আমাদের সিলেট ডটকম:
ফলে ফরমালিন মেশানো ব্যবসায়ীরা অর্থাৎ চক্রের মূল দোষীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ জরিমানা, সীলগালা এসব শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে নির্দোষ ব্যবসায়ীদেরকে। এমনই অভিযোগ সিলেটের ফল ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তাদেরকে যে জরিমানা করা হচ্ছে কিংবা তাদের ফল যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে,এতে তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তারা ফলমূলে কখনোই ফরমালিন মেশান না। মূলত সিলেটের বাইরে থেকেই ফরমালিন মিশ্রিত ফল সিলেট নগরীতে আসে।
ফল ব্যবসায়ীরাও চাইছেন ফরমালিন বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকুক। কিন্তু তাদের ভাষ্য হচ্ছে- ‘আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি দরে ফলমূল কিনে এনে সিলেটে বিক্রি করি। এখন ফলে ফরমালিন দেয়া আছে কি নেই, সেটা আমরা বুঝবো কি করে?’
ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা বাইরে থেকে যে ফলমূল কিনে আনেন, সেগুলোতে ফরমালিন কিংবা ফল পাকানোর জন্য কার্বাইড এসব কখনোই মেশান না। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, যেখানে আমরা ফরমালিন মেশাই-ই না, সেখানে আমরা কেন জরিমানা গুনবো? আমরা কেন শাস্তির মুখোমুখি হবো?
ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেখানে ফলের উৎপাদন হয়, যেখান থেকে ফলমূল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, সেইসব স্থানগুলোতে জোরদার অভিযান চালানো হোক। মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ফরমালিন বিরোধী অভিযান কঠোর হলে ফরমালিনযুক্ত ফলমূল আর বাজারে থাকবে না বলেই সিলেটের ফল ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।
জানা গেছে,গত বুধবার থেকে সিলেটে শুরু হয়েছে ফরমালিনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। ওইদিন সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমাস্থ ফলের আড়ৎ ইয়াছিন প্লাজায় ২ শতাধিক পুলিশ নিয়ে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান ও আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে এবং এসএমপি পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে ওই অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে ফলের দোকান ‘নুরানী এন্টারপ্রাইজ’কে ১০ হাজার টাকা, ‘আতিকুর রহমান ফুডস’কে ১০ হাজার টাকা, ‘চিশতিয়া ফলভান্ডার’কে ৫ হাজার টাকা, ‘বাবর এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার টাকা ও ‘মেসার্স হাজী ফার্বককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও অভিযানে বিপুল পরিমাণ ফরমালিনযুক্ত আম,লিচু প্রভৃতি ফলমূল জব্দ করে সেগুলো নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্বরে ধ্বংস করা হয়।
এর পরদিন,গত বৃহস্পতিবার ফলে ফরমালিন বিরোধী অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে মাঠে নামেন খোদ সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নগরীর বন্দরবাজারস্থ ফল মার্কেটে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য সাথে অভিযানের সাথে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাফিজুর রহমান। ওইদিন শতাধিক ফলের দোকানে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করা হয়। বেশ কয়েকটি দোকান থেকে ফরমালিনযুক্ত আম, লিচু, তরমুজ প্রভৃতি ফলের স্যাম্পল ধ্বংস করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। একইসাথে ভবিষ্যতে ফরমালিনযুক্ত ফলমূল বিক্রি না করার নির্দেশও দিয়ে যান সিসিক মেয়র। ওই সময় তিনি এও বলেন, ফরমালিন বিরোধী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বন্দরবাজারস্থ আখতার ফ্রুটস’র মালিক আখতার মিয়া বললেন,গত বৃহস্পতিবার মেয়র যখন অভিযান চালান, তখন তাঁকে বলেছিলাম যে আমরা তো ফলে ফরমালিন মেশাই না,আমরা বাইরে থেকে কিনে এনে বিক্রি করি শুধু। তখন উনি ফরমালিনযুক্ত ফল আমার দোকানে পেলেও জরিমানা করেননি।
সিসিক মেয়র তথা প্রশাসন সিলেটের ফল ব্যবসায়ীদের বিষয়টা এমন করেই অনুধাবন করবেন- এমনটাই আখতার মিয়ার চাওয়া।
এ বিষয়ে ইয়াছিন প্লাজার ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির মিয়া বলেন, আমাদেরও পরিবার-পরিজন আছে। আমরাও ফলমূল কিনে খাই। তাহলে বলুন আমরা কেন ফলে ফরমালিন মেশাবো? তিনি বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন ফল বেপারিদের কাছ থেকে কিংবা ফলের বাগান থেকে ফল কিনে এনে বিক্রি করি। এখন তারা যদি ফলে ফরমালিন কিংবা বিষাক্ত কোনো জিনিস মেশায় সেটা তো আমাদের জানার কথা নয়। তিনি আরো বলেন, এক্ষেত্রে আমরা দোষী না হয়েও দোষী সাজতে হচ্ছে। অর্থাৎ নির্দোষ হয়েও আমরা দোষী!
বশির মিয়া এ ব্যাপারে ফল ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করার চিন্তাভাবনা চলছে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment