সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ কোরবানির পশুর চামড়া কিনে এবার বিপাকে পড়েছেন সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া দাম কম বলায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাঁরা যে দামে চামড়া কিনেছেন, ট্যানারি মালিকরা তার চেয়েও দাম কম দিতে চাচ্ছেন। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা আরো অভিযোগ করেন, গতবারের মতো এবারও সিলেটে কোরবানি হওয়া পশুর অর্ধেক চামড়াই সীমান্ত দিয়ে পাশের দেশে পাচার হয়ে গেছে। একটি দালালচক্র আড়তদারদের কাছে চামড়া আসার আগেই মধ্যপথে কিনে নিয়ে এবং তাদের লোক দিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ও মাদ্রাসা থেকে সংগ্রহ করে ট্রাকবোঝাই করে পাচার করে দিয়েছে। চামড়া পাচার রোধে ঈদের আগে পুলিশ প্রশাসন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, সিলেটে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। কাঙ্খিত দর পায়নি তারা। দাম কম ছিল বলে গত বছরের তুলনায় সিলেটে এবার পশু কোরবানি বেশি হয়েছে। তবে চামড়ার দামও ছিল কম। ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এক একটি গরুর চামড়া। ছাগলের চামড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়।
চামড়া সংগ্রহকারীরা আড়তদারের নিকট থেকে প্রকৃত দাম পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। দাম কম হওয়ায় অনেকে চামড়া ফেরত নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে আড়তদারের দামে তা দিয়ে গেছেন। ঈদের দিন গভীর রাত পর্যন্ত অনেক চামড়া অবিক্রিত অবস্থায় দেখা গেছে। অনেকে লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রয় করেননি। তারা বাধ্য হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণের চেষ্ঠা করছেন। যদিও এভাবে বেশিদিন চামড়া সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব নয়। এতে চামড়ার গুনগত মান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এবছর লবন দেয়া চামড়ার প্রতি বর্গফুট ৮৫ টাকা ও ছাগলের ৪৫ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কোরবানির চামড়া লবন দেয়া নয় বলে আড়তদারেরা দাম দিতে চাচ্ছেন না। ফলে রকমারী দামে বিক্রি হচ্ছে পশুর চামড়া।
নগরীর উপ শহরের আহমেদ কবীর বলেন এবারে ৪৩ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে কোরবানি দেয়ার পর সে চামড়া বিক্রি করেছেন ৯০০ টাকায়। অথচ গত বছর এ আয়তনের চামড়া অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা না থাকায় আমরা বেশি দামে কিনতে চাইলেও তা পারছি না। অল্প দামে কেনা এ চামড়াগুলো আমরা যথাসময়ে বিক্রি করতে পারবো কিনা তা নিয়ে সন্দিহান।
সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ী শেখ শামীম আহমদ জানান, প্রতিবছর সিলেট অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ পশু কোরবানি হয়। এবার কোরবানি তুলনামূলক বেশি হয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ীও সিলেটের আড়তদারদের কাছে চামড়া আসেনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অর্ধেকের মতো চামড়া এসেছে। বাকি চামড়া মধ্যপথ থেকে দালালরা কিনে নিয়েছে। তারা হয়তো সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করেছে অথবা পাশের দেশ ভারতে পাচার করে দিয়েছে।’
মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘আমরা যে দামে চামড়া কিনেছি, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা সেই কেনা দামের চেয়েও কম দাম দিতে চাচ্ছেন। এ ছাড়া চামড়া লবণজাত করে ঢাকায় বিক্রি করার আগ পর্যন্ত আমাদের অনেক খরচ আছে। ট্যানারি মালিকরা দাম না বাড়ালে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা এবার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানান তিনি।’
ট্যানারী এসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ২২ কোটি ঘনফুট চামড়ার চাহিদা রয়েছে। মোট চাহিদার ৪৮ শতাংশ পূরণ হয় কোরবানীর ঈদে। ১০ শতাংশ রোজার ঈদ ও শবেবরাতে। ২ শতাংশ পূরণ হয় কালীপূজার সময় পাঠার চামড়া থেকে । বাকী অংশ আসে সারা বছর পশু জবাই থেকে। তাই এ বছর ট্যানারী গুলো ৫০ লাখ পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
চামড়া কিনে বিপাকে আড়তদার, দাম পাচ্ছেন না ফড়িয়ারা
Friday, October 18, 2013
Labels:
# সুরমা টাইমস
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment