মিজানুর রহমান মিজান
পৃথিবীর শ্রেষ্ট ধর্ম ইসলাম। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মে মহান আল্লাহ তাঁর প্রেরিত মহামানব , রাসুল ( স:) কাছে পবিত্র কোরান নাজিলের মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য পবিত্র কোরানে জীবন যাত্রার বিভিন্ন বিধি-নিষেধ , আচার আচরণ , নিয়ম-কানুন ইত্যাদি সুষ্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন। ইসলাম পাঁচটি মুল স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ পাঁচটি স্তম্ভের একটি হচেছ হজ্জ। হজ্জের পারিভাষিক অর্থ , ইহরামের সহিত কতিপয় অনুষ্টান নির্দিষ্ট মাসে , তারিখে ও স্থানে সমাধা করা। হজ্জ সকল সামর্থবান মুসলমানের উপর ফরজ করা হয়েছে। তাছাড়া মক্কার নাম স্মরণে মুসলিম হৃদয়ে জাগ্রত হয় শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ ( স:) এর জন্মস্থান , ক্রীড়াভুমি , যৌবনের কর্মভুমি , মহাজীবনের কত দু:খ , বেদনা , জয়-পরাজয় মক্কার মাটির ধুলিকণাতে রয়েছে মিশে।
সৌদি আরবের পবিত্র ভুমি মক্কা ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু ও পবিত্রতম স্থান। হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের মহামিলন , মহাতীর্থের , মহাসম্মেলনের স্থান। এ মক্কায় স্থাপিত হয়েছিল আল্লাহর ইবাদতের প্রথম ঘর কাবা শরিফ। কালক্রমে কাবা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম ( আ: ) কাবাগৃহ পুন:নির্মাণ করেন। এ কাজে তিনিকে সহায়তা করেন তদীয় পুত্র হযরত ইছমাইল (আ: )। যেখানে আল্লাহর ঘর প্রথম স্থাপিত হয় , যেখানে আদি পিতার প্রার্থনা কবুল হয় , যেখানে আল্লাহর উদ্দেশ্যে এক মহান আত্মোৎস্বর্গের পুণ্যময় স্মৃতি জাগ্রত , সেখানে মুসলমানরা ছুটে যান অনুতপ্ত চিত্তে প্রভুর কথা মনে করে “ হাজির হে প্রভু হাজির ” বলিতে বলিতে নগ্ন পদে , নগ্ন মস্তকে , দীনহীন বেশে , শুদ্ধ চিত্তে ব্যাকুল হৃদয়ানুভুতি নিয়ে আকুল প্রার্থনা জানায়। হযরত হাজেরার ব্যথাব্যাকুল ছুটাছুটির অনুকরণ করে ইছমাইল মাতা হাজেরার বিরাট ব্যথার কথা উপলব্ধি করার প্রাণপণ চেষ্টা করে।
মহাপুরুষের এ প্রেরণাময়ী স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমুহ দেখার উদ্দেশ্যে শুদ্ধ চিত্তে সংকল্পসহ সংসারের মায়া মমতা নিদেন পড়্গে সাময়িক ভাবে ত্যাগ করা , মহাপুরুষদের আধ্যাত্মিক শক্তি সহযোগে আত্মার স্ফুরণ চেষ্টাতে তাঁেদর কর্মভুমি , তাঁদের দু:খ , বেদনা , সাধনা , বিজয়ের স্থানগুলি নিরীড়্গণ , হজ্জের অনুষ্ঠানাবলী উদযাপন , জগতের ভিন্ন দেশীয় ভিন্ন আবহাওয়ার , ভিন্ন ভাষাভাষী মুসলমানের একত্রে প্রার্থনা করা ইত্যাদি সমস্ত অবস্তা মিলিত হয়ে হজ্জকে এক মহা আশীর্বাদে পরিণত করে। উদাসীন চিত্তে লাভ করে প্রেরণা , সংসার জীবন শিথিল হয়ে আত্মাকে আল্লাহর কথা ভাবিতে সময় প্রদান করে , দূর্বল ইমান দৃঢ় হয় , সামাজিকতায় উদ্বুদ্ধ হয় , ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় , সামাজিক , রাষ্ট্রীয় , ধর্ম সম্বন্ধীয় বড় সমস্যা বিশ্ব মুসলিম সভায় সমবেত যুক্তি , বুদ্ধিতে সমাধানের প্রচেষ্টা , ইসলামের রড়্গক , কেন্দ্রীয় মুসলিম শক্তির সহিত সম্পর্কস্থাপন , হজ্জ মাঠের ইমাম রুপে স্বয়ং খলিফা বা তাঁর প্রতিনিধি , হযরতের স্থলাভিষিক্ত রুপে দুনিয়ার মুসলমানকে উপদেশ দেবার সুযোগ ঘটে। কত লোকের নিদ্রিত আত্মা হজ্জের উৎসাহে জাগ্রত হয়ে উঠে।
আমরা যদি দুই চক্ষু বন্ধ করে একটু চিন্তা করি তাহলে আমাদের সামনে স্পষ্ট প্রতিভাত হবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত অসংখ্য মানুষ ভিন্ন্ আকার-আকৃতি , দৈহিক রং ও ভাষা , পোষাক-পরিচছদ ভিন্ন হওয়া সত্ত্বে ও কেন্দ্রের নিকবর্তী হয়ে নিজ নিজ পোষাক খুলে ফেলে সকলে একই স্বাভাবিক , সাধারণ পোষাক পরিধান করে। এরা সকলেই একই রাজার সেনাবাহিনী। সবার মনে এক রাজার আনুগত্যের সুত্র বিজড়িত। লড়্গ্য তাঁদের মহাসম্রাটের সম্মুখে উপস্থিত হওয়া। একই পোষাক ( এহরাম) পরিহিত অবস্তায় মীকাত অতিক্রম করে যখন সম্মুখে অগ্রসর হয় , তখন সকলের কণ্ঠে সমস্বরে একই ধবনি প্রতিধবনিত হয়ে আকাশ বাতাস করে তোলে মুখরিত। তাহচেছ- লাববাইকা আল্লাহুম্মা লাববাইকা। শব্দ উচচারণের কণ্ঠ বিভিন্ন। কিন্তু একই ধবনি। বিভিন্ন দেশের কাফেলা যতই অগ্রসর হয় , ব্যবধান ততই কমে আসে। পরস্পর মিলিত হয়ে একই পদ্ধতিতে নামাজ পড়েন। সবার পোষাক এক ও অভিন্ন। এক ইমাম , এক লড়্গ্য , এক ভাষায় নামাজ আদায় , এক “ আল্লাহু আকবার ” ধবনির ইঙ্গিতে উঠা-বসা , রুকু-সিজদা , একই ভাষায় কোরান পাঠ ইত্যাদি সম্পন্ন করেন। সমবেত জনতার ভাষা , জাতি , দেশ , বংশ , গোত্রের কৃত্রিমতা বিবর্জিত একাকার হয়ে জামাত রচনা পূর্বক পৃথক ও আশ্চর্য পরিবেশ তৈরী করেন। এ পরিবেশে মানুষ আত্মভোলা হয়ে অচিন্তনীয় ভাবধারায় হয় মত্ত। চলে ভাবজগতের মধ্যদিয়ে কাবার চতুর্দিকে প্রদড়্গিণ করতে , হজ্জের বাকী সব আনুসাঙ্গিক কর্ম সম্পাদনে। এ সমস্ত কাজে যে পবিত্র পরিবেশ-পরিস্থিতি ও আধ্যাত্মিক মনোভাবাপন্নতার সৃষ্টি হয় , তা অতুলনীয়। পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে এর তুলনা হয় না , হতে পারে না।
আমি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে এখানে বলতে চাই হজ্জ পালন কালীন কিছু সাধারণ করণীয় ও কর্তব্য সমুহ। প্রথমেই বলে রাখা ভাল , আমাদের দেশ থেকেই বয়স্ক লোকেরা হজ্জ পালনে যান অধিকাংশ। কিন্তু অন্যান্য দেশের মানুষ সাধারণত হজ্জে আসেন শরীর সুস্থ্য , সবল থাকতে। কারন লাখ লাখ লোকের সমাগমে হজ্জের সকল আনুসাঙ্গিক পর্ব সমাপন কষ্ট সাধ্য। অপরের উপর নির্ভর বা অপরকে দিয়ে করানো কতটুকু যুক্তি সঙ্গত তা বিবেচনা করা অবশ্যই প্রয়োজন।
হজ্জ মৌসুমে সৌদি আরবে যানজট প্রচুর লেগেই থাকে। এমন কি অনেক সময় হিমশীম খেতে হয়। অনেক সময় দেখবেন যানজটের কারনে গাড়ি পৌছার অনেক পূর্বে আপনি নিদির্ষ্ট স্থানে গিয়ে পৌছেছেন দু’পায়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে। হজ্জ পালন কালে মক্কা , মিনা , মুজদালিফা , আরাফার ময়দান অনেক বেশী দুরত্বে অবস্তান নয়। অনেকটা কাছাকাছি অবস্তান। শুধু মাত্র বড় বড় সীমানা পিলার দিয়ে পৃথক করা আছে জায়গাটুকু। তা আপনাকে সতর্কতার সহিত লক্ষ্য করতে হবে। তাই বলে যে একেবারে নিকটে তাও নয়। এক্ষেত্রে পথ জানা বা শক্ত সামর্থ হলে ভাল হয়। আপনাকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে বয়স্ক ব্যক্তিকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করা। হোক সেজন স্বদেশী বা বিদেশী।
আপনি মক্কা কিংবা মদিনায় যেখানেই হোটেলে , তাবুতে বা বাসাবাড়িতে থাকুন না কেন ? হোটেলের কার্ড প্রথমেই সংগ্রহ করে সাথে রাখবেন সর্বড়্গণ। মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যাবার ভয় বা কাফেলা থেকে বিচিছন্ন হবার আশংকা লেগেই থাকে। কাছের তাবু ও আপনি সহজে খুজে পাবেন না। কারন সকল তাবু দেখতে একই রুপ। এমন পরিবেশে আপনি পুলিশের আশ্রয় নিন। দু,একজন পুলিশ রুঢ় আচরণ দেখালে আপনি ভাববেন না বা নিরাশ হবেন না। অপর পুলিশের আশ্রয় নিলে পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন। শতকরা ৯৫ জন পুলিশ ভাল , আপনাকে সেবা প্রদানে আন্তরিক। অনেক সময় আপনি দেখবেন বাস কথা ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবার। কিন্তু পেয়েছেন শীতাতপ বিহীন। এড়্গেত্রে অযথা সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আপনি আপনার হজ্জের আনুসাঙ্গিক কর্ম সঠিক ভাবে পালনে সচেষ্ট হোন। নতুবা আপনি পিছনে পড়ে যাবেন বা সময় পাবেন না। আবার ড্রাইভারদের সাথে জায়গা চিনে নেবার কথা বলে ও লাভ হবে না। ড্রাইভার সাধারণত ভিন্ন দেশের হয়ে থাকে। খুব কম ড্রাইভার থাকে সৌদি। অথবা জানা শুনা। আপনি সতর্কতার সহিত এবং সর্বড়্গণ হজ্জ গাইড় সংগ্রহ করে সঙ্গে রাখুন।
চামড়া বা দামী জুতা হোটেলে বা তাবুতে ব্যবহার করুন। কম দামী বা সিস্নপার তিন চার জুড়া রাখুন। এক দিকে এহরাম বাধাঁর পর দামী জুতোর অনুমোদন নেই। আবার কাবা শরীফে প্রবেশ কালে আপনাকে জুতা বাইরে রেখে যেতে হবে। ফিরে এসে পাবেন না। বিভিন্ন মসজিদে ও তাই। অথবা সঙ্গে রাখুন। নতুবা নিরাপদ কোন স্থানে রাখুন।
কাবা গৃহে প্রবেশ কালে আপনি চেকিংএর জন্য প্রস্তুত থাকুন প্রতিবার। সঙ্গে অনেক সময় পানির বোতল , জায়নামাজ ও নিতে দিবে না। তাই সতর্কতার সহিত সঙ্গে মালামাল রাখবেন। মুল্যবান জিনিষ সঙ্গে না রাখাই ভাল। চেকিং হবে পুরুষ পুরুষ কর্তৃক এবং মহিলা মহিলা কর্তৃক। টয়লেট , অজুখানা নারী পুরুষ আলাদা আলাদা। সতর্কতা অবলম্বন করুন সর্বদা , সর্বত্র মহিলা অজু খানা বা টয়লেটে না ঢুকার।
নামাজের কিছুড়্গণ আগে গিয়ে পৌছার চেষ্টা রাখবেন। মনে রাখতে হবে কাবা গৃহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সময়টুকু ব্যতীত কখন ও লোকের তাওয়াফ করা বিরত হয় না। সুতরাং আপনি পছন্দ করে নামাজের জন্য স্তান নির্ধারণ করে নিন। এমন জায়গায় দাড়াবেন না যেখানে তাওয়াফকারীদের অসুবিধা বা আপনি নামাজ আদায়ে অসুবিধাবোধ করেন। কোন কোন সময় মাকামে ইব্রাহিম এর পিছনে নামাজ আদায় করতে পারবেন না লোকের ভীড়ে। তবে মাকামে ইব্রাহিমকে সামনে রেখে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করবেন। না পারলে অন্যকে অসুবিধা দেবার চেয়ে দুরে থেকে পাঠ ও উত্তম। হজরে আসওয়াদ এ চুম্বন দেয়া অতি সহজ। আপনি অনুসরণ করুন কাবা গৃহের দেয়াল ঘেঁষে লাইন অটোমেটিক হয়ে যায়। সুতরাং এ লাইনে আপনি ঢুকে পডুন সুযোগ বুঝে। আপনাকে কিছুই করতে হবে না। লাইনের গতিতে এগিয়ে যান। চুম্বন কাজ সহজেই শেষ করতে পারবেন। নতুবা অন্যকে কষ্ট দেবেন শুধু শুধু। কাজের বেলায় ফাঁকা। অন্যকে কষ্ট দেয়া কখন ও সঠিক নয়।
আপনি সর্বদা এক বোতল পানি সঙ্গে রাখুন। স্থানে স্থানে সরকার ফ্রিজ স্থাপন করে রেখেছে হাজীদের সুবিধার্থে ও কষ্ট লাঘবের নিমিত্তে। আপনার সচেতনতা ও সচেষ্টতার দরকার। পথ চলতে , গরমের আধিক্যতা হেতু পানি বা ঠান্ডা পানীয় নিত্য প্রয়োজন। তবে বর্তমানে এত গরমের আধিক্যতা নেই , এ কারনে যেহেতু সৌদি সরকার প্রতি নিয়ত উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচেছ। কোথাও টিনের ছাউনি দিয়ে দীর্ঘ রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। সুড়ঙ্গ পথে প্রচুর শীতাতপ স্থাপিত রয়েছে। মরুভুমি খ্যাতির দেশে প্রচুর গাছগাছালী দেখে অনেকটা মনেই হবে না মরুভুমিতে আপনি আছেন বা চলাফেরা করছেন। সব স্থান প্রায় ছায়াযুক্ত রয়েছে।
হেরেম শরীফ বা অন্যত্র আপনার কোন জিনিষ পড়ে গেলে , যেমন স্যান্ডেল বা ছোটখাট কোন জিনিষ , তা উত্তোলনের জন্য আপনি কখন ও নীচু হয়ে ঝুকবেন না। কারন আপনি মুহুর্তে পদদলিত হতে পারেন তা নিশ্চিত।
হেরেম শরীফে প্রবেশ কালে আপনার স্যান্ডেল বা জুতো রেখে গেলে এসে পাবেন সে আশা বৃথা। কারন প্রতি দু’ঘন্টা পর পর পরিষ্কারকারক দল এসে তা আবর্জনার গাড়িতে পুরে নিয়ে যায়। তখন আপনার সমতুল যে কোন প্রাপ্ত জুতো নিয়ে আসতে পারেন। ফেলে দেয়ার কারন হল অল্প সময়ে প্রচুর জুতো জমা হয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করে বলেই ফেলে দেয়া হয়।
যেকোন স্থানে গিয়ে প্রথমেই আপনার মন মত বা সহজে চেনা যায় এমন একটি স্থান চিহ্নিত করে রাখুন। সঙ্গিদের তা বলে দিন হারিয়ে গেলে এ স্থানে এসে জড়ো হতে। এতে হারিয়ে গেলে ও সহজে মিলিত হতে পারবেন।
“ হজ্জ সহায়তা ক্যাম্প ” প্রচুর থাকে। তাদের নিকট থেকে আপনি পেতে পারেন সহায়তা। চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ও রয়েছে প্রচুর চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রয়োজনে আগেভাগে সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন। অবসর সময় আশে পাশে ঘুরে দেখতে পারেন এবং এভাবে ঘুরে দেখে রাখলে যে কোন সময় সহজে আপনি পেতে পারেন আপনার কাংখিত স্থান।
যে কোন কাজে আপনি প্রস্তুত থাকবেন পূর্ব থেকেই। যেমন বাস বা গাড়ি আসবে বলে সময় দেয়া হয়েছে। আপনি তার পূর্বে প্রস্তুতি পর্ব সমাপন করে প্রস্তুত থাকুন। কারন গাড়ি আসতে বিলম্ব বা সময়ের কিঞ্চিৎ পূর্বে ও এসে পড়তে পারে। তখন আপনি সময় পাবেন না বা পিছনে পড়ে গেলে সঠিক কাজ সঠিক সময়ে কুলিয়ে উড়তে না পারেন। তাই সকল ড়্গেত্রে পূর্ব প্রস্তুতি একান্ত আবশ্যক।
আপনি মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের লড়্গ্যে সেখানে পৌছবেন। পাঁচ ওয়াক্তের বেশী হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু কম যেন না হয় সে খেয়াল জরুরী। আবার কাবা শরীফ তাওয়াফ করে আপনাকে মিনা অভিমুখে রওয়ানা হতে হবে। আরাফার মাঠে পৌছার ড়্গেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। সময়ের পূর্বে সেখানে অবশ্যই পৌছার চেষ্টা করবেন। মসজিদে নিমরার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করুন। সে ড়্গেত্রে আপনার আন্তরিকতাই যথেষ্ট। মনে হবে মসজিদ পরিপূর্ণ। কিন্তু ধীর পদড়্গেপে এগিয়ে যান স্থান পাওয়া সহজ সাধ্য। স্থান না পেলে একটু অপেড়্গা করুন। দেখবেন অনেকে বের হয়ে যাচেছ বিভিন্ন উপলড়্গ্যে। ফিরে আসা অনেকটা অনিশ্চিত। খুবই সতর্ক থাকুন। এ সময় ঘুম আসার সম্ভাবনা বেশি। তাই অজু ভঙ্গ হতে পারে। তাই পানি বোতল থাকলে অনেকটা সহায়ক হয়। সূর্য অস্ত যাবার পূর্বে আরফার মাঠ থেকে বের হবেন না। যদিও দেখবেন অনেক লোক বেরিয়ে যাচেছ। আপনি বিরত থাকুন , ধৈর্য ধরুন। কারন সূর্যাস্তের পর সেখান থেকে বের হবার নির্দেশনা রয়েছে।
আরাফার মাঠে অবস্থিত রহমতের পাহাড়ে উঠতে সড়্গম হলে উপরে উঠে দেখে আসতে পারেন। নতুবা নীচ থেকেই দোয়া দরুদ পাঠ করুন। কারন এখানে উঠতে আরামপ্রদ নহে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আপনাকে উঠতে হবে। পা ফসকিলে বিপদের সম্ভাবনা অনেক অনেক। সুতরাং আবেগের বশে কোন কিছু করা ঠিক নয়।
পায়ে হেঁটে মুজদালিফা যেতে পারেন অনায়াসে। মুজদালিফায় গিয়ে সময় পেলে আগে কংকর সংগ্রহ করে নিন। নতুবা নামাজের পর পরই সংগ্রহ করে নিবেন। কংকরের ড়্গেত্রে ও সাবধানতা অবলম্বন জরুরী। কারন হারালে আবার আপনাকে মুজদালিফায় এসে কংকর নেবার নির্দেশনা। রাত্রি যাপন শেষে রওয়ানা হতে হবে মিনা অভিমুখে। মিনা এসে তিন শয়তানের গায়ে কংকর নিড়্গেপ করে তাবু বা বাসায় এসে মাথা মুন্ডন সহ নক কেটে গোসল সমাপ্ত করে কুরবানী দিতে পারেন।
কংকর নিড়্গেপের সময় আপনার মনে রাখতে হবে স্তম্ভের কাছাকাছি পৌছতে এবং কংকর নিড়্গেপ করতে। এতে লড়্গ্য ভ্রষ্ট না হবার সম্ভাবনা বেশি। আবার দুর থেকে নিড়্গেপ করলে লড়্গ্য ভ্রষ্ট বা দুরত্বের কারনে অন্য হাজী সাহেবানদের গাঁয়ে পড়তে পারে। তাই এ সতর্কতা একান্ত প্রয়োজন। অপর দিকে আবেগের বসে কখন ও অন্য দ্রব্য ছুড়বেন না। আবার কংকর নিড়্গেপের সময় উপর বা নীচ অর্থ্যাৎ দ্বিতল দিয়ে যান বাঁধা নেই। কিন্তু কখন ও ভুলে নীচু হয়ে কোন দ্রব্য উত্তোলন করতে যাবেন না। পদদলিত হবার সম্ভাবনা শতভাগ। আপনার একটু অসতর্কতায় জীবন বিপন্ন হতে পারে। আপনার সঙ্গিকে সতর্ক রাখুন।
সেখানকার পুলিশের সাথে তর্কে জড়িত না হওয়া উত্তম। পোষাক ধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকে প্রচুর নিরাপত্তা কর্মী , আইন শৃংখলা বাহিনী সৌদি সরকার নিয়োজিত করে থাকেন। এড়্গেত্রে আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এবং পুলিশের সাহায্য , সহযোগিতার , আন্তরিকতার , তাদের একাগ্রতার তারিফ করতেই হয় ।
সকল সময় পকেটের সাবধানতা অবলম্বন জরুরী। পকেটমারের ঘটনা পূর্বে না থাকলে ও এখন রয়েছে।
মক্কা , মিনা , মুজদালিফা , আরাফার ময়দানে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় সরকার কর্তৃক পানিসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য দ্রব্য বিনা মুল্যে হাজী সাহেবানদের প্রদেয় হয়ে থাকে। আপনি ইচেছ করলে তা গ্রহণ করতে পারেন।
হজ্জের সময় আপনি হালকা খাবার গ্রহণ করলে ভাল হয়। বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফলের জুস সহজে এবং দ্রুত পুষ্টি জোগায়।
মদিনা মনোয়ারায় আপনি দেখবেন এশার নামাজের কিছুক্ষণ পরেই সাধারণের জন্য দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খোলে দেয়া হবে তাহাজ্জুদের নামাজের পূর্বক্ষণে। আপনি অতিরিক্ত এবাদত করতে হলে দুই আড়াই ঘটিকায় বেরিয়ে পডুন। রাস্তায় লক্ষ্য করলে তেমন লোকজন নেই মনে হলে ও দরজা খোলা মাত্র আপনি এগুতে থাকুন সম্মুখ দিকে । পিছনে চেয়ে দেখবেন লোকে লোকারণ্য। বেহেস্তের অংশ পৃথক করা আছে সবুজ রং ও পিলার দ্বারা। নবী করিম (স:) এর রওজা মোবারক জেয়ারতের প্রাক্কালে বা মসজিদে নববীতে উচচ শব্দ করতে বিরত থাকুন। মন প্রাণ ঢেলে আন্তরিকতার সহিত জেয়ারত সমাপন করুন। মসজিদে নববীর পাশেই রাস্তার অপর পার্শ্বে জান্নাতুল বাকী। জেয়ারত করুন। মদিনায় আরো কয়েকটি মসজিদ রয়েছে তাতে গমণ করে নফল নামাজ আদায় করতে সচেষ্ট থাকুন।
আমি সম্মানিত হাজী সাহেবানদের জ্ঞাতার্থে আবার ও সংড়্গেপে সার সংড়্গেপ বলছি- হজ্জ শুরুর প্রথমেই কাবা শরিফ তাওয়াফ করে মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের লড়্গ্য নিয়ে এগিয়ে যাবেন মিনার মাঠে। সেখানে রাত্রি যাপন শেষে সূর্য উঠার পরই শুরু হবে আরফার মাঠের দিকে যাত্রা। আরফার মাঠে সারা দিন অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর যাত্রা করবেন মুজদালিফা অভিমুখে। মুজদালিফায় এক আযানে দুই ইকামতে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় , কংকর সংগ্রহ করত: রাত্রি যাপন শেষে ফজর নামাজ আদায়ান্তে মিনায় গমণ। সেখানে গিয়ে শয়তানকে কংকর নিড়্গেপ শেষে মাথা মুন্ডনসহ নক কেটে গোসল সমাপ্ত করতে হয়। সম্ভব হলে পূর্বে ও কুরবানী করতে পারেন। আবার এখানেই আপনার ইহরাম গোসল সমাপনে ত্যাগ করতে হয় বা খুলে ফেলতে হয়। তারপর এখানে আরো দু’দিন অবস্তান করে কংকর নিক্ষেপ সমাপ্যে কাবা গৃহ তাওয়াফ ( বিদায়ী ) করে আপনার হজ্জের আনুসাঙ্গিক পর্ব সমাপ্ত হয়ে গেল।
ফিরতি ফ্লাইটের বিলম্ব হলে জেদ্দায় ক’দিন ঘুরে আসতে পারেন। জেদ্দায় গেলে মা হাওয়া ( আ: ) ’র মাজার জেয়ারত করে নিতে পারেন। ফ্লাইটের বিলম্বতায় বিমান বন্দরে অপেড়্গা করতে হতে পারে। সে ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি রাখুন। অধৈর্য বা ঝগড়া করে লাভ নেই।
পরিশেষে সকল হাজী সাহেবানদের হজ্জ পালন সহজ করে দিতে এবং সকল আনুসাঙ্গিক পর্ব সমাপ্ত করত: মহান আল্লাহর দরবারে কবুল করে নেয়ার আকুল মিনতি জানাই বিনম্র চিত্তে। আমিন।
(লেখক মিজানুর রহমান মিজান, সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট)
No comments:
Post a Comment