মিজানুর রহমান মিজান
শিশুকালে স্কুলমুখি হয়ে হস্তাক্ষর সুন্দর হবার অভ্যাস গঠনে শিক্ষক কর্তৃক প্রতিদিনের হোম ওয়ার্ক এবং খাতায় লিপিবদ্ধ করে লিখতাম, “সর্বদা সত্য কথা বলিবে”। ইসলামী আদর্শ, উদ্দেশ্য, নৈতিকতায় বার বার তাগিদ এসেছে এ উক্তির যথার্থ তথা জীবনযাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপে বাস্তবতায় রূপ দানের মাধ্যমে প্রচ্ছন্ন পরিবেশ, সমাজ সামাজিকতায় প্রতিষ্ঠা করা।
জীবনের মধ্যাহ্নে এসে দেখি বাস্তবতার উপলব্ধিতে সত্য বলা অত্যন্ত কষ্ট সাধ্য সাধ্যাতীত। সৎ পথে চলা মহাবিপদ, টিকে থাকা দায়। পূর্বে দশ গ্রাম ঘুরে একজন যেখানে অনৈতিক লোকের সন্ধান পাওয়া যেত, আজ সেখানে একজন সৎ ও সত্যের নির্ভীক সৈনিক খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য। যারা সততাকে আঁকডে ধরে চলতে প্রচেষ্টা চালায় সেখানে দুর্দান্ত অভিযান চলে প্রতিযোগিতায় কেমন করে “সুবচন নির্বাসনের মাঠে উপযুক্ত খেলোয়াড় রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া সম্ভব। ইসলামী মূল্যবোধের অভাব, তীব্র ভাবে উধাও লক্ষণ পরিদৃষ্ট হয় সর্বক্ষেত্রে। সততা এবং সুন্দরতম পথ চলা সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। পদে পদে বিপদ সংকুল পরিবেশ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে মহাসমারোহে। অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, ঘুষ, দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে দন্ডায়মান। যার যা খুশি তা করছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার নির্ভীক সৈনিকরা কোণঠাসা হয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে অত্যাচারীর খড়গ মাথার উপর ছাতার ন্যায় অবস্থানরত। বর্ষীয়ানদের দেখে শিশু, যুবকরা শিক্ষা গ্রহণ করত আদর্শরূপে। আজ অনুসরণে বা অনুকরণে পাবেন আদর্শ বর্জিত চরিত্র। সমাজ অভিভাবক শূন্য। অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহেলিয়াত যুগের নিদর্শন যেন উজ্জ্বল স্বাক্ষরতায় আবির্ভূত। অশুভ শক্তির মহাদাপটে শুভ শান্তি নির্জীব, ভিন্ন এ পরিবেশ, অবস্থা, ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উত্তম, সুচিন্তিত মত ও পথ হলো ইসলামী মূল্যবোধ সম্বলিত নৈতিক আচার-আচরণের বৈশিষ্ট্য মন্ডিত একটি সমাজ ব্যবস্থা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দু’একটি ঘটনার উদাহরণ দিলেই সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট হয়ে উঠবে দৃশ্যপট। পূর্বে বর্ষিয়ানদের সম্মুখে যেতে অনেকে ভয় পেত বা ইতস্তত ভাব প্রকাশ পেত। না জানি কখন, কিভাবে বেয়াদবী হয়ে যায়। পারতপক্ষে দূরে থেকে কার্য সমাধার প্রচেষ্টা চালানো হত। বর্তমানে শ্রদ্ধাবোধ কতটুকু সম্পৃক্ত আছে তা বলা বাহুল্য। (সব নয়) অধিকাংশ তরুণ, যুব সম্প্রদায় হামবড়া ভাবে আসক্তি প্রকাশ পায়। কারণও অনেক নিহিত রয়েছে অন্তরালে। যাদের আদর্শে অনুপ্রেরণা পাবার কথা, সেখানে নৈতিকতা নেই। অনুসরণীয় আদর্শবোধ তীব্র ভাবে উধাও পরিলক্ষিত।
বাজারে দ্রব্য বা পণ্য ক্রয়ের পাশাপাশি দোকানে বিস্তর মূল্যের ফারাক। ব্যতিক্রমহীন অবস্থায় দ্রব্যের গুণাগুণ একই, কিন্তু মূল্যে ভিন্নতা। নতুবা ভেজাল মিশ্রণের শংকা আপনাকে তাড়া করবে প্রতিনিয়ত। ওজনে কারচুপি অনেকটা ধর্তব্যে আসে না। সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে নগদ এক মূল্য, বাকীর খাতায় ভিন্নতা। নিজ পণ্য সর্বোৎকৃষ্ট এটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সর্বনি¤œ হলেও। একটা অজানা আশংকায় শংকিত বা এই বুঝি প্রতারিত হচ্ছি বা হলাম। ক্রেতারাও কম যান না। একমাত্র অপর দোকানে কম মূল্যে প্রাপ্তির কথা বলা রেওয়াজে পরিণত। একই ছাদের নীচে বসবাস করি বলেই হয়ত।
ঘুষ, দুর্নীতিতে আপনি ভাববেন না ? উপায় নেই গোলাম হোসেন। আপনি ঘুষ নেবেন না ? ভাল কথা। আপনি সচ্চরিত্রের অধিকারী ? কিন্তু আপনার চাকুরি নেই। হলেও আপনাকে অযথা বদনামে ঘায়েল শুরু হবে। দেবেন না হৃদয়ান্তে প্রত্যাশা। কার্যোপলক্ষে যেখানেই যাবেন লেনদেন ব্যতিরেকে হবে না। ইদানিং প্রায়ই শুনি প্রবাদসম শূন্য হাতে নাকি ভিক্ষা হয় না” ? না দেবার প্রত্যাশায় ঘুরে দেখবেন দ্বিগুণ ব্যয়িত। সুতরাং দিয়ে করানোই ভাল ছিল এ ভাবোদয় হবেই। কারণ যে শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় করবেন তা পরিশেষে দেয়াই শ্রেয় প্রমাণিত সত্য বলে বিবেচিত। আপনি কি সৎ থাকতে পারলেন ?
অসুখ-বিসুখে মানুষ ডাক্তার বা হাসপাতালে যায় যন্ত্রণা, কষ্ট লাঘবের নিমিত্তে সেবার প্রত্যাশায়। হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শ “আধুনিক ক্লিনিক“ বা “যন্ত্রণা উপশম“কেন্দ্রে আসবেন, দেখা করবেন। প্রাইভেট চেম্বারে ফি সহ সাক্ষাতে উপদেশ ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গজানো “নিউটন সেন্টার “(রূপক অর্থে) এর রক্ত, প্রস্রাব, পায়খানা পরীক্ষা করে রিপোর্টসহ আসুন। “নুন আনতে পান্তা ফুরায়” এবং গ্রাম প্রধান বাংলাদেশের শতকরা আশিজন দরিদ্রের ঔষধ কেনার পূর্বেই সংগৃহীত অর্থের পরিসমাপ্তি। বাড়তি ঝামেলা জুতা ক্ষয়, খরচ বৃদ্ধি, বিনা ঔষধে রোগ মুক্তির সুচিকিৎসার মহৌষধ পরিশ্রম, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি।
সুবিচার প্রাপ্তি মামলা। উকিল, মুহরির দৌরাত্ম্যে ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে নি¤œস্তের ধাপ পার পেতে সর্বস্বান্ত। নি¤œ আদালতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত “নি¤œ আদালত ও পুলিশ” খ্যাত কতটুকু সুফল প্রাপ্তি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চর্বিদার হচেছ উপর শ্রেণী, মোটা ভুড়িওয়ালা এবং অপর পক্ষে মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে রূপান্তরিত এ প্রমোশন না ডিমোশন তা বিচারের ভার পাঠকের উপর ন্যস্ত এবং সর্বাধিক জ্ঞাত।
আদর্শিক চরিত্র নিয়ে অগ্রসরমান, প্রতিবাদী হয়ে কথা বলুন “অমুক ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মত পবিত্র” শ্লোগানের লোকের অভাব নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠের কারণে আপনি উল্টো জেল, জুলুম, ঠান্ডা, ডান্ডা আপনার প্রাপ্য। অনিয়মই নিয়ম। অলিখিত চুক্তি সাপেক্ষ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি যখন তখন। দরিদ্রগোষ্ঠির বহন করার ক্ষমতা থাক বা নাই থাক, সে খেয়াল বা চিন্তার কোনো প্রয়োজন নেই। ভাঙ্গা লাঙ্গলের মেরামত অপ্রয়োজনীয়, হিসাব বহির্ভূত।
সৃষ্টির স্রষ্টা সবজান্তা, সর্বজ্ঞাত। ইসলাম হচ্ছে পরম শান্তির ধর্ম। ইসলামের বিধি-বিধান, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের জয়গান সর্বত্র আদর্শিক। পবিত্র কোরআন মানবতার মহাদলিল সর্বকালব্যাপী, সর্বক্ষেত্রে যা বিধর্মী কর্তৃক ও যুক্তি প্রমাণে স্বীকৃত। ইসলাম ইহকাল পরকালের মুক্তির সনদ। সুতরাং ইসলামের নীতি, বিধি-বিধান, রাসূলে করিম (সা:) এর আদর্শকে জীবন যাত্রায় অনুসরণ ও অনুকরণে এ ধরায় নেমে আসবে অমোঘ শান্তির অমিয় ধারা। নতুবা পদে পদে বিপদ সংকুল জীবন ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত। এ থেকে পরিত্রাণ পাবার প্রত্যাশা দরিদ্র শ্রেণী বা হতাশায় আশার আলো জ্বালাতে সক্ষম ইসলামী জীবন ব্যবস্থা। প্রতিটি পদক্ষেপে ইসলামের ঝাণ্ডা সমুন্নত রাখা চাই। নতুবা সাম্যবিহীন ভ্রাতৃত্বের অভাবে নিরুপায় ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতি। সুশীল সমাজ গঠনে ইসলামের বিকল্প নেই।
লেখক : মিজানুর রহমান মিজান সভাপতি বিশ্ব^নাথ প্রেসক্লাব সিলেট।
No comments:
Post a Comment