আমাদের সিলেট ডটকম: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ এখন উদ্ভট উটের পিঠে চলছে। লক্ষ্য ও গন্তব্য বলে কিছু নেই। শুধুই দিকভ্রান্ত পথ চলা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ স্পৃহার সর্বশেষ রেশটুকু না মেটানো পর্যন্ত বিরোধী দলের রক্ত ঝরিয়েই যাবেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বিএনপি, ২০ দলীয় ঐক্যজোট, জিয়া পরিবার বিনাশের জন্য খাওয়া-দাওয়া-ঘুম ছেড়ে দিয়ে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
গতকাল সোমবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, জনগণের জাগরিত শক্তি বিরোধী দলের অনুকুলে দেখে প্রধানমন্ত্রী কান্ডজ্ঞান হারিয়ে আরো অত্যুগ্র ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তাই সবসময় এই অবৈধ সরকার এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মুখে খুন, খুনী, হত্যা, রক্ত ইত্যাদি শব্দ চুইংগামের মতো লেগেই থাকে। তিনি কখনোই সৌহার্দ্য, স¤প্রীতি, পরমতসহিষ্ণুতা এবং গণতান্ত্রিক ঔদার্য্যে বিশ্বাস করেন না। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের শত্রুদের নয় বরং দেশের বিরোধী দলকেই সবচাইতে বড় শত্রু মনে করেন। এটি তার প্রভুসুলভ মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরো বলেন, সরকারের অপশাসন, কুশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট আর হত্যালীলায় দেশের মানুষ এখন চরম অতিষ্ঠ। কারণ তার এই অবৈধ সরকার জনগণকে শান্তি, স্বস্তি, আহার ও নিরাপত্তা কিছুই দিতে পারেনি। শুধুমাত্র তারা একের পর এক জনগণের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। একের পর এক গণবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন করে জনগণের ভোট, সংসদ, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, নাগরিকের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় স¤প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পায়ে বেড়ি পরানো হলো।
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন নেতা নেত্রীদের যা তা আবোল-তাবোতল, আক্রমণাত্মক কথাবার্তায় তাদের নির্লজ্জতাই ফুটে উঠেছে। তাদের এক কান কাটা নয়, দুই কান কাটা বলেই জনমতকে তোয়াক্কা করতে হয়না। এজন্য তাদের লাজ-লজ্জাও হারিয়ে গেছে। ৫ জানুয়ারির তামাশা থেকে প্রমাণ হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী আজীবন গদি দখল করে রাখার বন্দোবস্ত করেছেন। লোকলজ্জার বালাই নেই বলেই তিনি এই সর্বনাশা পন্থা অবলম্বন করেছেন।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিরোধীতা নির্মূল করার জন্যই ৭২-৭৫ এর একদলীয় নির্মম দুঃশাসনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এই অবৈধ সরকার রাজনৈতিক হত্যা ও গুমের জন্য সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। গুম ও হত্যার ব্যাপক বিস্তারে বাংলাদেশের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। চারিদিকে মানুষের শোক, মাতম ও বিলাপের আওয়াজে এক বেদনাবিধুর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, বিভিন্ন বয়সী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিশেষভাবে তরুনদের সরকারী বাহিনীর ছায়াবৃত লোকেরা ধরে নিয়ে গিয়ে নিরুদ্দেশ করে দিচ্ছে। এদের কারো কারো লাশ কয়েকদিন পর দেশের বিভিন্ন এলাকা তথা হাট, ঘাট, মাঠ, নির্জন এলাকা, নদী-নালা, খাল-বিলে পাওয়া যাচ্ছে। এই সরকার গুম, খুনের তালিকা বৃদ্ধিতে যেন অদম্য উৎসাহবোধ করে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাইটস গ্রুপ, মানবাধিকার সংস্থা সরকারের মানবতাবিনাশী গুম-খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও সরকার কান বন্ধ করে রেখেছে। কথায় আছে চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। মানুষের মানবস্বত্তা তখনই বিলোপ হয় যখন সে রক্তলোলুপ হয়ে উঠে। সে তখন সভ্য যুগে বসবাস করলেও বর্বর যুগ পেরিয়ে বন্য যুগের আচরণ করে। বর্তমান অবৈধ রক্তপিপাসু সরকার বাংলাদেশকে বন্যযুগে পরিণত করার জন্য যাবতীয় আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছে।
বিচাপতিদের অভিশংসের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার প্রতিবাদ করে রিজভী বলেন, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানে একজনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখার জন্যই ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সব ধরনের আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সংবিধানে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে বলে বলা হলেও আদালতের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যই জাতীয় সংসদে বিচারপতিদের অভিশংসন আইন করা হচ্ছে। আর এই আইনের দ্বারা কার্যত প্রধানমন্ত্রীকেই সব বিচারকের ওপর খবরদারী করার ক্ষমতা নিশ্চিত করা হবে। কারণ বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা যাচ্ছে সংসদে। এর ফলেই উচ্চ ও নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগ এবং অপসারণ দুটিই হবে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ীই বিচারপতিদের অপসারিত হতে হবে। আবার তার সুপারিশেই বিচারপতিরা নিয়োগও পাবেন। কারণ দেশের সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো মতামত দিতে পারবেন না। এটি করা হলে জনগণের সুবিচার পাওয়ার শেষ সম্ভাবনাটুকু হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
জিয়া পরিবার বিনাশের জন্য খাওয়া-দাওয়া-ঘুম ছেড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: রিজভী
Monday, August 25, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment