স্কুল ছাত্রী অপহরনের ঘটনায় ১৯ দিন পর সিলেট আদালতে আত্মসমর্পন আসামীকে জেলে প্রেরণ

Thursday, July 10, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম:

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় স্কুল ছাত্রী অপহরনের ১৯ দিন পর আদালতে আত্মসমর্পন করেছে মামলার আসামী ও ভিকটিম। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আইজীবীর মাধ্যমে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমার্পন পূর্বক জামিনের আবেদন করে তারা। এ সময় আদালত ভিকটিম লিপি রাণী চন্দ (১৬)’র সার্বিক বয়স নির্ধারনের জন্য তাকে নিরাপদ হেফাজতে ও মামলার আসামী দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার এলাকার আহাদ মিয়ার পুত্র মুদির দোকানদার বখাটে মোঃ জাবেদ (২০)কে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আদালত আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী মামলার তারিখ নির্ধারন করেন।

ভিকটিম লিপি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী এলাকার মশলঘাট গ্রামের দিনেন চন্দ্র চন্দের কন্যা। বর্তমানে তারা দক্ষিণ সুরমা লালাবাজার এলাকায় ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করে আসছিল। লিপি লালাবাজার স্কুল এন্ড কলেজের ১০ শ্রেণীর ছাত্রী।

মামলার সুত্রে জানা গেছে, ১৯ জুন সকাল ১০ টায় লিপি রাণী চন্দ লালাবাজার স্কুল এন্ড কলেজে পরিক্ষা দিতে যায়। সেখানে সে যথারীতি পরিক্ষা দিয়ে ওইদিন দুপুর দেড় টার দিকে স্কুল থেকে বাসায় ফিরার পথে জাবেদ আহমদ তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে। পরে জাবেদ তাকে নিয়ে লামাকাজি তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে লিপিকে রেখে জাবেদ স্থানীয় একজন ইমামের মাধ্যমে কালেমা পাঠ করে হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো হয়। ১৯ জুন রোটারী পাবলিকের (হলফনামা) মাধ্যমে লিপি রাণী চন্দের নাম পরিবর্তন করে তার নাম রাখা হয় লিপি বেগম। গত ২১ জুন অপহরক মোঃ জাবেদ প্রেমের জালে আটকিয়ে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার দেনমোহর সাব্যন্তক্রমে সে লিপি বেগমকে বিয়ে করে লামাকাজি তার আত্মীয়ের বাড়িতে সংসার করতে থাকে। বিয়ের কাবিনে লিপির জন্ম তারিখ ১৭ মার্চ ১৯৯৫ ইং লিখা হয়। কিন্তু স্কুল সাটিফির্কেটে লিপির জন্ম তারিখ ২৬ আগষ্ট ১৯৯৭ ইং লিখা রেয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে ভিকটিম লিপি মহিলা কোর্ট লকাফ থেকে এ প্রতিবেদককে জানায়, জাবেদের সাথে তার ২/৩ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। ঘটনারদিন সে স্বইচ্ছায় জাবেদের সাথে পালিয়ে যাই। পরে জাবেদ আমাকে নিয়ে লামাকাজি তার আত্মীয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে কালেমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আমার নাম রাখা হয় লিপি বেগম। পরে আমি কাবিন মুলে জাবেদ আমাকে বিয়ে করে ১৫/২০দিন ধরে দু’জন মিলে সংসার করতে থাকি। গতকাল আমরা দু’জন আদালতে আত্মসমার্পন করি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দক্ষিণ সুরমার উপপরিদর্শক (এসআই) মুজিবুর রহমান জানান, গত বুধবার রাতে থানার ওসি আসামী জাবেদের পিতা আহাদ মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য থানায় নিয়ে এসে ঘটনার বিষয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে ভিকটিম লিপি রাণী চন্দ ও অপহরক বখাটে মোঃ জাবেদ সিলেট নারী নির্যাতন আদালতে আত্মসমার্পন করে। এ সময় আদালত ভিকটিম লিপির সার্বিক বয়স নির্ধারন ও ধর্ষন সংক্রান্তে কোন ডাক্তারী সনদপত্র না থাকায় ভিকটিমের মামলা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে সার্বিক বিবেচনায় সকল আবেদন না মঞ্জুর করেন। পরে আসামী জাবেদকে কারাগারে ও ভিকটিম লিপি রাণী চন্দকে বাগবাড়ী নিরাপদ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের ডাক্তারী পরিক্ষার জন্য আজ আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দিনেন চন্দের লালাবাজার বাসার সামনে জাবেদের মুদির দোকান হওয়ায় জাবেদ ২ বছর ধরে স্কুলে যাওয়া আসার পথে লিলিকে উত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি লিপি তার পরিবারকে জানায়। পরে উত্যক্তকারী জাবেদের পিতার কাছে বিষয়টি অবগত করলেও সে লিপিকে জোরপুর্বক অপহরন করে নিয়ে যাওয়ার তার পরিবারকে হুমকী-দমকী দিতে থাকে। ১৯ জুন সকাল ১০ টায় লিপি তার স্কুলে পরিক্ষা দিতে যায়। সেখানে সে যথারীতি পরিক্ষা দিয়ে ওইদিন দুপুর দেড় টার দিকে স্কুল থেকে বাসায় ফিরার পথে জাবেদ আহমদ তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। এদিকে, লিপি পরিক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফিরতে আসতে না দেখে তার পরিবারের লোকজন সম্ভব্য সকল স্থানে তাকে খোঁজাখুজি করে পাননি। পরে জাবেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সে অপহরনের বিষয়টি জানায় এবং কোথায় আছে তার কোন সঠিক স্থান না বলে লাইন কেটে দেয়। এ ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর পিতা দিনেন চন্দ বাদি হয়ে একই এলাকার আহাদ মিয়ার পুত্র অপহরক মুদির দোকানদার মোঃ জাবেদ আহমদ (২০)কে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি (অপহরন) মামলা দায়ের করেন। নং- ১৯ (২৫-০৬-১৪)।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License