উপজেলা নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় দুই ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন দিতে সাহস পাচ্ছে না সরকার।
এমন দাবি সরকারবিরোধীদের। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যেও এ দাবি জোরালো হয়েছে। বলা হচ্ছে, ঢাকায় ক্ষমতা হারালে সরকার পতনের আন্দোলনে এগিয়ে যাবে বিএনপি। রাজধানীতে দলটিকে ধরাশয়ী করে রাখতেই ডিসিসি নির্বাচন দিচ্ছে না সরকার।
জানা গেছে, ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য উচ্চ আদালত থেকেও কয়েক দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন’ কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। নির্বাচন হলে সরকারের ভরাডুবি হবে এই চিন-া করে নির্বাচন দেয়া হয়নি।
এমনটা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। তাঁদের মতে, ডিসিসি নির্বাচন করাটা সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের মতো এ নির্বাচনে হেরে গেলে ঢাকায় সরকার পতনের আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। তাই ডিসিসি নির্বাচনে সরকারের এত অনীহা।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের ১৪ মে। ওই সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা না থাকায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হয়নি। পরবর্তীকালে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ডিসিসি’কে উত্তর ও দক্ষিণ- দুভাগে ভাগ করা হয়। এতে পদ হারান বিএনপির সহসভাপতি মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ কাউন্সিলররা। সরকারি কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চলে যায় সিটি কর্পোরেশন। আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে ঢাকার এই দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্ত সেই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও নির্বাচন হয়নি।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৪ মে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই নির্বাচন স্থগিত হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলেও সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা থেকে যায়। এরপর ৭ জুলাই ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে গত বছরের ৪ জুন তফসিল ঘোষণার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের আপত্তি ও সীমানা জটিলতার কারণে তা ঘোষণা করা হয়নি। ওই সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় ব্যাপক গণসংযোগও শুরু করেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সবগুলো উপজেলা নির্বাচনের পর স্বভাবতই দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত থাকবে। ইতিমধ্যে বিএনপির তরফে সে ধরনের কর্মসূচির আভাস দেয়া হচ্ছে। পরজয়ের আশঙ্কা নিয়ে তাই সরকার স্বভাবতই ঢাকা সিটির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন দেবে না। বরং রাজধানীতে দলীয় আধিপত্য বজায় রাখতে সেখানে আরও কিছুদিন জেলা প্রশাসক দিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, কমিশন ডিসিসি নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তু। ইতিমধ্যে কমিশন থেকে একাধিকবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এখনও সে চিঠির জবাব দেয়নি।
ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে সরকারে ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকার পরাজয়ের ভয়ে ডিসিসির নির্বাচন দিচ্ছে না। কারণ নির্বাচন দিলেই বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবে। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি বিএনপি অনেক আগেই বুঝেছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, এসব করে আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। যেকোনো উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। সরকার অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় থাকবে আর বিএনপি বসে থাকবে এটা হতে পারে না।
দলটির আরেক নেতা আব্দুস সালাম বলেন, বিএনপির সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সরকার যখনই ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে বিএনপি তখনই অংশগ্রহণ করবে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের এক ঊর্ধ্বতন নেতা বলেন, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে নির্বাচন দেয়া হচ্ছে না। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দেখভাল করছেন।
ভরাডুবির আশঙ্কায় ঢাকা সিটির নির্বাচন দিচ্ছে না সরকার!
Saturday, March 8, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment