সরকার পরিবর্তন আসন্ন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী বছরের শুরুর দিকেই দায়িত্ব গ্রহণ করবে নতুন সরকার।
আর এই সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এক পক্ষ চাচ্ছেন, বর্তমান সরকারই ফের ক্ষমতায় আসুক। এ পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ‘দলকানা’ কিছু কর্মকর্তা। নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে এমন কর্মকর্তাদের নিজেদের পক্ষে টানতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, এ সরকারকে ফের ক্ষমতায় না আনতে পারলে পরবর্তী পাঁচ বছরই ওএসডি থাকতে হবে। পাশাপাশি অনেকের চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যপক্ষ মনে করছে, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটে যারাই ক্ষমতায় আসুক তাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু যায় আসে না। এ কারণে তাঁরা কাউকে ক্ষমতায় আনতে বা বিদায় করতে কোন কাজ করবেন না। এ পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন সরকারে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালনকারী কয়েকজন সচিব। তাঁরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় নিরপেক্ষ থাকতেই আগ্রহী। তাঁদের মতে, কোন দলকে ক্ষমতায় আনা বা না আনা তাদের বিষয় নয়। এটি রাজনৈতিক বিষয়।
গত ২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ২৪ অক্টোবরের পর মন্ত্রিসভা থাকবে কিন্তু নীতিনির্ধারণী কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। সংসদ থাকবে কিন্তু কোন অধিবেশন বসবে না। কাজেই ওই সময় যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রশাসন যাতে স্থিতিশীল থাকে, সে ব্যাপারে সচিবদের সতর্ক থাকতে হবে। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে সকল সচিবকে সর্তক থাকতে নির্দেশ দিয়ে নির্দেশনা পাঠালেও তাদের ওই সময় করণীয় কী এবং ওই সময়ে কী ধরনের সরকার বা মন্ত্রিসভা থাকবে, সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। কাজেই ২৪ অক্টোবরের পর করণীয় সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে সচিবদের অনেকে। তাঁরা মনে করছেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা আসবে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ড. এ এম এম শওকত আলী বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ ও শক্ত অবস্থান নেয়, তবে অন্য কারো এ বিষয়ে কাজ করার তেমন সুযোগ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২৪ অক্টোবরের পর সচিবরা শুধু নিয়মিত কাজ করবেন। ওই সরকার কোন পলিসি ডিসিশন নেবে না।
জানা গেছে, বর্তমানে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণকারী ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাইছেন বর্তমান সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে। সে মতে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমন কর্মকর্তাদের কাছে সে বার্তাও পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী আদাজল খেয়ে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন ‘দলকানা’ কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা। এসব ‘দলকানা’দের কাছে এখন প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদেরই কদর বেড়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন সকল কর্মকর্তাকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে। তাঁরা কর্মকর্তাদের বোঝাতে চেষ্টা করছেন, এ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসলে বিদ্যমান সুযোগের পাশাপাশি আরো নানা সুবিধা আদায় করা যাবে। আবার কাউকে কাউকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যমতের সরকার দায়িত্ব নিলে পাঁচ বছরই ওএসডি থাকতে হবে। বাধ্যতামূলক অবসরেও যাওয়া লাগতে পারে। এ পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব।
তবে বর্তমান সরকারের আমলে অনাদরে থাকা অর্থাৎ কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা এখন নিরপেক্ষ থাকতে চাইছেন। ইতিমধ্যে এ ধরনের কিছু কর্মকর্তা রাজধানীতে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী ২৪ অক্টোবরের পর পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নেবে তারাও সেদিকেই ছাতা ধরবেন। কাউকে ক্ষমতায় আনা বা না আনা তাদের কাজ নয়। এ ধরনের সচিবদের একটি বড় অংশ চাচ্ছেন, ২৪ অক্টোবরের পরবর্তী পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ হিসেবে তাঁরা মনে করছেন, ৫ সিটি নির্বাচনের ন্যায় জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ গো-হারা হারবেন। বিএনপি আন্দোলন না জমাতে পারলেও সাধারণ জনগণই রাস্তায় নামতে পারে। তখন সরকার সমর্থক অনেককেই খুজে পাওয়া যাবে না।
প্রায় দুই বছর ধরে ডাম্পিং পোষ্টিংয়ে কর্মরত ৮২ নিয়মিত ব্যাচের একজন সচিব বলেন, জনগণের ভোটে কারা সরকার গঠন করবে তা নিয়ে এ মুহুর্তে চিন্তা করছি না। এ সরকারের সময়ও আমাকে গুরুত্বহীন পদে থাকতে হচ্ছে। যারা গুরুত্বপুর্ণ পদে থেকে আখের গোছাচ্ছে তারাই এসব নিয়ে চিন্তা করবে।
No comments:
Post a Comment