আমাদের সিলেট ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার কথা স্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সরকারি দলের সাংসদ শামীম ওসমান। তবে ওই ফোনে নূর হোসেনকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন, পালিয়ে যেতে বলেননি বলে দাবি করেছেন সরকারি দলের এ সাংসদ।
একইসঙ্গে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জে তার বিরোধিতা করে আসা নাগরিক আন্দোলনের নেতা রফিউর রাব্বির জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শামীম। তাকে নিরাপত্তা দেয়ারও দাবি জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।
নূর হোসেন ও তাঁর যে ফোনালাপ পত্রিকায় প্রচার হয়েছে সে সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের এই সাংসদ বলেন, ‘এটা একটি গোয়েন্দা সংস’ার রেকর্ড করা ফোনালাপ। কারণ, টেলিফোন ট্র্যাকিং সাংবাদিকেরা করেন না, এটা করেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা। আমার ফোনও সব সময় ট্র্যাকিং করা হয়। এটা জেনেও আমি ফোনে কথা বলি।’ তিনি বলেন, প্রকাশিত ফোনালাপের পুরো কথা এখানে নেই। আংশিক আছে, আংশিক নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের এই সাংসদ বলেন, ‘আমার সঙ্গে ফোনে নূর হোসেন কথা বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা জানতেন ওই সময় নূর হোসেন ধানমন্ডি-৪ নম্বর রোডে আছেন।’ এ সময় শামীম ওসমান পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘তাঁরা (গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা) যদি জানতেন নূর হোসেন ধানমন্ডিতে আছেন, তা হলে তাঁরা নূর হোসেনকে ধরলেন না কেন?’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর র্যাবের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে হওয়া কথার প্রসঙ্গ টেনে শামীম ওসমান বলেন, ‘তিনি (র্যাব কর্মকর্তা) আমাকে বলেন, “আমরা না বাঁচলে আপনিও বাঁচবেন না।”
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে শামীম ওসমান সহযোগিতা করেছেন বলে গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের কথোপকথনের একটি অডিও।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এর দুদিন পর ২৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শামীম ওসমানকে ফোন করেন নূর হোসেন। ১০৩ সেকেন্ড তাদের মধ্যে কথা হয়। শামীম ওসমানকে ফোন করার সময় ধানমন্ডি ৪ নম্বর সড়কের আশপাশে অবস’ান করছিলেন নূর হোসেন।
অডিওর শুরুতে শামীম ওসমানকে সালাম দেন নূর হোসেন। তখন শামীম ওসমান বলেন, ‘খবরটা পৌঁছাই দিছিলাম, পাইছিলা?’ জবাবে নূর হোসেন বলেন, ‘পাইছি, ভাই।’ শামীম ওসমান বলেন, ‘তুমি চিন্তা করো না।’ নূর হোসেন এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাই, আমি লেখাপড়া করিনি। আমার অনেক ভুল আছে। আপনি আমার বাপ লাগেন। আপনারে আমি অনেক ভালোবাসি, ভাই। আপনি আমারে একটু যাওয়ার ব্যবস’া করে দেন।’
জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘একটু সময় দাও। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।’ শামীম ওসমান ‘গৌর দা’ বলে এক লোকের সঙ্গে নূর হোসেনকে দেখা করতে বলেন।
নূর হোসেনের কাছে শামীম ওসমান জানতে চান, ‘কোনো সিল আছে কি না। সিল থাকার কথা জানিয়ে নূর হোসেন বলেন, ‘আছে আছে, সিল আছে, কিন’ যামু ক্যামনে? রেড অ্যালার্ট যে। শামীম ওসমান বলেন, ‘না কিছু নেই। মনে হয় না। তুমি আগাইতে থাক।’ নূর হোসেন তখন বলেন, ‘ভাই, তাহলে একটু খবর নেন। আমি আবার ফোন দেই।’
কথাবার্তার একপর্যায়ে শামীম ওসমান নূর হোসেনকে বলেন, ‘তুমি কোনো অপরাধ করো নাই। আমি জানি, ঘটনা অন্য কেউ ঘটাইয়া এক ঢিলে দুই পাখি মারতেছে।’
এ অডিও প্রকাশের পর গুলশানের নিজ বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান দাবি করেন পালিয়ে যেতে নয়, তিনি নুর হোসেনকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ওকে বলেছিলাম তুমি যদি জড়িত না থাক তাহলে কোর্টে সারেন্ডার করো। পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি।’ শামীম ওসমান দাবি করে বলেন, ‘নুর হোসেন ভারত পালিয়ে যাওয়ার পারসেপশনটা তৈরি করেছে প্রথম আলো।’
নূর হোসেনের সঙ্গে ফোনালাপের কথা স্বীকার শামীম ওসমানের
Friday, May 23, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment