আমাদের সিলেট ডটকম: সিলেটবাসীর শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক এমসি কলেজ ছাত্রাবাস। বহিরাগত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের পুড়িয়ে দেয়া ছাত্রাবাস এখন নতুন-রূপে নির্মিত হয়েছে। জুলাই এর প্রথম দিকে খুলে দেয়া হচ্ছে ছাত্রাবাসটি।কিন্তু থাকার জন্য শুধু বিল্ডিং তৈরি হলেও অনেক কিছুই নেই এখানে। যা আছে তা রুগ্ন,জীর্ণ। নিরাপত্তার জন্য ছাত্রাবাসের চারদিকে গার্ড ওয়াল নির্মাণের দাবীটি দীর্ঘদিনের হলেও তা দেখার কেউ নেই। কলেজে প্রায় সাড়ে ১২ হাজারের উপরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হলেও ছাত্রাবাসে সীট আছে মাত্র ৩শ ৪২টি। শিৰক কোয়ার্টারে ১৬ জনের আবাসন ব্যবস্থা থাকলেও থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তিন চারজন শিৰক কোনমতে আছেন সেখানে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, বড় সমস্যাগুলো সম্পর্কে শিৰা মন্ত্রণালয়কে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোন আশ্বাস আমরা পাইনি।
জানা গেছে, শত বছরের এই ছাত্রাবাসের নিরাপত্তার জন্য গার্ড ওয়াল নির্মাণের দাবী কয়েক যুগ থেকে ছাত্ররা জানিয়ে আসছেন। যে অধ্যক্ষ আসেন তিনি শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন। সর্বশেষ গত বছর ছাত্রাবাস নির্মাণের পূর্বে গার্ডওয়াল নির্মাণের দাবীটি ছিলো। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ছাত্রাবাসের সামনের দিকে কিছু অংশ ওয়াল থাকলেও অনেক অংশ ভেঙ্গে গেছে। ছাত্রাবাসের ভেতর দিয়েই পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন যাতায়াত করছেন অবাধে। পেছনের দিকে একেবারেই খালি। শেষ সীমানা আর গ্রাম একাকার। ফলে গরু ছাগল অবাধে চলাচল করছে। অভিযোগ রয়েছে অতীতে এলাকার বখাটে ছেলেরা হোস্টেলে এসে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করতো। ছাত্রাবাসের সামনের মাঠ এখন গরু ছাগলের একমাত্র চারণভূমিতে পরিণত হওয়ায় খেলাধুলায় সমস্যা হচ্ছে। আর বর্ষায় কাদা জমে আরো খারাপ অবস্থায় চলে যায়। অভিযোগ রয়েছে, হোস্টেলের নিরাপত্তায় সিকিউরিটি গার্ড থাকলেও তারা দায়িত্ব পালন করেন না। কিন্তু বেতন ঠিকই নিচ্ছেন। এছাড়া সাপ্লাই এর পানিই একমাত্র ভরসা। দিনে দুবার পানি আসলেও তা কিছু সময়েই শেষ হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানি পানের জন্য নেই কোন টিউবওয়েল। জানা গেছে, বর্তমান সরকারের গত পাঁচ বছরে ৰমতাসীন দলের ছাত্র-সংগঠন এর অবৈধ হস্তক্ষেপে ছাত্রাবাস এর পরিবেশ খারাপ অবস্থায় চলে যায়। ছাত্রাবাস কর্তৃপৰের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ওই নেতারা তাদের ইচ্ছেমত সব কিছু চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে অবৈধ ছাত্র এবং কিছু অছাত্র ক্যাডার এসে বৈধ ছাত্রদের সীট দখল করে নেয়। টাকা না দিয়ে জোরপূর্বক ক্যান্টিন থেকে খাবার খাওয়া, ছাত্রদের মোবাইল সেট, শার্ট, প্যান্ট চুরির ঘটনাও ঘটেছে। অবৈধ ও অছাত্ররা বৈধ ছাত্রদের সাথে বিভিন্ন সময় বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়তো, খেলাধুলায় প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো। এসব ঘটনার সর্বশেষ ফল ছাত্রাবাস পুড়ানোর ঘটনা। শুধু তাই নয় প্রায় আড়াইশ ছাত্রের বিনোদনের জন্য নেই কোন ব্যবস্থা। টিভি রুম থাকলেও সেটি জীর্ন অবস্থায় পড়ে আছে। ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য একটি হসপিটাল থাকলেও সেটি এখন রুগ্ন অবস্থায়। ডাক্তার আছেন কিন্তু চিকিৎসার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় তারা পারছেন না চিকিৎসা দিতে। ফলে ছাত্ররা বাধ্য হয়েই নগরীতে চলে আসেন ভালো চিকিৎসার জন্য। ছোট্ট একটি মসজিদ রয়েছে কিন্তু সেটিও ভালো অবস্থায় নেই। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে।
ছাত্রী নিবাসে সীট সংকট আরো প্রকট। দূর দূরান্ত থেকে শত শত ছাত্রী আসেন লেখাপড়া করতে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে। কিন্তু তাদের জন্য মাত্র একটি ছাত্রনিবাস। আসন মাত্র ৯২টি। অনেক বাধা ডিঙ্গিয়ে তাদের আসতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রীরা। তবে নতুন নির্মাণাধীন ছাত্রী নিবাসের কাজ শেষ হলে সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। জানা গেছে, ছাত্রাবাসে নতুন বছরে ছাত্রদের ভর্তি নিয়ে আবারো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মেধার ভিত্তিতে ছাত্রদের ভর্তির জন্য এসএসসি ও ইন্টারমিডিয়েট এর ফলাফল বিবেচনা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু একটি প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের নেতারা এই বিধানের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। আর এজন্য ভেতরে ভেতরে ওই প্রভাবশালী সংগঠনের দুটি গ্র্বপ তাদের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগুচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
অধ্যৰ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী জুলাই মাসের প্রথম দিকে ছাত্রাবাসের কার্যক্রম শুরু হবে। এই লৰে পুরাতন হোস্টেল সুপার ও তত্ত্বাবধায়কদের ৩০ জুনের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ৪ জন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক আবু মুসা মোঃ তারেক, পদার্থ বিজ্ঞানের মুদাব্বের হোসেন, সংস্কৃত বিভাগের প্রভাষক সুনিলেন্দু অধিকারী এবং শরীর চর্চার শিৰক সঞ্জিত কুমার পাল। ছাত্রাবাসের সীট সংকট বিষয়ে অধ্যৰের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, অতীতে এ বিষয়ে সীট সংকট এর বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিলো বলে শুনেছি। কিন’ সীট বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার করেনি। আমরা আবারো আবেদন করবো। তিনি বলেন, গার্ডওয়াল বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। ছাত্র সংগঠনের হস্তৰেপ ও অছাত্রদের প্রভাব বিষয়ে তিনি বলেন এটি সব সময় হয়ে থাকে তবে এদের চিন্তা করলে তো হবে না। আমরা নিময়নীতি অনুসরণ করে মেধাবীদের জন্য হোস্টেল খোলে দেব। নতুন ছাত্রাবাস এর কাজ শেষ হলে আরো ১শ ছাত্র থাকার সুযোগ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। অতীতে অবৈধ ছাত্ররা এবং অছাত্ররা সীট দখল বিষয়ে হোস্টেল সুপার বশির আহমদ জানান, আমরা জানি না, তবে আমাদের অজ্ঞাতসারে কেউ থাকতে পারে।
এমসি কলেজে সাড়ে ১২হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ছাত্রাবাসে আসন মাত্র ৩৪২
Saturday, June 21, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment