গণতন্ত্র নেই বললেন খালেদা # সুষমার শাড়ি ডিপ্লোম্যাসি

Friday, June 27, 2014

মানবজমিন: তিন দিনের সফর শেষে দিল্লি ফিরে গেছেন সুষমা স্বরাজ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর এটি ছিল তার একক কোন বিদেশ সফর। প্রতিবেশী দেশ সফরে এসে সুষমা পেয়েছেন অন্যরকম আতিথেয়তা। বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের উষ্ণ ব্যবহারে সিক্ত সুষমার এ সফরকে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের চমৎকার সূচনা হিসেবে দেখছে ভারত। যদিও তার এ সফরে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। নির্বাচন, সংলাপ নিয়ে বাইরে বাইরে আলোচনা হলেও এ নিয়ে ঠিক কোন আলোচনা হয়েছে কিনা এটি স্পষ্ট নয়। সফরের দ্বিতীয় দিন ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে দেশটির মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন জানিয়েছিলেন, ভারত-বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়। দলীয় সংকীর্ণতায় আটকে থাকতে চায় না পৃথিবীর বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটি। সুষমার সফরসূচিতেও এটি স্পষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, সংসদ এবং রাজপথের বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে তার বৈঠকে এমন বার্তাই দেয়া হয়েছে। ঢাকা আসার সময় সুষমা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য নিয়ে এসেছিলেন ক্রিম কালারের শাড়ি। প্রধানমন্ত্রীও শাড়ি দিয়েছেন সুষমাকে। প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা নিজেই এই জামদানি শাড়ি কিনে এনেছিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শাড়ি উপহার দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। ভিন্ন রঙের জামদানি শাড়ি উপহার দিয়েছেন তিনি। বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে সুষমাকে আপ্যায়ন তালিকায় ছিল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ সন্দেশ। সুষমার শাড়ি ডিপ্লোম্যাসি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমেও। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির শাল কূটনীতির পর শাড়ি কূটনীতি গুরুত্ব পেয়েছে দেশটির গণমাধ্যমে। এদিকে ঢাকা ছাড়ার আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন দ্বিতীয় দফা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফর সফল দাবি করে তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক হবে সরকারের সঙ্গে সরকারের। একটি দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এমনটিই হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান জনগণকেই করতে হবে। আকবরউদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ভারত। প্রায় ৪০ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফর শেষ করে গতকাল দুপুরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা ত্যাগ করেন। কংগ্রেস-আওয়ামী লীগ বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ টেনে বিদায়বেলা এক সাংবাদিক তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন ৫ই জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে পূর্ণ মেয়াদে তার সঙ্গে কাজ করতে মোদি সরকার প্রস্তুত কিনা? জবাবে তিনি বলেন, সরকার কাজ করে সরকারের সঙ্গে। ভারতের সরকার বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। তবে এখানকার অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো বাংলাদেশের জনগণকেই সমাধান করতে হবে। বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে মাত্র দুটি প্রশ্ন নেন আকবরউদ্দিন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের বৈঠক প্রসঙ্গে ছিল দ্বিতীয় প্রশ্নটি। ওই বৈঠকে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত’ মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন তার দেশ প্রতিবেশী বাংলাদেশে গণতন্ত্র দেখতে চায় কিনা। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আকবরউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি তিনি। তবে বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার ও সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিরা ভারতের সঙ্গে আরও বন্ধুত্ব, ব্যাপক সহযোগিতা ও যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী। এ উপলব্ধি নিয়ে তারা (সুষমা এবং তার সফরসঙ্গীরা) ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় বিদায়ী দিনে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সুষমার বৈঠকের কথা স্মরণ করে দিল্লির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব বৈঠকে সেই উপলব্ধি হয়েছে। সুষমার ঢাকা সফরের পুরো সময়ই তিনি বাংলাদেশকে নতুন করে জানা-বোঝার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার সফরসঙ্গী ও সঙ্গে থাকা কূটনীতিকরা। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সফরের দ্বিতীয় দিনেই সৌজন্য বৈঠক করেন। ওই দিনেই দু’দেশের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠটিও করেন তিনি। সেখানে ভিসা সহজীকরণসহ তাৎক্ষণিক বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তও দেন। এদিকে বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া বৈঠককালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের হয়ে যাওয়া নির্বাচন এবং নির্বাচনপরবর্তী পরিস্থিতি। তার ভাষায় তিনি বলেছেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। যদিও খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সুষমা স্বরাজের প্রতিক্রিয়া কোন মাধ্যমেই প্রকাশ পায়নি।

সুষমার ঢাকা সফর ‘চমৎকার সূচনা’: ভারতের নতুন সরকারের পক্ষ থেকে সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরকে ‘চমৎকার সূচনা’ হিসেবে দেখছে দিল্লি। বিমানে ওঠার আগে দেশটির বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এভাবেই তার সফরকে মূল্যায়ন করেন। সুষমা ও তার সফরসঙ্গীদের বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বিদায় জানান। নবপ্রতিষ্ঠিত মোদি সরকারে কোন প্রতিনিধির ঢাকায় এটিই প্রথম সফর। সে হিসেবে এটি চমৎকার সূচনাই বটে। দিল্লি মুুখপাত্র বলেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে পরস্পরের উদ্বেগ দূর করা এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ব্যাপক আকাঙক্ষা চোখে পড়েছে। বিদ্যমান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করার ব্যাপারে সুষমা আশাবাদী বলেও জানান আকবরউদ্দিন।

kz2

১০ মিনিটের একান্ত বৈঠকে খালেদা-সুষমা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই মুখ্য আলোচ্য: ভারতের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষে একান্ত বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের অষ্টম তলায় ৮২৪ নম্বর ‘বেঙ্গলী’ প্রেসিডেন্ট স্যুটে এ বৈঠক হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আধঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের আনুষ্ঠানিক পর্বে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যু, অমীমাংসিত বিষয় এবং সম্পর্কের ব্যাপারে আলোচনা হয়। তবে খালেদা-সুষমা বৈঠকের মুখ্য ইস্যু ছিল বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দ্রুত মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা। ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের বিশেষ দল নয়, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বৈঠকে এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন সুষমা স্বরাজ। বৈঠক শেষে হোটেল লবিতে দেয়া এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভারতের নতুন সরকারকে অভিনন্দন এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক টেকসই করতে মোদি সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এ ব্যাপারে সাধুবাদ জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া বৈঠকে সুষমা স্বরাজকে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। ভারতের নির্বাচনের ফলাফলে বাংলাদেশের মানুষের মনে আশা জেগেছে যে, ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন অধ্যায় তারা দেখতে পাবে। পারস্পরিক লাভ ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে এ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। জবাবে সুষমা স্বরাজ বলেন, ভারতের নতুন সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সার্কের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে চায়। ভারত সরকার নির্দিষ্ট কোন দল নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে চায়। বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতন্ত্র দেখতে চায় ভারত। শমসের মবিন বলেন, বৈঠকে খালেদা জিয়া দ্বিপক্ষীয় অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। জবাবে সুষমা স্বরাজ আশ্বস্ত করেছেন, এ বিষয়ে তাদের অগ্রগতি হয়েছে। ভারতে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কাজ চলছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের মধ্যবর্তী নির্বাচন বা সংলাপ নিয়ে কোন ধরনের আলোচনা হয়নি। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সুষমার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার আপত্তি করেছিল। সরকারের আপত্তি অতিক্রম করেও বৈঠক অনুষ্ঠানে ভারত যে কোন দল নয়, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায় তার প্রতিফলন ঘটেছে। সুষমা স্বরাজ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন বলেন, এ ব্যাপারে কোন আলাপ হয়নি। ব্রিফিংয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। খালেদা জিয়া বৈঠকে সুষমা স্বরাজকে জানিয়েছেন, ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হয়নি। বর্তমান তথাকথিত সংসদ জনগণের ইচ্ছের প্রতিফলন নয়। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। তার প্রতিবেশী দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত থাকলে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে, এ কথাটি আলোচনায় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে তা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলবে। ড. মঈন খান মানবজমিনকে জানান, আমরা অতীতে দেখেছি- ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাবরই অগ্রাধিকার ছিল দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন। আমি মনে করি, তাদের এ ভ্রান্ত কৌশলের কারণেই দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশের মানুষের মধ্যে যত ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতে এবার নতুন ক্ষমতায় আসা রাজনীতিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হতে বের হয়ে আসতে হবে। দু’দেশের রাজনৈতিক দল অথবা সরকারের মধ্যে নয়, বরং দু’দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করার প্রয়াস নিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও আস্থা স্থাপনের এটাই হচ্ছে একমাত্র উপায়। এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রতিবেশী দেশের এ উপলব্ধিও হতে হবে যে, কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক পরিবেশেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। কাজেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং ভারতের জন্যও হুমকি স্বরূপ। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ অংশ নেন। এ সময় সুষমা স্বরাজকে ৫টি ঢাকাই জামদানি শাড়ি উপহার দেন খালেদা জিয়া। এর আগে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে হোটেল সোনারগাঁওয়ে যান খালেদা জিয়া। সাড়ে ১০টা থেকে আধাঘণ্টাব্যাপী বৈঠক চলে। তবে ভারতীয় হাইকমিশনের বাধার কারণে গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি তুলতে ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারেননি।


রওশনকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ, মুক্তাগাছার সন্দেশ দিয়ে আপ্যায়ন: সংসদের বিরোধীদলীয় ড়নেতা ও জাতীয় পার্টির ড়নেত্রী ড়রওশন এরশাদকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর সুষমাকে মুক্তাগাছার সন্দেশ দিয়ে আপ্যায়ন ও জামদানি শাড়ি উপহার দিয়েছেন রওশন। শুক্রবার সকাল পৌনে ১২টার দিকে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতার কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান সুষমা স্বরাজ। বৈঠক চলে ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রওশন এরশাদের সঙ্গে সুষমা স্বরাজ ও তার প্রতিনিধি একান্তে প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন। এসময়ড় ওই কক্ষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবরউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এসময় বাইরে চলে যান সেখানে উপস্থিত বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও বিরোধী দলের নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ। বৈঠক শেষে রওশন এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুধুমাত্র সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। সাক্ষাতে বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান অমীমাংসিত তিস্তা, ছিটমহল ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আলোচনা হয়েছে। আস্তে আস্তে এগুলোর সমাধান করা হবে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে রওশন বলেন, ‘না এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত এটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। তবে, বিরোধীদলীয় নেতার তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ড়মো. মামুন হাসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, বিদ্যুৎ রপ্তানি, পানিবণ্টন ও যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর ভারতের আরও বেশি সহযোগিতা কামনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দেখতে চান এবং এ ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।ড় এতে আরও বলা হয় বিরোধীদলীয় নেতা বিশেষ করে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় ও অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে দ্রত সমাধানে বিরোধীদলীয় নেতা এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত পোষণ করেন।


দিনের শুরুতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রার্থনা: সফরের শেষ দিনের শুরুতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান সুষমা। সেখানে বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে প্রার্থনা করেন তিনি। এ সময় ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নাটমন্দিরের সামনে ভক্তদের উদ্দেশে সুষমা স্বরাজ হিন্দিতে বক্তব্য দেন। সকাল সাড়ে ৮টায় কড়া নিরাপত্তায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান তিনি। এসময় মন্দিরের মূল ফটকে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সনাতন ধর্মাবলম্বী শত শত নারী ও পুরুষ। তিনিও হাত নেড়ে প্রণাম করে সকলকে শুভেচ্ছা জানান। শুভেচ্ছা শেষে মন্দিরে পূজা ও পুষপাঞ্জলি দেন সুষমা স্বরাজ। পূজা শেষে নাথমন্দিরে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, এখানে আসতে পেরে আমি খুব আনন্দিত ও গর্বিত। বাংলাদেশ সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার সময় থেকেই আমি অপেক্ষা করছিলাম কবে এই ঐতিহাসিক মন্দিরে আসব। পূজা ও পুষ্পাঞ্জলি দেব। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে পূজা না দিলে আমার সফর পূর্ণ হতো না। নিজেকে খুবই আনন্দিত লাগছে। আমার মানসিক শক্তিও বেড়ে গেছে। দেশে গিয়ে আমি এখানকার কথা বলব। তিনি বলেন, আজ এখানে কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে আসেনি। অঞ্জলি প্রদানের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের সমৃদ্ধি, দু’দেশের বন্ধুত্ব ও রাজনৈতিক সম্পর্ক যেন অটুট থাকে সেজন্য আমি প্রার্থনা করেছি। দুদেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে আমার বিশ্বাস। এসময় সুষমা স্বরাজের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, সুব্রত চৌধুর, প্রণব সাহা প্রমুখ। আলোচনা সভাশেষে সুষমা স্বরাজ ও সুজাতা সিংয়ের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

হোটেলে শেখ রেহানা ও পুতুলের সাক্ষাৎ: হোটেলে ফেরার পর সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় আধঘণ্টা তারা তার সঙ্গে সোনারগাঁওয়ে হোটেল স্যুটে গিয়ে কথা বলেন। পরে আরও আধ ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও ড. গওহর রিজভী একত্রে গিয়ে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। হোটেলে তার সর্বশেষ বৈঠক হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এরপর বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করতে তিনি জাতীয় সংসদ ভবনে যান। সেখান থেকে বিমানবন্দরে। দেড়টার দিকে তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ ফ্লাইটে নয়া দিল্লির উদ্দেশে রওনা করেন। গত বুধবার রাতে তিন দিনের ‘শুভেচ্ছা সফরে’ ঢাকায় এসেছিলেন সুষমা স্বরাজ।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License