সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ এক যুক্ত বিবৃতিতে গত ৫ অক্টোবর সিলেটে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘অন্তঃসারশুন্য, উস্কানিমূলক, মিথ্যার বেসাতি আর সত্যের অপলাপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৮ সালের ঐতিহাসিক জাতীয় নির্বাচনে একটি যুগোপযোগী নির্বাচনী ইশতেহারকে সামনে রেখে দেশের আপামর জনগণ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধনের পাশাপাশি ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চিহ্নিত মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয় দেশে। যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম চলছে এবং একের পর এক ঐতিহাসিক রায়ও ঘোষিত হচ্ছে। ঠিক তখনি বেগম জিয়া যুদ্ধাপরাধের কলঙ্কমাখা জামাত-শিবিরকে সাথে নিয়ে সিলেটের পবিত্র মাটিতে সভা করে চরম মিথ্যার বেসাতি করে গেলেন। তিনি বলেছেন, তার সরকারের সময়ে দেশে কখনো জঙ্গী হামলা হয়নি। বেগম জিয়া বেমালুম ভুলে গেছেন তিনি ক্ষমতায় থাকতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামীলীগের জনসভায় ন্যাক্কারজনক বোমা হামলা চালিয়ে নারী নেত্রী আইভি রহমান সহ ২৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আলাহর অশেষ কৃপায় সেদিন আজকের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রানে রক্ষা পেয়েছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে জঙ্গী নেতা বাংলা ভাই যখন উত্তরবঙ্গে ডিসি অফিস ঘেরাও করেছিল এবং হত্যা নির্যাতন চালিয়ে সমগ্র উত্তরবঙ্গে আইয়্যামে জাহেলিয়াত সৃষ্ঠি করেছিল, তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বাংলা ভাই ইংলিশ ভাই বলে দেশে কারো অস্তিত্ব নেই। হাওয়া ভবনের নীল নক্সা অনুযায়ী একের পর এক জঙ্গী হামলার ধারাবাহিকতায় সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) এর দরগাহে বৃটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর উপর বোমা হামলা, হোটেল গুলশানে আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা, সৈয়দা জেবুন্নেছা হকের বাসায় মহিলা, আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড আক্রমন সহ দেশের ৬৪টি জেলায় একসাথে গ্রেনেড হামলার ঘৃণ্য রেকর্ড আজো খালেদা জিয়ার দখলে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, তিনি সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার কথা বলে চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছেন। বিগত ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন সফল অর্থমন্ত্রী বৃহত্তর সিলেটের কৃতিসন্তান শাহ এ এম এস কিবরিয়া যখন এই মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেন তখন এটি ৪ লেনে উন্নীত করার বিষয়টি মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভূক্ত ছিল। পরবর্তীতে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সিলেট-ঢাকা মহাসড়ককে ৪ লেনের মাস্টারপ্ল্যান থেকে বাদ দিয়ে তা কেটে ছোট করার যে অপকৌশল নিয়েছিলেন তা সকলেরই জানা। তাছাড়া সুরমা নদীর উপর শত বছরের পুরনো ক্বীন ব্রীজের স্থলে অত্যাধুনিক ক্যাবল স্টেড ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্প যখন একনেকে পাশ হয়েছিল তখন খালেদা জিয়া নিজে একনেকের পরবর্তী সভায় তা বাতিল করে দিয়ে সিলেটবাসীর সাথে যে বেয়াইসুলভ উপহাস করেছিলেন তা কারো অজানা থাকার কথা নয়। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশী সময় পরে সিলেট-ঢাকা রেলপথে আধুনিক কালনী এক্সপ্রেস ও ডেমু ট্রেনের সংযোজনের কথা বেগম জিয়াকে মনে করিয়ে দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, দ্রুতগামী রেলের কথা বলে তিনি কোন্ দ্রুত দুর্নীতির কথা আগাম ঘোষনা দিয়ে গেলেন তা সিলেটবাসীর বোধগম্যের বাইরে নয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সিলেটের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এর অর্থ বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সহ বিভিন্ন বিভাগ চালুর যাবতীয় কার্যক্রম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সম্পন্ন হয়। এছাড়া বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী শিক্ষানীতি সর্বজনবিদিত। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই প্রতি বছর একইদিনে একযোগে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের হাতে কোটি কোটি বই তুলে দিতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশে ওয়ার্ড ভিত্তিক সাড়ে ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে, যা বিগত বিএনপি সরকারের সময় বন্ধ করে দিয়ে এখানে অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানা গড়ে তুলা হয়েছিল। বর্তমান সরকার এগুলোতে ৬ হাজার নার্স নিয়োগ এবং হাসপাতালগুলোতে সাড়ে ৭ হাজার আসন সৃষ্টি করে স্বাস্থ্য সেবায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে। গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের নিবিড় চিকিৎসাসেবার মধ্য দিয়ে নিরাপদ প্রসব ব্যবস্থা চালু হওয়ায় দেশে শিশু মৃত্যুর হার উলেখযোগ্য ভাবে কমেছে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ এওয়ার্ডে ভুষিত হয়েছেন। যা দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনেছে।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত বিএনপি সরকারের সময় দেশ বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হবার পরও বেগম জিয়া নির্লজ্জের মতো সিলেটে মিথ্যার বেসাতি করে গেলেন। তার পুত্র কুখ্যাত হাওয়া ভবনের খলনায়ক তারেক রহমানের দুর্নীতির মধ্য দিয়ে লুন্ঠিত পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরৎ আনা হয়েছে। বিশ্ব বিখ্যাত আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তদন্ত করে তারেক রহমানের দুর্নীতির প্রমান খুঁজে পেয়েছে। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের এহেন কর্মকান্ডে বহির্বিশ্বে আমাদের মান মর্যাদা আনেকখানি ক্ষুন্ন হয়েছে। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের নীল নক্সানুযায়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ শাহ এএমএস কিবরিয়া, সাবেক সাংসদ মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিন, আহসানউলাহ মাষ্টার, আইভি রহমান, প্রখ্যাত লেখক হুমায়ুন আজাদ, সাংবাদিক মানিক সাহা, অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী সহ অগুণতি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। বিচারের বাণী তখন নিভৃতে কেঁদেছিল। বিএনপির আমলে একযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সেসময় যে মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালানো হয়েছিল সচেতন মানুষ মাত্রই তা ভুলে যাবার কথা নয়।
নেতৃবৃন্দ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নির্বাচনের কথা উলেখ করে বলেন, এগুলো এতোই নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য ছিল যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেই নির্বাচন ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এমনকি হবিগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচন এবং সাম্প্রতিককালে দেশের ৫টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন এতোই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছিল যেখানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। অথচ কিশোরগঞ্জের যে উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করেনি সে নির্বাচনের কথা উলেখ করে বিএনপি নেত্রী মিথ্যার আশ্রয় নিলেন। সে নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছে।
জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বিএনপি ও তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কথায় কথায় ধর্মের দোহাই দিয়ে উস্কানি আর মিথ্যাচারের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃত অর্থে গণমানুষের রাজনীতিতে আত্মনিয়োগের আহŸান জানান।
জেলা ও মহানগর আ’লীগের বিবৃতি – সিলেটে খালেদা জিয়ার বক্তব্য অন্তঃসারশূন্য,উস্কানিমূলক ও মিথ্যার বেসাতি মাত্র
Sunday, October 6, 2013
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment