আমার স্বামীকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছে: সালেহা সাঈদী

Wednesday, April 16, 2014

শীর্ষ নিউজ, ঢাকা: ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সরকার আমার স্বামীকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে।’ এমন দাবি করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর স্ত্রী বেগম সালেহা সাঈদী।বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সাঈদীর মুক্তি কামনা করে এসব কথা বলেছেন সালেহা সাঈদী। জামায়াতে ইসলামীর প্রচার বিভাগ থেকে পাঠানো বিবৃতিটি শীর্ষ নিউজ ডটকমের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল:

“সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি পক্ষপাতদুষ্ট, প্রশ্নবিদ্ধ এ ট্রাইব্যুনালের কাছে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপক্ষ এ বিচারে প্রতি পদে পদে মিথ্যা, প্রতারণা এবং শঠতার আশ্রয় নিয়ে ন্যায় বিচারে বাঁধা সৃষ্টি করেছে। আমরা মনে করি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রতি ট্রাইব্যুনাল ন্যায় বিচার করেনি। বরং তিনি জুলুমের শিকার হয়েছেন।


আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের শুনানি চলাকালেও রাষ্ট্রপক্ষ পূর্বের মিথ্যাচার এবং শঠতা অব্যাহত রাখে। আমরা এ বিচারের শুরু থেকে ন্যায় বিচার দাবি করে আসছি। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এবং আন্তরিকাতর সাথে সহায়তা করে আসছি। আমাদের হাতে আসা সমস্ত তথ্য প্রমাণ আদালতের সামনে তুলে ধরেছি। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আমাদের অনেক ডকুমেন্ট বিশেষ করে ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলার এফআইআর কোনো বিবেচনায় নেয়নি। এ বিষয়ে একটি কথাও উল্লেখ করেনি রায়ে।


আল্লামা সাঈদীর মামলার আপিল শুনানিতেও ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগ এবং মমতাজ বেগমের মামলার বিষয়টি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দাখিল করা মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্টকে জাল, মিথ্যা এবং মামলার প্রয়োজনে সৃজনকৃত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এটা বিবেচনায় না নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হয়েছে আদালতে।


এ প্রেক্ষিতে আমরা আদালতে দরখাস্ত দিয়ে বলেছি পিরোজপুর থেকে মমতাজ বেগমের মামলার জিআর (জেনারেল রেজিস্টার) বই তলব করা হোক। তাহলেই প্রমাণিত হবে মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে আদৌ এ ধরনের কোনো মামলা করেছিলেন কি না এবং আমাদের ডকুমেন্ট জাল কি না।


মমতাজ বেগমের মামলার নথি তলবের আবেদন আমরা করেছিলাম। কিন্তু ১৬ এপ্রিল আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান রেখে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আদালতের এ আদেশে আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারণ আমরা মনে করি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত একজন মানুষকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী কিংবা নির্দোষ প্রমাণের ক্ষেত্রে যদি সর্বশেষ কোনো সুযোগ বা বিষয় সামনে আসে তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।


আমরা মনে করি আল্লামা সাঈদী সত্যিই ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার সাথে জড়িত কি না সে বিষয়ে সন্দেহাতীত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আদালতের উচিত ছিল মমতাজ বেগমের মামলার নথি পিরোজপুর থেকে তলব করা। আদালত কেন তা বিবেচনায় নেয়নি সে বিষয়ে মানুষের মনে জিজ্ঞাসা সবসময়ই থেকে যাবে। কারণ দুনিয়াবি বিচার ব্যবস্থায় মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপরে দুনিয়ায় মানুষের বিচার চাওয়ার আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই। দেশবাসীর স্বাভাবিক প্রত্যাশা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে একজন মানুষকে দোষী প্রমাণের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি যেন না থাকে।


বিশাবালী হত্যার অভিযোগ এবং সুখরঞ্জন বালী অপহরণের ঘটনা:


আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হল বিশাবালী হত্যা। এ অভিযোগেও আল্লামা সাঈদীকে মৃত্যুদ- দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বিশাবালীর আপন ছোটভাই সুখরঞ্জন বালী। সে ছিল রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী। রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে তার নামেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেছে সে পলাতক এবং নিখোঁজ । তাকে হাজির করা যাচ্ছে না। অথচ আমরা সুখরঞ্জন বালীকে হাজির করেছি ৫ নভেম্বর। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকের লোকজন অপহরণ করে নিয়ে যায়। গত বছর ১৬ মে দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বালীকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অপহরণ করে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে এবং সে ভারতের কারাগারে রয়েছে।


সুখরঞ্জন বালী অপহরণের পূর্বে মিডিয়ায় প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার ভাই বিশাবালী হত্যার সাথে আল্লামা সাঈদী জড়িত নন। তিনি এ সত্য বলার জন্যই ট্রাইব্যুনালে এসেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলাতে চেয়েছিল। সে কারণে তিনি তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। বালী আরো জানান, যে দিন রাজাকাররা তার অসুস্থ ভাই বিশাবালীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় সেদিন তাদের সাথে আল্লামা সাঈদী ছিলেন না। থাকলে তিনি তাকে চিনতে পারতেন। কারণ পাড়েরহাট বাজারে আল্লামা সাঈদীর শ্বশুরের কাপড়ের দোকান ছিল এবং সেই সূত্রে তিনি আগে থেকেই আল্লামা সাঈদীকে চিনতেন।


স্কাইপ কেলেঙ্কারি:


আমরা শুরু থেকেই দাবি করে এসেছি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব নয়। এ ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ নয়। তারা প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। শেষ পর্যন্ত সেটাই প্রমাণিত হল স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে। স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁসের পর গোটা দুনিয়াবাসীর সামনে এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম কিভাবে বিচারের নামে গোটা জাতির সামনে প্রতারণা, প্রহসন, নাটক এবং তামাশা করেছেন। বিচার বিভাগের ইতিহাসে তিনি কিভাবে কলঙ্ক লেপন করেছেন।


সেফ হাউজ কেলেঙ্কারি:


২০১২ সালের ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে ৪৬ জন সাক্ষীর একটি তালিকা দিয়ে বলল, এদেরকে হাজির করা সম্ভব নয়। এদের হাজির করতে না পারার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ জানায় আল্লামা সাঈদীর পক্ষাবলম্বনকারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে অনেকে নিখোঁজ, অনেকে বাড়ি ছাড়া, অনেকে ভারতে চলে গেছে, কেউ অসুস্থ, কারোর বা স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। তাই এসব সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যেসব জবানবন্দি দিয়েছে তা তাদের অনুপস্থিতিতেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক। ট্রাইব্যুনাল এদের থেকে ১৫ জনের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে। আমরা ডকুমেন্ট হাজির করে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ করেছি যে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারার নামে যা বলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমনকি ৪৬ জনের তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে এডভোকেট আলী হায়দার খান, জুয়েল আইচসহ অনেকে ঢাকায় বসবাস করে এবং তাদের কাছে কখনো সমন নিয়েও যাওয়া হয়নি তাদের হাজির করার জন্য। তাদের কাছে না গিয়েই বলা হচ্ছে তাদের হাজির করা সম্ভব নয়।


এরপর যে ১৫ জনের জবানবন্দি ১৯(২) ধারায় তাদের অনুপস্থিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হল তাদের বিষয়েও আমরা বলেছি তাদের অনেককে ঢাকায় এনে সেফ হাউজে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা রাষ্ট্রপক্ষের শেখানো মতে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।


আমরা সেফ হাউজের ডকুমেন্ট হাজির করে প্রমাণ করি এসব সাক্ষীদের অনেককে রাষ্ট্রপক্ষ ঢাকায় এনে দিনের পর দিন সেফহোমে রেখেছে। সেফ হোমে কোন কোন সাক্ষী এসেছিল, কে কতদিন থেকেছে, কি খেয়েছে, কে কোথায় গেছে, কোন কোন সাক্ষী বাড়িতে আছে সব ডকুমেন্ট আসামি পক্ষ হাজির করে। সেফ হোমের একটি ডায়েরি তারা হস্তগত করে এবং তা ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। সেখানে সেফ হোমে আসা সমস্ত সাক্ষীদের বিষয়ে তথ্য রয়েছে। কিন্তু তারপরও ট্রাইব্যুনাল তাদের সাক্ষ্য বাতিল না করে বহাল রেখেছে এবং রায়ে অভিযোগ প্রমাণের পক্ষে তাদের সাক্ষ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।


আমরা ট্রাইব্যুনালে আরো বলেছি- সাক্ষীদের নামে যে জবানবন্দি লিখে জমা দেওয়া হয়েছে তা আসলে তদন্ত কর্মকর্তা নিজে ইচ্ছামত লিখে জমা দিয়েছে আল্লামা সাঈদীকে দোষী প্রমাণের জন্য।


আমি দ্ব্যার্থহীনভাবে বলছি, আল্লামা সাঈদী সম্পূর্ণ নির্দোষ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সরকার আমার স্বামীকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছে।


পিরোজপুরের জনগণ ২৩ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে আমাদের সন্তান মাসুদ সাঈদীকে ৪ গুনেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করে প্রমাণ করেছে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি আমার নির্দোষ স্বামীর মুক্তি দাবি করছি এবং দেশবাসীর নিকট দোয়া কামনা করছি।”






Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License