপণী বিতান ‘আল হামরা’য় দখল করেছেন দোকান। গ্রামের বাড়ি খলাছড়া ইউনিয়নের ডিগ্রি গ্রামে ‘সুধার বাড়ি’ নামে পরিচিত ২০ একরের বাড়ি করেছেন। জকিগঞ্জ বাজারে স্বাদ মিষ্টি ভাণ্ডার দোকান খুলেছেন।
কোতোয়ালী ওসি থাকা অবস্থায় পিরেরচক গ্রামে একটি বাসা কিনেছেন তিনি। সম্প্রতি ৩ টি মৎস্য খামার গড়েছেন বাড়ির পাশে। সিলেটের উপশহর নিজের একটি বাড়ি আছে। তবে সেটি ভাড়া দেয়া। আত্মীয় স্বজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে দুই কোটি টাকা রেখেছেন- এমনসব তথ্য এখন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
আর এ সবই হয়েছে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে সিলেটে যোগ দেন ওসি ‘মামু আতাউর’। ওই বছরের ৭ জুলাই নিজ জেলা সিলেট কোতোয়ালী থানায় পোস্টিং নিয়ে আসেন তিনি।
সম্প্রতি ছাতক পৌরসভার মেয়রের ভাইকে থানায় ধরে এনে নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর বেকায়দায় পড়েছেন মামু আতাউর। এ ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওসি আতাউরের নির্যাতনের শিকার হয়ে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি ছাতক পৌর মেয়রের ওই ভাইকে দেখতেও গেছেন তিনি।
এদিকে তার নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কোতোয়ালীর ওসি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও মামলা রজ্জুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অফিসিয়ালি সে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেবে সিলেট মহানগর পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে ওসি আতাউরকে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম রেঞ্জে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। তবে এখনও সিলেটের নিজ বাড়ি জকিগঞ্জে অবস্থান করছেন তিনি।
যে কোনো সময় ঘোমটা দেবেন ওসি আতাউর!
Friday, August 1, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment