বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মুহিবুর রহমান বলেছেন, গত ৫ বছরে জনগণের উন্নয়ন, ভাগ্যের উন্নয়ন ও গরীব-দুঃখীর সহযোগীতায় কোন বালাই ছিল না। ছিল একমাত্র দূর্বিত্তায়ন আর লুটপাঠের উদ্যোগ। সেই উদ্যোগ এখনো অব্যাহত আছে।
বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের মানুষ আজ আতংকিত। গত ৫ বছরে কোটি কোটি টাকা লুটপাঠ হয়েছে। এমপি (শফিকুর রহমান চৌধুরী) সমাজের সেবা করেন নাই। শুধু লুটপাঠ করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী গত বছর বিশ্বনাথে আসলে তিনি উন্নয়নের ৩৮০ কোটি টাকার বরাদ্ধ করেন। প্রত্যেক সাংসদরা ১৫ কোটি টাকা করে পেয়ে ছিলেন। একজন উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে আমি জানিনা এসব টাকার উন্নয়ন কাজ কোথায় হয়েছে ? বিদ্যুৎ সংযোগের নামে সাংসদের পক্ষের লোকজন লুটপাঠ করে খাচ্ছেন। বিশ্বনাথে আইনের শাসন নেই বললেই চলে বলে তিনি দাবি করেন বলেন, ২০১০ সালের ২ মার্চে তাঁর উপর আ’লীগ নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় আজোও থানায় মামলা দায়ের করতে পারেননি এবং আদালতে মামলা দায়েরের পরও বার বার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর নিজ বাসভবনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথাগুলো বলেন। এসময় তিনি (মুহিবুর) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার ঘোষণা দেন।
মুহিবুর রহমান বলেন, দেশ ধামাচাপার উপর চলছে। গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও প্রতৃক পক্ষে দেশে গণতন্ত্র নেই। স্বৈরতন্ত্র থেকে দেশকে উদ্ধার করা হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্ত আমরা দেখি বড় বড় দলগুলোতে গণতন্ত্রেন ‘গ’ নেই। চললে সেই স্বৈরশাষন। স্বচ্ছতা যখন আসবে এবং জবাবদিহিমূলক রাজনীতি যখন প্রতিষ্ঠা পাবে তখনই গণতন্ত্রের আসল রূপ দেখা যাবে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরকে যখন জনগণ জবাব দিহিতা করতে পারবে তখনই সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি বলেন, দেশ একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে আছে। আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে কোন অবস্থায় আমরা উপনিত হব, তা কারো সঠিক কোন স্বচ্চ ধারণা নেই। তবুও আমরা আশা করবো নামমাত্র গণতন্ত্র হলেও গণতন্ত্রের এই চর্চা অব্যাহত থাকবে অন্তত পক্ষে পাঁচ বছর অন্তর অন্তর। যারা ক্ষমতায় আসবেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে। অন্য কোন পন্থা অবলম্ভর করে বা কন্দুকের নল দিয়ে নয়।
তিনি আরো বলেন, বিগত ৫ বছর ধরে আমি বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম এর আগেও ৮৫-৯০ ইংরেজী পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলাম। আমরা একটা জিনিস লক্ষ করেছি, ক্ষমতায় যারাই যান তারা তাদের স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তেমনি একটি উদ্যোগ উপজেলা পরিষদকে সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর করার। উপজেলা পরিষদকে অকার্যকর করে সাংসদগণ প্রশাসনের সহযোগীতায় কেবল মাত্র তাদের স্বীয় স্বার্থই চরিতার্থ করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে সবধরনের কাজে ‘সাংসদ ও ইউএনও’র হস্তক্ষেপের কারণে অকার্যকর হয়ে পড়েছে উপজেলা পরিষদ। দুই ভাইস চেয়ারম্যানেরও কোন দায়িত্ব নেই। উপজেলা পদ্ধতি বর্তমান সরকারের আমলে বাতিল করার চেষ্ঠা করা হয়ে ছিল। কিন্ত তা আর কখনও করা যাবেনা। ভবিষ্যতেও এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। মিথ্যার রাজনীতি করিনা ও কোন দলের বা ব্যক্তির ধারধারিনা বলেই আমার স্থান কোথাও হয়না। আমি যখন এবারে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই, আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সেই ক্ষমতা যদি আমরা প্রয়োগ করতে পারতাম তাহলে তাহলে ৮৫-৯০ এর ন্যায় কিছুটা হলেও বিশ্বনাথের উন্নয়ন সাধন করতে পারতাম। এদেশের গ্রামে-গঞ্জে যদি গণতন্ত্রের ভীত মজবুদ করা না হয় তাহলে একন যেভাবে গণতন্ত্রের নামধারী স্বৈরতন্ত্র চলছে, আগামীতে একই অবস্থা এদেশে বিরাজ করবে।
মুহিবুর রহমান আরো বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানদের সভাপতি হিসেবে আমি সারা বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার লক্ষে আন্দোলন করেছি। সেই আন্দোলনকে আমরা আরো বেগবান করতে চাই। উলেখযোগ্য কোন সাফল্য অর্জন করতে না পারলেও ১টা সাফল্য আমরা অর্জন করেছি। আর তা হলো- প্রথম যখন আমি আন্দোলন শুরু করি তখন মন্ত্রী-এমপি সাহেবরা হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, উপজেলা ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিবেন। আমিও তখন তাদের প্রতিউত্তরে বলেছিলাম, উপজেলা বাতিল করে গ্রামে গঞ্জে আসলে তাদের কি অবস্থা হবে। এটা বাতিল করা আর কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে এমপি সাহেব মাসের অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন। এবং এই সময়ে তার যে নির্বাচনী এলাকা পরিচালিত হয় তার কিছু সংখ্যক অনির্বাচিত ও অযোগ্য ব্যক্তি দ্বারা। জনগণ ভোটে নির্বাচিত করলো তার প্রতিনিধি। সে তার বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে প্রতিনিধির কাছে গিয়ে মনের কথা, সম্যস্যার কথা বলতে চায়। কিন্তু তাকে বাধ্য করা হলো এমপি সাহেবের অনির্বাচিত কতিপয় ব্যক্তি দ্বারা, যারা বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জে বসে আছে, তাদের ব্যবসা একটাই জনগণ যখন তাদের কাছে থানার বা প্রশাসনের কোন যাবে, তখন বড় অংকের ঘুষ আদায় করবে। আজ ঘুষ-দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। মাছ বাজারের মতো সবকিছুতেই এখন ধরকষাকষি করতে হয় জনগণকে। যে কারণে কোথাও আমার আশ্রয় নেই। বলা হয় আমি আওয়ামী লীগ করি। গত উপজেলা নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। আওয়ামী লীগ মরণপন চেষ্ঠা করেছে যাতে আমাকে পরাজিত করতে পারে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর টেলিভিশনে দেখলাম ‘বিশ্বনাথের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা’। আমি এ টুকুই আওয়ামী লীগ।
মুহিবুর রহমান বলেন, বিশ্বনাথে আট সাংসদ (এমপি)’র চেয়ে ১০ গুণ বেশী উন্নয়ন করেছেন ইলিয়াস আলী। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর কিছু ভাংচুর হয়েছে। বিশ্বনাথে উত্তেজনা ছিলো। হয়তো শ’ দুই এক লোক এখানে অংশগ্রহণ করেছে। সেখানে হয়তো কিছু উৎশৃংখল লোকও ছিল। সকল গুমের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, যে অপরাধী তাকে কাঠঘড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেওয়া হউক এটা আমরা চাই। কিন্ত কোন অবস্থাতেই তাকে গুম করা নয়। আর একজন লোক গুম হওয়ার কারণে কিছু উশৃংখল জনতা ভাংচুরের আশ্রয় নিয়েছিলো, তাদেরও বিচার হউক। তাই বলে আট হাজার মানুষকে আসামী করে মামলা দিয়ে বিশ্বনাথে যে আতংকগ্রস্থ একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো এটা কার স্বার্থে ? উত্তরে তিনি বলেন, সাংসদের নিকটস্থ কিছু নেতাকর্মী দালালী করে টাকা রোজগার করার জন্যই এমনটি হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বনাথে আইনের শাসন নেই। কতিপয় ব্যক্তির ইচ্ছার উপর সমাজের প্রতিটি বিষয় নির্ভর করছে। উপজেলা সদরে ঘরের ভিতরে ডুকে তাহির আলীকে হত্যার বিচার আজোও না হওয়ার পেছনেও রয়েছে দলীয় রাজনীতি।
মতবিনিময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের মানুষ আজ আতংকিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার ঘোষণা
Thursday, October 24, 2013
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment