স্কটল্যান্ডের ‘না’ ভোটে বহির্বিশ্বে স্বস্তি ও উদ্বেগ; স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী নেতা পদত্যাগ করছেন

Friday, September 19, 2014

বিবিসিঃ সারা বিশ্বে স্কটল্যান্ডের নিজস্ব সাংস্কৃতিক এবং জাতীয় পরিচিতির জন্য গভীর ভালবাসা রয়েছে। কিন্তু তারপরও, স্কটিশরা যুক্তরাজ্যের সাথে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছে জেনে অনেক দেশের সরকার হাফ ছেড়ে বেঁচেছে।


কোন কোন দেশ আশংকা করেছিল, যে স্কটল্যান্ডের গণভোট স্বাধীনতার পক্ষে গেলে, সেটা অন্যান্য দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে উৎসাহ দেবে।


আবার, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা যুক্তরাজ্যর বাকি অংশকে দুর্বল এবং অন্যমনস্ক করে দেবে ভেবে ব্রিটেনের সহযোগী দেশগুলো বেশ উদ্বিগ্ন ছিল।

কিন্তু এর ফলে কি বিশ্বে ব্রিটেনের ভাবমূর্তি এবং মর্যাদার উপর কোন প্রভাব পরবে?


পৃথিবীতে ব্রিটেনসহ গোটা পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব কমছে বলে একটি ধারনা প্রচলিত আছে।


বলা হচ্ছে যে, চীন, রাশিয়া, ভারত এবং ব্রাজিলের মত নতুন শক্তির উত্থান পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবকে ক্রমাগত খর্ব করছে।


স্কটল্যান্ডে যে স্বাধীনতার প্রশ্নে আদৌ গণভোট হয়েছে, সেটাই প্রমাণ করে যে ব্রিটেনের দাপট ক্রমশ: কমছে, এবং সহযোগী হিসেবে তার নির্ভরশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উদ্বেগের আরেকটি কারণ হচ্ছে, স্কটল্যান্ডকে আরো বেশি স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার প্রশ্নে এবং গোটা ব্রিটেনে সাংবিধানিক সংস্কার করতে লন্ডনে সরকার এত ব্যস্ত হয়ে যাবে যে, তার পক্ষে বহির্বিশ্বে কার্যকর ভূমিকা পালন করা সম্ভব নাও হতে পারে।


“আমার মনে হয়, এমনকি না ভোটও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে”, বলেন প্রাক্তন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লর্ড ডেভিড হ্যানে।


তিনি বলেন, এই গণভোটের ফলে এমন কিছু বিষয় উঠে এসেছে, যেগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচনের আগে এবং পরে ব্রিটিশ সরকার ব্যস্ত থাকবে।


“সাংবিধানিক পরিবর্তন, ব্রিটেনের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য আরো ক্ষমতা প্রদান ইত্যাদি বিষয় পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরকারের মনোযোগ কেড়ে নেবে”, তিনি বলেন।


ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনকে আরো একটি উদ্বেগ আছে।


ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন টোরি পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে তারা জয়লাভ করলে তার দু’বছরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেন সদস্য থাকবে কি থাকবে না, সে প্রশ্নে গণভোট দেবে।


তাহলে, নির্বাচনে টোরি পার্টি যদি জয়লাভ করে ২০১৭ সালে ই ইউ-তে ব্রিটেনের সদস্যপদ প্রশ্নে গণভোট দেয়?


স্কটল্যান্ডের গণভোট যে ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, তার ফলে কি তিন বছর পর ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে, নাকি কমিয়েছে?


কিন্তু হয়তো এখানে ব্রিটেনের জন্য সুসংবাদও আছে।


অনেক দেশ ভাবতেও পারেনি যে ব্রিটেন স্কটল্যান্ডকে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট দেবে। প্রাক্তন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার স্টিফেন ওয়াল বলছেন, এটা প্রমাণ করে ব্রিটিশ গণতন্ত্র কার্যকর আছে।


তিনি বলেন, এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে কোন দেশ, তার একটি অংশকে তার সাথে থাকতে বাধ্য করবেনা, সেই অংশ যদি চায়, তাদের স্বাধীন হয়ে যাবার সুযোগ দেবে।


“এটা করার জন্য আপনাকে এমন একটি দেশ হতে হবে, যার নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর অগাধ আস্থা রয়েছে”, স্যার স্টিফেন বলেন।


কিন্তু সামনের দিনগুলো বেশ উত্তেজনায় ভরপুর থাকবে বলে মনে হচ্ছে।


রাজনৈতিক তিক্ততার পরে প্রয়োজন আপোষ। প্রয়োজন সংস্কার আর অস্থিতিশীলতার মধ্যে ভারসাম্য।


ব্রিটেন গণতন্ত্রের এই পরীক্ষায় পাস করতে থাকবে কি না, সেটা দেখার জন্য গোটা পৃথিবী এখন তাকিয়ে থাকবে।


যে গণতন্ত্র শান্তিপূর্ণ এবং সভ্য ভাবে একটি বিচ্ছেদের আয়োজন করতে পারে, কোন ধরনের সামরিক অভ্যুত্থান দিয়ে নয়, বা বন্দুকের নলের ডগায়ও নয়।


স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী নেতা পদত্যাগ করছেন


স্কটল্যান্ড রাজ্য সরকারের প্রধান বা ফার্স্ট মিনিস্টার অ্যালেক্স স্যামন্ডের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা। স্বাধীনতাপন্থী প্রচারণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।


গণভোটে ভোটাররা তার স্বপ্নকে জয়যুক্ত করতে না পারায় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।


শুক্রবার সকালে গণভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়, যাতে দেখা যায় ৫৫ শতাংশ ভোটার যুক্তরাজ্যের সাথে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছে।

স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট ছিল ৪৫ শতাংশ।

স্কটল্যান্ডের সমস্ত নাগরিকদের এই ফল মেনে নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন স্বাধীনতার পক্ষের নেতা মি: স্যামন্ড।


ফলাফল ঘোষণার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সব সমস্যা সমাধানে একসাথে থাকার পক্ষেই এই ফলাফল এসেছে।


স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটে বেশিরভাগ স্কটিশই ‘না’ ভোট দিয়েছেন, অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের সাথে থাকার পক্ষেই ভোট পড়েছে বেশি।


বৃহস্পতিবারের গণভোটে ৫৫ শতাংশ জনগণ ‘না’ ভোট অর্থাৎ স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন এবং ৪৫ শতাংশ জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।


বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই ঐতিহাসিক গণভোটে প্রায় আশি শতাংশ স্কটিশ ভোট দিয়েছেন।


দেশটির ৩২টি কাউন্সিলের মধ্যে ৩১টির ফলাফলে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকার পক্ষে ভোট পড়েছে ১৯ লাখ ১৪ হাজার ১৮৭ টি এবং অপর দিকে স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯২০ জন।


তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যের অংশ স্কটল্যান্ড।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License