আমাদের সিলেট ডটকম:
রোববার মধ্যরাতে সিলেটে কালবোশেখির তান্ডবে জেলায় আট সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলা রিলিফ অফিসার নিকেশ চন্দ্র রায় জানান, সিলেট জেলায় ৭২টি ইউনিয়ন, পৌরসভা মিলে ৬৭ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ৮ হাজার ২শ ৮০। ঝড়ের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ৫০ হাজার ৩শ ৭০ জন লোক। ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮শ ৭০। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ঘরবাড়ী ধ্বংস হয়েছে ৬১৮ টি। ফসলী জমির মধ্যে ৩৫৮ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৮টি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কানাইঘাটে ঝড়ের কবলে পড়ে মারা যাওয়া বৃদ্ধার পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। গতকাল ১৫ হাজার টাকার চেক স্থানীয় ইউএনও’র কাছে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র মতে,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির এই প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেন। ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র সংগ্রহের কাজ এখনো চলছে। পুরো চিত্র হাতে এলে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করা হবে। পরে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ ও পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সদর উপজেলার ইউএনও জানান, তার এলাকায় দশ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সাড়ে ৩শ ঘরবাড়ী সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়েছে। ১৮শ বাড়ী ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৮টি বনভূমির ক্ষতি হয়েছে শতকরা ২০ ভাগ।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় প্রায় ৮ হাজার লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। ঘরবাড়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শতাধিক। ৩ শতাধিক বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১৫ ভাগ বনভূমির গাছপালা উপড়ে পড়েছে। অন্যান্য উপজেলার চিত্র আলাদা ভাবে পাওয়া যায়নি।
বিদ্যুতের ক্ষয়ক্ষতি
কালবোশেখি ঝড়ে সিলেট বিভাগের বিদ্যুতের চরম ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ঝড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে একদিকে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অপরদিকে লাইন, খোটা, টাওয়ার উড়ে যাওয়ায় বাহ্যিক ক্ষয়ক্ষতিও চরমে উঠেছে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রেজাউল কবির জানান, প্রচন্ড ঝড়ে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম ধ্বংসের ফলে জন-দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সারা সিলেট বিভাগে কমবেশি ক্ষতি সাধিত হয়েছে। হবিগঞ্জে ১টি ৩৩ কেভি টাওয়ার, জৈন্তাপুরে ৪টি ১১ কেভি টাওয়ার উপড়ে গেছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের সরঞ্জাম ধ্বংস হয়েছে ৪০/৫০ লক্ষ টাকার।কিন্তু দীর্ঘ ১৮/২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় সরকার প্রায় শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটা বিদ্যুতের বিভাগের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। তিনি জানান, গত দু’দিন থেকে সিলেট অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বিদ্যুৎ কর্মচারী কর্মকর্তারা সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এখনো শহর ও শহরতলীর অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ চালু করা যায়নি। প্রচন্ড গরমে পানি জন্য দুর্ভোগ, শিশু, বৃদ্ধরা কষ্ট করছেন, এজন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
বিদ্যুতের অন্য একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন এলাকায় বাঁশ গাছ কাটতে মালিকরা বাধা দেন। ঝড়ে বাঁশ গাছ তারের উপর পড়ে বেশী সমস্যা সৃষ্টি করে। বিদ্যুৎ কর্মীরা এগুলো কাটতে গিয়ে কখনো কখনো হামলার শিকার হন। ঝড় বৃষ্টিতে বাঁশ গাছ উপড়ে ঐ এলাকা অন্ধকারে থাকে। পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব সংস্কার কাজ করতে গেলে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকায় বিদ্যুৎ বিভাগ এরকম পদক্ষেপ নেন না। বৃহত্তর স্বার্থে বিদ্যুতের তারের উভয় পাশে ৮ ফুট জায়গা খালি রেখে বাঁশ গাছ লাগানো উচিত বলে ঐ সূত্র মনে করে। সংস্কার কাজে বাঁশ গাছ কাটতে সবাইকে সহযোগিতা করা একান্ত আবশ্যক বলে বিদ্যুতের ঐ সূত্র মনে করে।
কালবোশেখির তান্ডব :সিলেটে ৮ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ, বিদ্যুতের ক্ষতি প্রায় শতকোটি
Tuesday, April 29, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment