বিবিসিঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধাননগরের পুলিশ ইভ-টিজিং ঠেকাতে মহিলাদের শালীন পোশাক পরা বা ভিড় ট্রেন-বাসে না-ওঠার পরামর্শ দেওয়ার পর তা নিয়ে বিতর্কের মুখে তড়িঘড়ি সেই পরামর্শ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
কলকাতার লাগোয়া অভিজাত এলাকা সল্ট লেক বা বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারেট তাদের ওয়েবসাইটে ইভ-টিজিং ঠেকানোর জন্য যে একগুচ্ছ রাস্তা বাতলেছিল, তার প্রথমেই ছিল ‘শালীন পোশাক’ পরুন। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর তারা এদিন তাদের ওয়েবসাইট থেকে ওই পেজটাই পুরো তুলে নিয়েছে।পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কমিশন বলছে, পুলিশ এভাবে পিছু হঠায় তারা খুব খুশি। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখার্জি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘‘এটাকে আমরা আমাদের বিরাট জয় এবং বিরাট একটা অর্জন হিসেবেই দেখছি।’’কেন ওয়েবসাইট থেকে ওই একগুচ্ছ পরামর্শ প্রত্যাহার করা হল, সে ব্যাপারে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট অবশ্য কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি।ইভ টিজিং ঠেকানোর জন্য ওই সব পরামর্শের নিচে যার স্বাক্ষর ছিল, সেই গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার কঙ্কর প্রসাদ বারুইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি। তার টেলিফোন বারবার বেজে গিয়েছে।
মিঃ বারুই অবশ্য এর আগে কলকাতার একটি সংবাদপত্রকে বলেছিলেন ওই নির্দেশিকা না-দেওয়ার কিছু নেই, কারণ ‘‘যেখানে যেমন দরকার সেখানে তেমন ভাবেই চলা উচিত।’’
কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষ এভাবে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করলেও ওই নির্দেশিকা নিয়ে শহরের মহিলারা অনেকেই প্রতিবাদ জানান।
বিধাননগরের বাসিন্দা শিপ্রা দাশ যেমন বিবিসি-কে বলছিলেন, ‘‘মেয়েদের উত্যক্ত করার ঘটনা পুলিশ ঠেকাতে পারবে না – আর দোষটা চাপানো হবে মেয়েদের পোশাক-আষাকের ওপর, এটা কেমন কথা?’’
ওই নির্দেশিকায় পুলিশ শুধু মেয়েদের শালীন পোশাক পরতেই বলেনি, তার সঙ্গে বেশি রাতে বাড়ি না-ফেরা কিংবা ভিড় বাস-ট্রেনে না-ওঠারও পরামর্শ দিয়েছিল।
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখার্জি অবশ্য বলছেন – তারা এই নির্দেশিকার সঙ্গে কখনওই একমত ছিলেন না, বরং এই ধরনের ‘মধ্যযুগীয় পরামর্শ’ অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলেন।
তিনি বিবিসি-কে বলেন, ‘‘দেখুন শালীন পোশাক বলে কিছু হয় না। পোশাক হয় প্রয়োজনমাফিক। মাঠেঘাটে, স্কুল-কলেজে বা কারখানায় যে মহিলারা কাজ করেন, প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পোশাকও ভিন্ন ভিন্ন হবে। পুলিশকে সেটা বুঝতে হবে।’’
আপাতত বিধাননগরের পুলিশ তাদের ওয়েবসাইট থেকে নির্দেশিকাটি প্রত্যাহার করে নিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা দিতে চাইলেও রাজ্যের নারী আন্দোলনের নেত্রীরা অনেকেই বলছেন ইভ-টিজিং বা মেয়েদের লাঞ্ছনার ঘটনাকে পুলিশ আসলে কী চোখে দেখে, সেটা এই ঘটনায় আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।
এর আগে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একজন বিধায়ক ও অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীও একটি ইভ-টিজিংয়ের ঘটনায় মেয়েদের পোশাক পরার ক্ষেত্রে ‘সচেতন’ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন।
No comments:
Post a Comment