আমাদের সিলেট ডটকম :
লাগামছাড়া ৰমতার অধিকারী সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বাবুলের ছত্রছায়ায় তার একান্ত কিছু সহযোগী পুলিশ দিন দিন ববেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এ মনই দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছে আবারও ১৭ জুলাই।
জানা গেছে, ১৭ জুলাই ব্রিটিশ নাগরিক অসুস্থ ভাগ্নে শামস্ ইসলামকে (১৬) নিয়ে প্রাইভেট কারযোগে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে সিলেটে আসছিলেন কামাল চৌধুরী। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নয়া সড়ক পয়েন্টে যানজটের কবলে পড়েছিল তাদের গাড়ি। ট্রাফিক সিগন্যাল সবুজ হওয়া মাত্র তাদের গাড়ি গোল চত্বর না ঘুরে চলে যাওয়ায় ওই পয়েন্টে দায়িত্বরত কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিম হাতের ইশারায় কামাল চৌধুরীর গাড়িটি থামাতে নির্দেশ দেন। পরে এসআই রহিম কামাল চৌধুরী ও তার গাড়িচালককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এর প্রতিবাদ করলে অনেক লোকের জটলা তৈরি হয়। একপর্যায়ে কামাল চৌধুরী এবং গাড়িতে থাকা তার অসুস’ ভাগ্নে শামস্, আত্মীয় সালমান ও গাড়িচালক হাফিজ উদ্দীনকে আরও দুজন কনস্টেবলকে দিয়ে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসা হয়। কামাল চৌধুরীকে ওসি আতাউরের পাশের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। বাকিদের ঠাঁই হয় থানার হাজতে। এ সময় অসুস’ ব্রিটিশ নাগরিক শামস্ ইসলাম তাদের আটকের কারণ জানতে চাইলে তিনিও রেহাই পাননি পুলিশি নির্যাতন থেকে। অন্যদিকে, ওসির পাশের কক্ষে চলে কামাল চৌধুরীর ওপর প্রায় ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতনের স্টিম-রোলার। কামালের আর্ত-চিৎকারে থানার অনেক পুলিশ সদস্যও চোখের পানি ফেলেছেন। তবে ওসি আতাউরের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। ইফতারের পর অচেতন অবস্থায় কামাল চৌধুরীকে পুলিশের গাড়িতে করেই পৌঁছে দেওয়া হয় ওসমানী মেডিকেলে। সেখানে তিনি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। পরে রাত ৯টার দিকে ভিকটিম কামাল চৌধুরীর বড় ভাই ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী তার নিজের জিম্মায় থানা হাজতে আটক বাকিদের ছাড়িয়ে নেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদকের কাছে ওই দিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, এভাবে পুলিশ মানুষকে পেটায় তা আমার জানা ছিল না। প্রাণ-ভিক্ষা চেয়েও ওই ব্যক্তি রেহাই পাননি। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মাটিতে ফেলে তাকে রাইফেলের বাঁট দিয়ে একের পর এক আঘাত করা হয়। কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে বুট দিয়ে পাড়িয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছেন ওসি আতাউর। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী ওই ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়েছে। ওই ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী একই সঙ্গে ওই ঘটনায় পুলিশি নির্যাতনের শিকার ব্রিটিশ নাগরিক শামস্ ইসলাম ভাঙা ভাঙা বাংলায় এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না। আমার কানে শুধু কান্নার আওয়াজ আসছে। এটা এক অসহ্য যন্ত্রণা।’নির্যাতনের শিকার কামাল চৌধুরীর ভাই মামুন চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, “খবর পেয়ে আমি সন্ধ্যা ৬টার দিকে থানায় গিয়ে দেখি আমার ভাইকে অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে ওসি আতাউর আমাকে বলেন ‘তিনি মনে হয় হার্ট অ্যাটাক করেছেন’। ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন কেন- জানতে চাইলে এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন ওসি আতাউর।”তিনি আরও বলেন, ‘পরে থানার একটি গাড়িতে করে আমার ভাইকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। শুধু তাই নয়, থানা চত্বরে নেওয়া আমার ভাইয়ের প্রাইভেট কারটির (টয়োটা এক্সিও-ঢাকা মেট্রো গ-৩৭-৩২৪৩) মবিল ও পেট্রলের ট্যাংকিতে বালু ও পানি ভর্তি করে রাখা হয়। ইতিমধ্যে গাড়ির ইঞ্জিন ডেমেজ হয়ে গেছে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অমানবিক নির্যাতনের শিকার সুনামগঞ্জের ছাতকের কামাল চৌধুরীর সাথে কথা বলতে গেলে এক পর্যায়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি। নির্যাতনের শিকার কামাল বর্তমানে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার সারা শরীরে অমানুষিক নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। কামাল চৌধুরীর অভিযোগের বিষয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও পাওয়া গেছে একই ধরনের তথ্য। তবে পুলিশি হয়রানির ভয়ে তারা তাদের নাম প্রকাশে রাজি হননি।
এদিকে, সিএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, তার থানায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে এসএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) এজাজ আহমেদ বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনা সত্য। তবে ওই ব্যক্তিকে কে নির্যাতন করেছে তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তদন্ত চলছে। আশা করি খুব দ্রুত দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। পুলিশের কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রমাণ হলে তার ব্যাপারে বিভাগীয় শাসি- নেওয়া হবে।’
স্পট : সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানা # পুলিশ না আন্ডারওয়ার্ল্ড কিলার!
Thursday, July 24, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment