সিলেটে পেঁয়াজের ঝাঁজ তুঙ্গে ॥ নেপথ্যে ১৫ কারবারি

Thursday, July 10, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম :

সিলেটজুড়ে পেঁয়াজের মূল্যঝাঁজ নিয়ে চলছে মাত্র ১৫ বেপারির কারবার। সিলেটের সম্পূর্ণ পেঁয়াজের বাজার ১৫ ব্যাপারীর আওতায়। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ার নেপথ্যে এই ১৫ জনের সিন্ডিকেটই দায়ী বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এই সিন্ডিকেটই সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেন। এর প্রভাব পড়ে পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে।

সিলেটের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন ১২ থেকে ১৫জন আমদানিকারক। তাদের স’ানীয়ভাবে বেপারি বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১১ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মনসুর, রফিক, হাজী মোতাহের, আব্দুল মালেক, নজরুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ, আব্দুল কাদির, মঞ্জুর, সিদ্দিক, দেলোয়ার, ফুল মোহাম্মদ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিমসহ সংশিৱষ্টরা কেউই তাদের কাছ থেকে পেঁয়াজ আমদানি-রপ্তানির পরিপূর্ণ হিসাব পান না। দোকানেও ঝুলানো থাকে না মূল্য তালিকা।

জানা গেছে, সিলেট নগরীর কালিঘাটস’ মেনন ট্রেডার্স, বক্স স্টোর, আব্দুর রশিদ এন্ড সন্স, আব্দুল গফুর এন্ড সন্স, পরশ চন্দ্র বণিক এন্ড সন্স, ইব্রাহিম ব্রাদার্স, মেসার্স পাল এন্ড ব্রাদার্স, আলম ব্রাদার্স, করিম ব্রাদার্স, মেসার্স মেহের ট্রেডার্স, জননী ভান্ডার, তৈমুর খান এন্ড বাদল কোং, মেসার্স সালাম এন্ড ব্রাদার্সসহ বিভিন্ন আড়ৎদারী ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে গুদাম ভর্তি পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। কিন’ এসব দোকানে নেই কোনো মূল্য তালিকা। পাইকারি এসব প্রতিষ্ঠানে পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। অথচ এই পেঁয়াজই রমজানের শুর্বতে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

কালিঘাটের সালাম এন্ড ব্রাদাসের্র স্বত্ত্বাধিকারী মঈন উদ্দিন জানান, ব্যাপারীরা তাদেরকে পেঁয়াজ বিক্রির উপর কমিশন দিয়ে থাকেন। তবে কমিশনের পরিমাণ বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া তিনি কি পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ রেখেছেন এ বিষয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তাঁর দোকানে পেয়াজ ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সিলেট জেলা প্রশাসনের মার্কেটিং অফিসার মুর্শেদ কাদির বলেন, সিলেটের বাজারে প্রতিদিন সাড়ে ৭শ’ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসে। এর মধ্যে স’ানীয় চাহিদা প্রায় ২শ’ ২৫ মেট্রিক টন। কিন’ ব্যাপারীদের দাবি প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৩শ’ মেট্রিক টন পেঁয়াজ সিলেটের বাজারে আমদানি করা হয়।এ বিষয়ে ব্যাপারী আব্দুল মজিদ জানান, প্রতি রমজান মাসে তিনিসহ ব্যাপারীরা সিলেটে অবস’ান করেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। ১৫ জন ব্যাপারীর মাধ্যমে প্রতিদিন এক ট্রাক করে পেঁয়াজ সিলেটের বাজারে ঢোকে। সে হিসাবে ৩শ’ টন পেঁয়াজ প্রত্যহ সিলেট নগরীতে আসে। তিনি বলেন, নিম্নমানের পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৩২/৩৩ টাকা এবং মোটামুটি ভালো পেঁয়াজ ৩৪/৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে ভালো পেঁয়াজের দাম একটু বেশি। ৩৮/৪০ টাকার কম বিক্রি করা সম্ভব হয় না। সিলেটের বাজারে এমন উন্নত পেঁয়াজ নেই।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম পর্যবেক্ষণ এসব দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা ঝোলানো পায়নি। বাজারে কত টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে, আর কেনই বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে এ বিষয়েও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি আড়ৎদার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ১২/১৫ জনের ব্যাপারী সিলেটে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন। তারা যেভাবে বলেন, আমাদের সেভাবেই বিক্রি করতে হয়। আর এ কারণেই পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে প্রশাসনের সাথে চলছে লুকোচুরি। তাই রমজানের শুর্ব থেকে স’ানীয় আড়ৎদারদের যোগসাজসে পেঁয়াজের দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। এক পেঁয়াজই অসি’র করে তুলেছে বাজার।

সিলেট জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিমের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এজেডএম নুর্বল হক সাংবাদিকদের বলেন, চাহিদার বিপরীতে যথেষ্ট পেঁয়াজ বাজারে রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছা থাকলে শুধু পেঁয়াজ নয়, সব জিনিসের মূল্যই সহনীয় থাকবে। তিনি বলেন, বাজারে দোকানগুলোতে পণ্যের মূল্যতালিকা ঝুলানো থাকে না। আড়ৎদারী ব্যবসায়ীদের মূল্য তালিকা ঝোলাতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশ অমান্যকারীদের পরবর্তী অভিযানকালে জেল-জরিমানা করা হবে।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License