নিউইয়র্ক থেকে এনা
৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলার মধ্য দিয়েই জামাত-শিবির নির্মূল হয়ে যাবে। এজন্যে ওরা নির্বাচনের সময় মরন-কামড় দিতে পারে। সে ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায়
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ এ আলোচনায় আরো অংশ নেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কলামিস্ট মহিউদ্দিন আহমেদ। মিশনের প্রেস সেক্রেটারী মামুন-অর রশীদের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র ৪ দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের জন্যে ৮ অক্টোবর সকালেই অর্থমন্ত্রী নিউইয়র্কে এসেছেন। ৯ অক্টোবর বুধবার সকালে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে যাচ্ছেন।
আলোচনার শুরুতেই অর্থমন্ত্রী উপস্থিত সুধীজনের কাছ থেকে প্রশ্ন আহবান করেন। সাংবাদিক, রাজনীতিক, সমাজকর্মী, লেখক, মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৩ জন প্রশ্ন করেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি, বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের অবস্থান, গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহম্মদ ইউনূস, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকরী হতে কতদিন বিলম্ব হতে পারে, হেফাজত ও জামাত-শিবির পরিস্থিতি, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা সহ বিভিন্ন জনের প্রশ্ন অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে শুনেন ও জবাব দেন। অর্থমন্ত্রী তার জবাবে বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন অর্থের ছাড় দেয়নি বিশ্বব্যাংক। এতদসত্বেও তারা অপবাদ দিয়েছে। আমি এ ধরনের আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। এখন একজনের ডায়রিতে ঘুষের পার্সেন্টেজ লেখা নিয়ে কানাডায় মামলা চলছে। সে মামলা অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে বিধায় আমরা পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিয়েছি। ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংক সকল সহায়তা বন্ধ করেছিল। আমাদের সময়ে সেটি চালু হয়েছে সর্বত্র জবাবদিহি চালু হওয়ায়।’ তিনি বলেন, ‘পদ্ধা সেতু প্রকল্পের ১.২ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের চুক্তি বাতিলের পরও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ৩.১ বিলিয়ন ডলারের কার্যক্রম চলছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের ইনটেগ্রিটি ইউনিট জিহাদ ঘোষণা করায় আমরা সোচ্চার হয়েছি। তাদের আচরণের ব্যাপারে বিভিন্ন পর্যায়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর ফলে আমরা লাভবান হচ্ছি। এখন অন্য প্রকল্পে অর্থ ছাড় দেয়া হচ্ছে দ্রুত।’ বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ’র এবারের বৈঠকেও বাংলাদেশ কিছু প্রকল্পের প্রস্তাব দেবে। কমিটিমেন্ট পাওয়া যাবে এবারও। একইসাথে বিশ্বব্যাংকের ইমেজ বিপন্ন হয় এমন কোন কাজ যাতে তারা না করে সে পরামর্শ দেব-উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ৬০ বছর যাবত আমি বিশ্বব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি। তাই আমার পরামর্শ তারা গুরুত্ব দেবেন বলে আশা করছি।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, নিজের তৈরী আইন লংঘন করেছেন ড. মুহম্মদ ইউনূস। এরপর সেই আইন লংঘনের দায় বাংলাদেশের ওপর চাপানোর জন্যে তিনি তার আন্তর্জাতিক খ্যাতিকে ব্যবহার করছেন। চাকরির বয়সসীমা ১২ বছর আগেই অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় আমি তাকে ব্যািক্তগতভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলাম যে, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ছেড়ে দিন, আমরা সম্মানজনক একটি পজিশনে আপনাকে রাখবো। কিন্তু তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। আদালতে গেলেন। মাননীয় আদালতে তিনি জয়ী হতে পারেননি তার তৈরী আইনের কারণে। অর্থমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে, গ্রামীণের নাম ব্যবহার করে আরো ৫৪ টি কোম্পানী গড়েছেন-যা আইনসিদ্ধ নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৮২ লাখ শেয়ার হোল্ডার রয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকে-এ দাবি করেন ড. মুহম্মদ ইউনূস। কিন্তু কাউকেই ডিভিডেন্ট দেয়া হয়নি। শেয়ার হোল্ডারের সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৩ লাখকে। অ গ্রামীণ ব্যাংকে ১৯ টুকরা করার যে গুজব দেশ-বিদেশে রটানো হয়েছে সেটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রচার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম এবং বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠি কখনোই ভালো জিনিষ দেখতে চান না। তবে ইকনোমিস্ট, ওয়ালস্ট্রীট জার্নাল, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্ব মিডিয়ায় ভাল সংবাদ ছাপা হলে সেটি তারা লুফে নেন। দেশের ভেতরের উন্নতি-অগ্রগতি তাদের দৃষ্টি কাড়ে না। অত্যন্ত দু:খ হয় যে, বিদেশীরা যখন ভালো বলেন তখন সেটি তারা বিবেচনা করেন। ।
বিশ্বের কোন যুদ্ধাপরাধীকে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়না। আমরা সেটি দিচ্ছি। এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া ইতিমধ্যেই বলেছেন যে, আপিল প্রক্রিয়া শেষ হলেই রায় কার্যকর হবে।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ বারবার বাধাগ্রস্ত হলেও এখন এর ভীত অনেক শক্ত। একে আর বাধাগ্রস্ত করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সকলে এক কাঁথার নীচে ঘুমিয়েছি, এক পাতে খেয়েছি, কেউ প্রশ্ন করিনি কে মুসলমান, কে হিন্দু, আর কে খ্রিস্টান। এর মধ্যেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত হয়েছে সকলের মধ্যে।
No comments:
Post a Comment