মেসির জাদুকরি গোলে আর্জেন্টিনার জয়

Monday, June 16, 2014

বার্সেলোনাকে যেভাবে ধারণ করেন, আর্জেন্টিনাকে নয়- সমালোচকদের এমন কথার জবাব দিয়ে দিলেন লিওনেল মেসি। সোমবার মারাকানায় বসনিয়ার বিপক্ষে ৬৫ মিনিটে জাদুকরি এক গোল করে কাটালেন দীর্ঘ খরা। মেসির দুর্দান্ত ফুটবলে বিশ্বকাপে নবাগত বসনিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শুরুতেই আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে বসনিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে মেসির গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শেষ দিকে বদলি খেলোয়াড় ভেদাদ ইবিসেভিচের গোলে ব্যবধান কমালেও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি বসনিয়া।

রিও দে জেনেইরোর ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামে আত্মঘাতী গোলে তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির ফ্রি-কিক থেকে মার্কোস রোহোর হেড জিয়াদ কোলাসিনাচের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন হয়ে জালে জড়ায়। চলতি আসরে এটি তৃতীয় আত্মঘাতী গোল।

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবলের হুঙ্কার দিলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষণাত্মক ফর্মেশনই খেলতে দেখা যায় বসনিয়াকে। এদিন জেকোই ছিলেন তার একমাত্র ফরোয়ার্ড।

পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণাত্মক ফুটবলের বিকল্প ছিল না বসনিয়ার। ১৪তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়ে যায় বসনিয়া। ইজেত হাইরোভিচের সেই প্রচেষ্টা কোনোমতে ব্যর্থ করে দেন সের্হিও রোমেরো।

৪-৪-২ বা ৫-৩-২ এই দুই ফর্মেশনে দলকে প্রস্তুত করেছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ আলেহান্দ্রো সাবেইয়া। রক্ষণে শক্তি বাড়াতে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় ফর্মেশনটি বেছে নেন তিনি। তাই আক্রমণে গেলে সতীর্থদের খুঁজে পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে মেসিদের।

আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের মধ্যে ৩২তম মিনিটে হাভিয়ের মাসচেরানোর আচমকা শট থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেই ফেলছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে তার প্রচেষ্টাটি ব্যর্থ করে দেন বসনিয়া গোলরক্ষক আসমির বেগোভিচ।

পরের মিনিটে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যায় বসনিয়ার। জেকোর শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। নিজে শট না নিয়ে অরক্ষিত সতীর্থকে বল দিলে ফল ভিন্ন হতেও পারতো।

৪১তম মিনিটে আরো একবার গোলের খুব কাছ থেকে ঘুরে আসতে হয় প্রথমবারের মতো বিশ্ব আসরে খেলা দলটির। সেনাদ লুলিচের হেড ব্যর্থ করে দেন রোমেরো।

মেসির সঙ্গে আগে থেকেই মাঠে ছিলেন সের্হিও আগুয়েরো ও আনহেল দি মারিয়া। আক্রমণের ধার বাড়াতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সাবেইয়া মাঠে নামান ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর’ এর চতুর্থ সদস্য গনসালো হিগুয়াইনকে।

৫৬ মিনিটেই মেসির নৈপুণ্যে সুযোগ পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তার কাছ থেকে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়েছিলেন আগুয়েরো। কিন্তু অনেক ওপর দিয়ে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা।

একের পর এক আক্রমণে বসনিয়ার রক্ষণকে ব্যস্ত রাখার সুফল পেতে দেরি হয়নি। ৬৫ মিনিটেই মেসির জাদুকরী স্পর্শে ব্যবধান দ্বিগুণ করে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা।

মেসি বিশ্বকাপে গোল খরা কাটালেন অনিন্দ্য সুন্দর এক গোল করেই। হিগুয়াইনের সঙ্গে বল দেয়া নেয়া করে ডি বক্সের ঠিক সামনে পৌঁছে যান তিনি। অসাধারণ নিয়ন্ত্রণে কাটান এরমিন বিচাকচিচকে।

শট নেয়ার আগে পৌঁছে গিয়েছিলেন ডি বক্সের ঠিক মাথায়। পা বাড়িয়ে দিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলেন আরেক জন ডিফেন্ডার। ফাঁকি দিয়েছেন তাকেও। এরপর নিলেন বাঁ পায়ের জোরালো শট। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন গোলরক্ষক আসমির বেগোভিচও। কিন্তু তাকেও পরাস্ত করে বারে লেগে বল জড়ায় জালে।

বিশ্বকাপে ৬২৩ মিনিট আর সময়ের হিসেবে আট বছরের অপেক্ষার অবসান হল চারবারের বর্ষ সেরা ফুটবলারের। বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ পর গোল পেলেন মেসি!

মেসির গোলের পর আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে আর্জেন্টিনার আক্রমণগুলো। এ সময় ব্যবধান বাড়ানোর বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু আগুয়েরোদের ব্যর্থতায় তার একটিও কাজে লাগাতে পারেনি টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিটরা।

আর্জেন্টিনার আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত থাকতে হলেও সুযোগ পেলেই পাল্টা আক্রমণে যাচ্ছিল বসনিয়া। তার একটি থেকেই ৮৪তম মিনিটে ব্যবধান কমায় বসনিয়া। বিশ্বকাপ অভিষেকেই তাদের পাওয়া এই গোলটি অবশ্য আর্জেন্টিনার গোলরক্ষকের ব্যর্থতার ফসল। ভেদাদ ইবিসেভিচের শট রোমেরোর দুপায়ের ফাঁক গোলে জালে জড়ায়।

আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে বসনিয়া শট নিয়েছে ১৬টি। লক্ষ্যে শট ছিল ১১টি। আর্জেন্টিনার শট ছিল ১১টি। এর মধ্যে লক্ষ্যে ৫টি। রোমেরোর কয়েকটি সেভ ছিল অসাধারণ। কয়েকবার আক্রমণ চালিয়ে বসনিয়ার রক্ষণভাগ ভাঙতে পারেনি আর্জেন্টিনা।

তবে সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছেন মেসি। ৯০ মিনিট খেলে মেসির পাস সংখ্যা ৬২, শট নিয়েছেন ৩টি। ম্যাচসেরাও তিনি। এ বিশ্বকাপে তারকা খেলোয়াড়েরা গোল পাচ্ছেন, মেসিও পেয়েছেন- এটিই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের সবচেয়ে বড় স্বস্তিদায়ক খবর।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License