আমাদের সিলেট ডটকম: ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, নয়াদিলী বাংলাদেশের সঙ্গে খুবই ইতিবাচক ও বিকাশমান সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি বলেন, আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে চাই।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
শামীম চৌধুরী বলেন, সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ সম্বলিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ আমন্ত্রণপত্র শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন।
সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশের প্রধানমন্ত্রী আগ্রহের সঙ্গে আশা করছেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই ভারত সফর করবেন।
প্রতুত্তরে শেখ হাসিনা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, তাঁর দেশও আগ্রহের সঙ্গে আশা করছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন।
শেখ হাসিনা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের কোন রকম ছাড় না দেয়ার অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তাঁর সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের জন্য কাউকে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে দেবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতের মতো সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের জন্য কাউকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেব না এবং এক্ষেত্রে আমাদের দৃঢ় অবস্থান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আত্মগোপনকালে আটক নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলায় অভিযুক্ত নূর হোসেনসহ বাংলাদেশের সকল সন্ত্রাসীকে ফেরত দিতে ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
শেখ হাসিনা স্থল সীমানা চুক্তি এবং তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যাসহ ভারতের সঙ্গে সকল দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জবাবে সুষমা স্বরাজ বলেন, স্থল সীমানা বিল ইতোমধ্যে ভারতের পার্লামেন্টে উত্থাপিত হয়েছে এবং এটি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকার পথে রওয়ানা হওয়ার আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, বিষয়টি ইতিবাচক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ হয়ে আগরতলায় চাল পরিবহনে ভারতের অনুরোধ সম্পর্কে শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে আগরতলার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধনের কথা উলেখ করে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি সড়ক উন্নয়নে ভারতের সহায়তা কামনা করেন।
দারিদ্র্যকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শত্র“ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোকে দারিদ্র্য বিমোচনে একত্রে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যকার সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান করতে হবে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে প্রতিবেশীদের সঙ্গে অবশ্যই ভালো সম্পর্ক প্রয়োজন।
তিনি বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ বেগবান করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য ৬৫ বছরের অধিক বয়স্ক ও ১৮ বছরের কম শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের আহŸান জানান।
প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের মঙ্গলের জন্য বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (বিসিআইএমইসি) প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি হাইড্রোইলেক্ট্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প এগিয়ে নিতে ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। পরবর্তীতে নেপাল এই যোগ দিতে পারে বলে তিনি উলেখ করেন।
শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে ভারতের ভবা এটমিক রিসার্চ সেন্টারে রূপপুর পারমাণবিক স্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশের উত্তরাঞ্চলের চাহিদা পূরণে আসাম-নাগাল্যান্ড-পার্বতীপুর সীমান্ত দিয়ে পাইপ লাইনযোগে ভারত থেকে পরিশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা চান।
প্রেস সচিব বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশ সরকার তাকে যে উষ্ণ আতিথেয়তা দেখিয়েছে তাতে তিনি অভিভূত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্পিকারকে পাঠানোর জন্য শেখ হাসিনার উদ্যোগেরও প্রশংসা করেন তিনি।
সুষমা স্বরাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভুটান সফরকালে তাকে তার বাংলাদেশ সফরের কথা জানান।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরের শুরুতেই বাংলাদেশকে বেছে নেয়ার জন্য সুষমা স্বরাজকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী ট্রেন সার্ভিস ‘মৈত্রী এক্সপ্রেসের’ কোচের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাস সার্ভিসের উন্নয়নের বিষয়ও আলোচনায় স্থান পায়।
এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে শেখ হাসিনা তাঁর অফিসের সিঁড়িতে এসে সুষমাকে স্বাগত জানান। পরে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেঁটে সিঁড়ি পর্যন্ত এসে তাকে বিদায় জানান। বিদায়ের আগে সুষমা স্বরাজকে আলিঙ্গন করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ও ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এবং ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ মোদির নয়াদিল্লি ঢাকার সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায় : সুষমা স্বরাজ
Thursday, June 26, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment