আমাদের সিলেট ডটকম: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশে তাদের দূতাবাসের সেবা কার্যক্রম সীমিত করেছে। কেউ কেউ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে স্থানান্তর করেছে, কেউ বন্ধ করে দিয়েছে, কেউবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য তাদের দূতাবাস ভারতে স্থানান্তর করার আভাস দেয়। সে কারণে প্রবাসী ও বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে চূড়ান্ত ভোগান্তির আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় তারা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন। এ ব্যাপারে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট ভাষ্য মেলেনি।
এ ছাড়া যেখানে আমাদের দেশের মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে অহরহ গমন করে থাকে, সেই মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ ইতোমধ্যে শ্রমিক পর্যায়ে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ রেখেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের ভিসা বাংলাদেশ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সার্কের মালদ্বীপও মার্চ মাস থেকে তাদের ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। কানাডা ও বেলজিয়াম তাদের ভিসা কার্যক্রম ঢাকা থেকে সরিয়ে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করেছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ কি বহির্বিশ্বে তার গুরুত্ব হারাতে বসেছে! হলে তার মূলে কারণগুলোই বা কী? আরও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- কমনওয়েলথের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও ইংল্যান্ডের কাছে কেন হঠাৎ বাংলাদেশের গুরুত্ব এতটা কমে গেল যে, তারা দূতাবাসই এখান থেকে সরিয়ে নিতে চাইছে।
ঔপনিবেশিক কাল থেকে আজ পর্যন্ত উচ্চতর শিক্ষার জন্য আমাদের দেশের ছাত্ররা বিলেত তথা যুক্তরাজ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ ছাড়া সিলেটিসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ প্রবাসীরূপে বা স্থায়ী নাগরিক হিসেবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন। তারা ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা হরহামেশাই বিভিন্ন প্রয়োজনে ইংল্যান্ডে যাতায়াত করে থাকেন। ব্যবসা, চিকিৎসা, ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ইংল্যান্ড- বিশেষ করে লন্ডনের গুরুত্ব বাংলাদেশিদের কাছে অত্যধিক। রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হলে আমাদের দেশের নেতারা পর্যন্ত রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য যুক্তরাজ্যকে বেছে নেন।
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় রাষ্ট্রগুলো যদি একে একে বাংলাদেশ থেকে তাদের দূতাবাসগুলো সরিয়ে নেয় আর তার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের ইংল্যান্ড ও অন্য দেশের ভিসা সংগ্রহের জন্য সুদূর দিল্লী-লাহোর যেতে হয়, তাহলে তা যে কতটুকু ভোগান্তির ও লজ্জার তা বলাই বাহুল্য। এ ছাড়া দিল্লী-লাহোরের ভিসা যদি না পায়! কী কারণে আমাদের গুরুত্ব এতটা কমে গেল, তা জাতির কাছে স্পষ্ট নয়। নিশ্চয়ই একদিনে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এবং সরকার পুরো বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকার কথা। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা কূটনৈতিক উইং পরিস্থিতি বুঝতে ও তার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে কিনা! নাকি অন্য কোনো কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোসহ বহির্বিশ্বে আমাদের ইমেজ খাটো হয়েছে?
No comments:
Post a Comment