আমাদের সিলেট ডটকম:
কোতয়ালী থানার ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক নেতার পরিচয়ে নগরীর ঘাসিটুলা এলাকায় মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, পতিতালয় পরিচালনার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি লামাবাজার, জামতলা, সাগরদিঘীরপাড়সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই বৃদ্ধিতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। জবাবে লামাবাজার এলাকার সকল ছিনতাইকারীকে তিন দিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন এসএমপি’র ভারপ্রাপ্ত কমিশনার। অন্যথায় তাদেরকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করারও হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।
কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার এস এম রোকন উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার এজাজ আহমদ, এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ।
সিলেট নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলেছেন, তারেক ও তায়েফ নামের দুই ব্যক্তি ঘাসিটুলা এলাকায় মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, পতিতালয় পরিচালনাসহ নিরীহ লোকজনদের মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। তারা ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় এক নেতার ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে এ অপকর্ম করছে।
১০ নং ওয়ার্ডের মো. জাহাঙ্গীর বলেন, তায়েফ ও তারেকের কারণে এলাকায় মান সম্মান নিয়ে বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা এলাকায় অবৈধভাবে ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা ও খেয়াঘাটের পাশে ‘তায়েফ কলোনী’ নামে পরিচিত কলোনীতে অবাধে দেহ ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলে কিছু বলার সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই মিথ্যে মামলায় হয়রানির ভয় দেখানো হয়।
একই ওয়ার্ডের এডভোকেট সাইদুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় যেসব পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন তারা সব সময়ই এলাকায় গিয়ে প্রথমে তারেক ও তায়েফের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের দোরগোড়ায় যাবে। তাদের সমস্যার কথা শুনবে। কোনো অপরাধীর সঙ্গে তো পুলিশের সখ্য হতে পারে না। এলাকার অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের এমন সখ্য বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
এই দুই ব্যক্তি এবং ১০ নং ওয়ার্ডের সমস্যা নিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ডের গোলাম কিবরিয়া মামুনসহ আরও কয়েকজন। এসময় প্রত্যেকেই বক্তব্যেই হল ভর্তি শ্রোতারা হাত তালি ও ‘ঠিক ঠিক’ বলে সমর্থন জানান।
জবাবে ওপেন হাউজের সভাপতির বক্তব্যে এসএমপির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন বলেন, সন্তান অপরাধ করলে পিতা-মাথা বা অভিভাবকের কাছে প্রথমে নালিশ করতে হয়। আপনারা যাদের কথা বলছেন, এসব ব্যাপারে আপনারা তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি তো এই এলাকার অভিভাবক। তাদেরও অভিভাবক। জাতীয় পর্যায়ের নেতা। তার বক্তব্য শুনুন। পুলিশ আইনীভাবে যেটুকু করার সেটুকু করবে।
এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সামনে পবিত্র রমজান মাস আসছে। আমরা নামাজ-রোজা করতে চাই। পুলিশ অন্তত এলাকার পতিতালয়টি বন্ধ করার ব্যবস্থা নিক।
ওপেন হাউজ ডে’র আলোচনার এই পর্যায়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ঘাসিটুলা এলাকায় স্বপনের কলোনিতে পুলিশ এই মাত্র অভিযান চালিয়েছে। সেখানে বেআইনি কিছু বা কোনো অপরাধীকে পাওয়া যায়নি।
১২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ওলিউর রহমান সোহেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাইর ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা নিরাপদ থাকলেও ভাড়াটিয়া ও ব্যবসায়ীরা এখানে ছিনতাই শিকার হন বেশি। তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে লামাবাজারে একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। অথচ আমিই জানি না, এই ফাঁড়ির দায়িত্বে কে আছেন।
এসময় তাৎক্ষণিক লামাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জকে ফোন করে ভারপ্রাপ্ত কমিশনার বলেন, আপনার এলাকায় ছিনতাই বেশি হয় বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ছিনতাইকারীদের ধরতে ফোর্স নিয়ে মাঠে নেমে যান। আপনাকে তিন দিনের সময় দিলাম এর মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিন।
১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাট্যকর্মী রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, জামতলার ভেতর দিয়ে যাওয়া তালতলা টু জল্লারপড় রোডটি ছিনতাইকারীদের সহজ একটি শিকার। এই এলাকা সকালে অত্যধিক নিরব থাকে বলে এখানে ছিনতাইও হয় বেশি। ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলে করে পথযাত্রীদের সব কিছু লুট করে নেয়।
এসময় ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, এখন থেকে প্রতিদিন সকালে ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্দ এই রাস্তায় পুলিশ মোটর সাইকেলে মহড়া দেবে। প্রত্যেকটি মোটর সাইকেলকে তারা তল্লাশী করবে। তাদের কাছে বেআইনি কিছু পেলেই আটক করারও নির্দেশ তিনি দেন।
২ নং ওয়ার্ডের গৌছুল আজম বলেন, আমাদের ওয়ার্ডটি ভোজন ওয়ার্ড হয়ে গেছে। এখানে পাঁচ ভাই, পানশীসহ বিভিন্ন রেস্টেুরেস্ট গড়ে উঠেছে। এসব রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে সারা দেশ থেকে মানুষ আসেন। এতে করে জিন্দাবাজার-জল্লারপাড়, দাঁড়িয়াপাড়া-দরগাহ রোডে খুব যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব ব্যপারে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
যানজটের কথা শিকার করে এসএম রোকন উদ্দিন বলেন, আপনাদের এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার এজাজ আহমদ বলেন, সরকার চায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি জনতার অংশগ্রহণ। তাই সমাজের সকল স্তরের জনগণকে পুলিশের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে।
প্রসঙ্গত, প্রায় দুবছর পর চালু হওয়া কোতোয়ালি থানার সর্বশেষ ওপেন হাউজটি অনুষ্ঠিত হয় ১৮ মে। একই মাসে এসএমপির অপর থানাগুলোতেও ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটিতে ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতা ও সাবেক সাংসদের বিপুল উপস্থিতি থাকলেও এবার সেটা দেখা যায়নি।
কোতয়ালী থানার ওপেন হাউস ডে : ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার ভাগ্নে পরিচয়ে ঘাসিটুলায় অপকর্ম চালানোর অভিযোগ # লামাবাজার এলাকার ছিনতাইকারীদের তিনদিনের মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ
Thursday, June 26, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment