১০০ ট্রিলিয়ন গ্যাসের মজুদ তালপট্টিতে!

Monday, July 14, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম: ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলায় বাংলাদেশের বিজয় হয়েছে বলে দাবি করে আসছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তাদের যুক্তি, মোট ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমার নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধ ছিল। রায়ে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার অধিকার পেয়েছে বাংলাদেশ। আর ভারত পেয়েছে ৬ হাজার ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু বিস্ময়কর তথ্য হলো, ভারতের পাওয়া এই ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যেই পড়েছে দক্ষিণ তালপট্টি। যেখানে মজুদ রয়েছে ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু বাংলাদেশের পাওয়া অংশে কী পরিমাণ খনিজ সম্পদ রয়েছে তা নিয়ে এখনো কিছুই জানা যায়নি। সমুদ্রসীমার রায়ের পর ভারতের গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি তেমন কোনো তৎপরতা না দেখালেও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। তারা যথারীতি ব্যাপক বিশ্লেষণ করেছে সমুদ্রসীমা রায় নিয়ে। ভারতীয় অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকা ফাস্ট পোস্ট ডটকম প্রথমবারের মতো সমুদ্র রায় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালায় এবং রায়ের প্রতিফলন নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। রায়ের বিষয়ে ফাস্ট পোস্টের পরামর্শক এডিটর এবং কৌশলগত বিশ্লেষক রাজিব শর্মা বলেন, রায়ে দীর্ঘ দিনের একটি ইস্যুতে ভারতের পক্ষে একটি সমাধান করা সম্ভব হলো। রায়ের ফলে নিউ মুর আইল্যান্ডে ভারতের আসল স্বত্ত্বাধিকারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত বুঝেই এই রায় দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীতে ভারতে প্রবেশাধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে। হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনা ও মুখের জায়গাটি ভারতের কাছে বিভিন্ন কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নদীর বির্তকিত অংশে যদি ভারতের দাবি নিশ্চিত করা হয় তবে আগামীর দশকগুলোতে ভারতে অনেক লাভবান হবে। এর আগে ২০০৬ সালে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় দক্ষিণ মুখের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে ভারত সরকার জানতে পারে যে এই অঞ্চলে প্রায় একশ’ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে। যেটি অন্ধ্র প্রদেশের কৃষ্ণা-গোদাবারি মোহনায় মজুদ সম্পদের চেয়েও দ্বিগুণ। সমুদ্র সীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে অনেক ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিজয় বললেও ভারতীয় জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি সমুদ্র রায়কে ভারতের পরাজয় হিসেবে দেখছে না। বরং এই রায়ে ভারতের কৌশলগত বিজয় হয়েছে বলে বলা হয়েছে।‘ভারত-বাংলাদেশের ৪০ বছরের বিতর্কিত সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত ইউএন ট্রাইবুনালের রায়’ নামক একটি প্রচারিত অনুষ্ঠানে তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যে বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদালত যে রায় দিয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল রায়। রায়ে ভারত পরাজিত হয়নি। বরং নিউ মুর আইল্যান্ড ও হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর ভিতর ভারতের প্রবেশাধিকার আরও বাড়বে। রিপোর্টে বলা হয়েছে নিউমুর আইল্যান্ড প্রাকৃতিক তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল এক সম্ভার। যার কারণে এই দ্বীপের মালিকানা নিয়ে প্রতিবেশি দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এছাড়া হাড়িয়াভাঙ্গা নদী যেটি পশ্চিম বাংলার সুন্দরবনের কোল ধরে বয়ে বেড়ায় সেই নদীতে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রো কার্বন রয়েছে যেটি শুধুমাত্র অন্ধ্র প্রদেশের কৃষ্ণা-গোদাবারি নদীর মোহনায় পাওয়া যায়। পাশাপাশি এই রায়ে উভয় দেশের জেলেদের জন্য বিশাল এক সমুদ্রসীমা ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক স্থায়ী আদালত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিতর্কিত ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজারের উপরে সমুদ্র সীমার উপর অধিকার পায়। তথ্যে বলা হচ্ছে বিতর্কিত রায়ে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে। উভয় দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে তেল, গ্যাস সন্ধান করতে পারবে এবং সমুদ্র সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে সক্ষম হবে। সমুদ্র সীমার রায়ে উভয় দেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এর আগে ১৯৭০ সালে সমুদ্র তীরে সাইক্লোন ঝড়ে জেগে ওঠা নিউমুর আইল্যান্ড যেটি বাংলাদেশে দক্ষিণ তালপট্টি নামে পরিচিত সেটির মালিকানা উভয় দেশ দাবি করে আসছিল। গবেষণা রিপোর্টটি বলছে ভারতের কৌশলগত দিক বিচার করেই এবং ভারতের দাবির ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই অঞ্চলের মালিকানা ভারতকে দেওয়া হয়েছে। রায়ের পর ভারত এখন সময় সুযোগমত দ্বীপের প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উত্তোলন করতে পারবে। এছাড়া রায়ে ভারতের দ্বিতীয় সাফল্য হল যেহেতু বাংলাদেশ প্রায় বিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিকার পেয়েছে তাই ভারত সরকার অনেকটাই খুশি হয়েছে। কারণ এতে করে দীর্ঘ দিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে এবং সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি রায়ের ফলে উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও শক্তিশালী হয়েছে। রিপোর্টে সমুদ্র সীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে দীর্ঘ বিতর্কিত ইস্যুর সমাধান হওয়া নতুন করে বিতর্কিত স্থল সীমা চুক্তি ও তিস্তা চুক্তির বিষয়েও সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সৌজন্যে গার্ডিয়ান.





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License