আমাদের সিলেট ডটকম:
সিলেট ওসমানী হাসপাতালে শিক্ষানবিশ সেবকদের উপর শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের হামলার ঘটনায় সেবিকাদের আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ বেসিক নার্সেস এসাসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সিলেটে এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। আবার মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষও জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষানবিস নার্সদের তাদের প্রয়োজন নেই। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিবকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তারা সিলেটে এসে পৌছার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে সেবা কার্যক্রম যথাযথভাবে অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে।
সংশি¬ষ্ট সুত্র জানায়, সিলেট নার্সিং কলেজের ৩ শতাধিক নার্স ঘটনার পর দিন থেকে ওসমানী হাসপাতালের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছেন। তারা নার্সিং কলেজে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে। বাংলাদেশ বেসিক নার্সেস এসাসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি নাসিমুল হক ইমরান জানান, তারা কতৃপক্ষের কাছে বিবিন্ন দাবি জানিয়েছেন। দাবী পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সেবকদের উপর হামলাকারী ডা. তুফায়েল, ডা. জনি লালসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ইন্টার্ন শীপ বাতিল, সেবা পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন। এসব দাবী পুরণ হলেই আন্দোলন থামবে।
সিলেট নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ শিল্পী চক্রবর্তী জানালেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বারবার বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তারা উল্টো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা শান্তিপূর্ন অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ওসমানীর অধ্যক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিবকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আজ সিলেটে এসে পৌছবেন বলে জানান অধ্যক্ষ।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, গতকাল দুপুরে নার্সদের একটি দল আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তাদের বিচার যথাযথভাবে করে দেয়ার আশ্বাস দিলে তারা আন্দোলন স্থগিত করার কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কথা রাখেনি। উল্টো ঢাকা থেকে তাদের নেতৃবৃন্দ এনে আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, আমিও জানিয়ে দিয়েছি। শিক্ষানবিশ নার্স ছাড়াই ওসমানী হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম ভালোভাবে চলছে। তারা না আসলেও চলবে। অধ্যক্ষ এদের আন্দোলনের পিছনে কাদের হাত রয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মন্তব্য করেন।
ইন্টার্ন ডাক্তারদের নেতা ডা. জয় সাথী জানান, তাদের কোন দাবী দাওয়া নেই। হাসপাতালে তারা যথারীতি চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলছেন। সেবা দিতে তাদের কোন সমস্যাও হচ্ছেনা বলে জানান তিনি।
সিলেটে অবস্থানরত বাংলাদেশ বেসিক নার্সেস এসাসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি নাসিমুল হক ইমরানকে স্থানীয় ইস্যুকে জাতীয়ভাবে নিয়ে যাওয়ার কারন কি জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা লোকাল কমিটিকে বিষয়টি মীমাংশা করার কথা জানিয়েছিলাম। তারাও আন্তরিক ছিল। তবে পরদিন ইন্টার্ন ডাক্তাররা সংবাদ সম্মেলন করে নার্সদের ব্যাপারে আজে বাজে কথা বলে। যা আমাদের ইজ্জতের উপর আঘাত হেনেছে। ফলে কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেটে আসতে বাধ্য হয়েছে। ইমরান দোষী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী জানান, তিনি বিষয়টি বিএমএ এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, নার্সরা কারো কথা শুনছেনা। তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়েও বিষয়টি মীশাংশার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে জানান।
অন্যদিকে, সংবাদ সম্মেলন করে গতকাল বুধবার ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও সারা বাংলাদেশের মধ্যে ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সর্ব মহলে প্রশংসিত। যদিও সা¤প্রতিককালে বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালেই রোগী, রোগীর আত্মীয় স্বজন, সাংবাদিক, ডাক্তার ও ইন্টার্নী চিকিৎসকদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। কিন্ত আমাদের এখানে বিগত বছরগুলোতে কখনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা কর্মবিরতির উদাহরণ নাই। বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে যে সব ঘটনা ঘটছে সে সব বিশ্লে¬ষন করলে একটি বিষয় পরিস্কার হবে যে, কোন বিশেষ মহল তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ইন্ধন দিয়ে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে।
ইন্টার্নী চিকিৎসকগণ বয়সে তরুণ, আবেগ প্রবণ, ধৈর্য্য কম, সবে মাত্র ছাত্রত্ব শেষ করেছেন। তাদেরকে উস্কানী দেওয়া খুবই সহজ। একটি বিশেষ কুচক্রী মহল বিভিন্ন সময় নানা ইস্যূতে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার জন্য এসব ইন্টার্নী চিকিৎসদেরকে উস্কানী দিয়ে যাচেছন। আমরা নিবিড় তদারকি, প্রশিক্ষন, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ইত্যাদির মাধ্যমে ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের সার্বক্ষনিক কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের সেবার মান উত্তর উত্তর বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বিগত মাসে একজন রোগীর এটেন্টডেন্স দ্বারা একজন মহিলা ইন্টার্নী চিকিৎসক দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার পরও ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের কর্মবিরতি থেকে বিরত রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। গত ১ মে রাতে ৫নং ওয়ার্ডে কর্মরত একজন ইন্টার্ণী চিকিৎসক ও একজন পুরুষ স্টুডেন্ট নার্স এর মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঐ পুরুষ স্টুডেন্ট নার্স সামান্য আহত হয়। এ ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পরিচালক নিজে, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ওয়ার্ডের অধ্যাপক, রেজিষ্ট্রার, সহকারী রেজিষ্ট্রার, ইন্টার্ণী চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ, নার্স নেতৃবৃন্দ, নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ও অন্যান্য ইনস্ট্রাকটরসহ স্টুডেন্ট নার্সদের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনার পর উভয় পক্ষ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে বিষয়টির ব্যপারে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করা হয়। এই সিদ্ধান্তের পর ঘটনার মীমাংশা হয় এবং সবাই স্ব-স্ব কর্মে ফিরে যান। সামান্য আহত যারা তাদের চিকিৎসা এবং ঐ পুরুষ স্টুডেন্ট নার্সকে ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়। বর্তমানে হাসপাতলে সেবা কার্যক্রমে কোন সমস্যা হচ্ছে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
উলে¬খ্য, রোববার রাত সাড়ে ১২টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চতুর্থ তলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কথা কাটাকাটির জের ধরে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা শিক্ষানবিশ সেবকদের ওপর হামলা চালায়। এতে প্রলয় কুমার নামের এক শিক্ষানবিশ সেবক গুরুতর আহত হন। এছাড়া হামলায় আহত হন আরো পাঁচ শিক্ষানবিশ নার্স।
হামলাকারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের শাস্তির দাবিতে সোমবার সকাল থেকে নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে হাসপাতালে সেবাদান থেকে বিরত রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে মঙ্গলবার সিলেট নার্সিং কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হলেও শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে হলে অবস্থান করছে।
সিলেট ওসমানী হাসপাতালে শিক্ষানবিশ সেবকের উপর হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন # স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি : কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলন
Wednesday, May 21, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment