বিশ্বনাথে বাল্য বিয়ে নিয়ে তোলপাড় অতঃপর বিয়ে ভঙ্গ কনের চাচাকে ১ মাসের কারাদন্ড

Saturday, October 19, 2013

বিশ্বনাথে একটি বাল্য বিবাহ নিযে চলছে তোলপাড়। বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পর কনের বয়স কম হওয়ায় বিপত্তি বাধে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বাল্য বিবাহ থেকে বিরত থাকার জন্য বার বার নিষেধ করা হলেও প্রশাসনের বাঁধা উপেক্ষা করে অবশেষে রোববার বাল্য বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। বিয়ে উপলক্ষে ভাড়া নেয়া হয়েছে উপজেলা সদরের একটি কমিউনিটি সেন্টার।

আর এই বিয়ের খবর পেয়ে শনিবার রাতেই উপজেলা প্রশাসনের হস-ক্ষেপে ভঙ্গ হয় এই বাল্য বিয়ে। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে কনের (স্কুল ছাত্রী) চাচা উপজলোর জয়নগর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে আব্দুল আহাদকে অপ্রাপ্ত মেয়ের বাল্য বিয়ের আয়োজন করা অপরাধে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে এবং বিয়ে ভঙ্গের আদেশ প্রদান করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী দুদু মিয়ার মেয়ে ছাত্রী সিপা বেগম (১৪) তার নানা বাড়ী বড়খুরমা গ্রামে থাকে। সেখানে সিপা স্থানীয় তাহির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণীতে লেখাপড় করে। কিছুদিন পূর্বে পারিবারিকভাবে সিপা বেগম (১৪)-এর সাথে একই উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের শেখেরগাঁও (পদনাপুর) গ্রামের মছদ্দর আলীর পুত্র জানু মিয়া (২৫) বিয়ে ঠিক হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সিপা তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানায়।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ও স্থানীয় সচেতন লোকজন প্রশাসনের হস’ক্ষেপ কামনা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনামনি চাকমা ও খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন সিদ্দিকী তদন্তপূর্বক সিপা বেগমের বয়স কম হওয়ায় বাল্য বিয়ে থেকে বিরত থাকতে উভয় পরিবারের সদস্যদের বলেন। এতে পরিবারের সদস্যরা অমান্য করে অবশেষে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। আজ রবিবার বিশ্বনাথ উপজেলা সদরস’ আল হাবিব কমিউনিটি সেন্টারে অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী সিপার বিয়ে হচ্ছে। খবর পেয়ে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে আইনানুগ ব্যবস’া গ্রহণ করতে এ্যাসিলেন্ড ও থানার ওসি’কে নির্দেশ প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনামনি চাকমা।

গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আমিরুল কায়সার ও বিশ্বনাথ থানা পুলিশ ঘটনাস’লে (কনের বাড়িতে) পৌছেন। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে অপ্রাপ্ত মেয়ের বাল্য বিয়ের আয়োজন করার অপরাধে ‘বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন ১৯২৯ এর ৬ ধারা’য় কনের অভিবাবক চাচা আব্দুল আহাদকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রধান করেন এবং বিয়ে ভঙ্গের আদেশ প্রদান করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিরুল কায়সার।

এ ব্যাপারে খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউসুছ মিয়া বলেন, আমরা বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে মেয়ের পরিবাবকে বিরত থাকতে বলি। মেয়ের পরিবারের সদস্যরা জোরপূর্বক তাকে বিয়ে দিচ্ছেন। আমি লোকমূখে শুনেছি আজ (রবিবার) এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

তাহির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে এক শিক্ষক বলেন, সিপা বেগমের বয়স প্রায় ১৪ বছর। মেয়েকে জোরপূর্বক তার পরিবারের সদস্যরা বিয়ে দিচ্ছেন। সে তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে বিদ্যালয়ে এসে কান্নাকাটি করেছে।

খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, বাল্য বিয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে নিষিদ্ধ। মেয়েটির বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাকে বিয়ে না দিতে পরিবারের সদস্যদেরকে বলা হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনামনি চাকমা বলেন, বাল্য বিয়ের আয়োজন করার অপরাধে মেয়ের চাচাকে ভ্রাম্যমান আদালত ১মাসের সাঁজা প্রদান করেছেন। এছাড়া এই বাল্য বিয়ে ভঙ্গের জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License