প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানান। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়া বিএনপি জানাবে শনিবার।
বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে যে বিভ্রান্তিকর ভাষণ দিয়েছেন দেশবাসী তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ অন্তঃসার শূন্য কথামালার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। তার এ ভাষণ জাতির নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের আন্দোলন বানচাল করার হীন উদ্দেশ্যেই তিনি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। জাতির নিকট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন বিকল্প নেই। দেশের শতকরা ৯০ জন মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। কাজেই আগামী ২৪ অক্টোবরের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে সংসদ ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, তথাকথিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের উন্নয়ন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, তার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল সম্পর্কে, চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, রাস্তাঘাট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। তার এ ভাষণ দুরভিসন্ধিমূলক এবং মিথ্যাচারের দলিল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ ১৮ দলের নেতাকর্মী ও আলেমদের মুক্তি দিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে উপরোল্লিখিত দাবী সমূহ আদায় করার জন্য তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
এদিকে, আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পরে জানানোর কথা বললেও প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস-াবে নতুন কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি মুখপাত্র ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার রাতে তিনি বলেন, বিএনপিসহ সকল বিরোধী দল ও বাংলাদেশের জনগণ নির্দলীয় সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। বিষয়টি জাতি, জনগণ ও গণতন্ত্রের জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত খুব গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দলীয় সরকার বহাল রেখে বিরোধী দলের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি অন্তবর্র্তীকালীন সরকার গঠনের যে প্রস্তাব করেছেন তাতে সরকার প্রধানের বিষয়ে কোনো কথা নেই। এরকম প্রস্তাব আগেও তিনি লন্ডনে অবস্থানের সময়ে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব দল ও জোটগতভাবে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে পরে অবহিত করা হবে বলেও জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর তাৎক্ষণিকভাবে ফখরুল বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিষয়ে গণমাধ্যমকে শনিবার বিএনপি প্রতিক্রিয়া দেবে।
পরে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় সাক্ষাতের পর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এসে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কিংবা বর্জন করছেন কি না প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “আমি যা বলেছি, এটাই আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এর বেশি কিছু আমরা এখন বলছি না।
১৮ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, জোটগতভাবে আমরা আলোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানাবো। এটা তাদের দলের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
No comments:
Post a Comment