আমাদের সিলেট ডটকম:
চাকরী করতেন ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে। সুযোগ পেলেই ছুটে আসতেন গ্রামের বাড়ি বিশ্বনাথে। একমাত্র সন্তান চাঁদনীকে (৪) দেখার জন্য। বাবা এখন আর আসেন না। অপহরণ, নিখোঁজ বা গুম-হত্যার অর্থ চাঁদনী বুঝতে না পারলেও ছোট চাঁদনী ঠিকই বুঝতে পারে তার বাবা আসছেন না। তবুও চাঁদনী তার আব্বু ফিরে আসবেন ভেবে প্রতিদিন পথ চেয়ে আছে।
এদিকে, আনছারের মা এখন শয্যাশায়ী। আনছার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না আনছার আলীর মা নুরজাহান বেগম। আনছার আলীর চাকরির টাকা দিয়েই চলত তাদের পরিবার। একমাত্র আনছারই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আনছার আলী নিখোঁজের পর থেকে পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরায় চলছে এমন অবস্থা।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন। ইলিয়াস আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন আনছার আলী। গাড়িটি বনানী থেকে উদ্ধার হলেও ঘটনার পর থেকে আনছার আলীও নিখোঁজ। নিখোঁজের দীর্ঘ ২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের কোন সন্ধান মিলেনি।
সংশিৱষ্ট সূত্র জানায়, গত ২০ বছর ধরে আনছার আলী ইলিয়াস আলীর বাসায় কাজ করে আসছিলেন। কয়েক বছর থেকে তিনি ইলিয়াস আলীর গাড়ি চালাতেন। ২ভাই ও ২ বোনের মধ্যে আনছার ২য়। বাবা মরহুম ইছব আলী।স্থায়ী ঠিকানা বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের গমরাগুল গ্রামে। ঢাকায় ইলিয়াস আলীর বাসাতেই বসবাস করতেন। ইলিয়াস আলীর সাথে আত্মীয়তার সর্ম্পক ছিল। তিনি ছিলেন ইলিয়াসের খুব বিশ্বস্ত। তার উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলত সংসার। আজ থেকে বছর আগে ছোট ভাইকে দুবাই পাঠিয়েছেন টাকা ধার করে। সেই ধারের টাকা এখনো শোধ হয়নি। আনছার আলীর যে রাতে নিখোঁজ হয়েছেন ওই রাত ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের সাথে আনছার আলীর সর্বশেষ কথা হয়। রাতেই তারা জানতে পেরেছেন ইলিয়াস আলীর সাথে আনছার আলীও নিখোঁজ হয়েছেন। এরপর থেকে আনছারের পরিবারের ভর করে অন্ধকার। কি করবেন দিশেহারা হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। আনছার বাড়িতে আসলেই ছোট্র চাঁদনীকে নিয়েই কাটত তার সময়। ‘আব্বু’ ডাকটি শুনতে আনছার ছিলেন ব্যাকুল। মোবাইল করেও এ ডাকটি শোনার জন্য তিনি দীর্ঘৰণ ফোন কানে ধরে রাখতেন। ৪ বছরের চাঁদনীর মুখে ফুঁটেছে কথা। এখন বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই চাঁদনী বলে ‘আব্বু আমার লাগি মজা লইয়া আইবা’। আনছার নিখোঁজ হওয়ার পর চাল, ডাল তেল কিনতেই পরিবারে চলে ত্রাহি অবস’া। তবে নিখোঁজের পর থেকে ইলিয়াস আলীর পরিবারের পৰ থেকে প্রতি মাসে আনছারের পরিবারকে ৭হাজার টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া কিছু দিন থেকে একটি কিন্ডার গার্ডেনে শিৰকতার চাকুরী নিয়েছেন আনছার আলী স্ত্রী মুক্তা বেগম। বাড়ি থেকে প্রায় ৫কিলোমিটার দূরে অবসি’ত ঐ স্কুলে প্রতিদিন পড়াতে যান মুক্তা বেগম। কখনো কখনো শিশু চাঁদনীকেও সাথে নিয়ে যান। ঐ স্কুলে শিৰকতার বিনিময়ে কিছু সম্মানি পান তিনি। কিন্ত সবমিলিয়ে এইসব টাকা দিয়েই কোনো রকম চলছে তাদের সংসার।
দিন রাত বিলাপ করছেন আনছারের মা নুরজাহান বেগম। সেই ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত তার কান্না এক মুহুর্তেও জন্যও থামেনি। ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে ওঠেন আনছারের নাম ধরে। নুরজাহান জানান, আনছার হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার চিসিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। ওষুধ কেনার টাকা নেই। প্রতি সপ্তাহে তার ডাক্তার দেখানোর কথা। তা এখন বন্ধ। টাকা নেই, কী দিয়ে ডাক্তার দেখাবেন। এক দিকে সন্তানের শোক অন্য দিকে ওষুধ-পথ্যের অভাবে তিনি এখন শয্যাশায়ী। তিনি জানান, ডায়বেটিক্স, হার্ডে সমস্যাসহ নানান রোগে তিনি ভোগছেন। প্রায় ১মাস পূর্বে তার মেয়ে তাকে এক ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ঐসময় ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছিলেন। কিন্ত টাকার অভাবে সেই টেস্ট করানোও সম্ভব হয়নি। ঠিক মতো ঔষধ কিনে খেতে পারছেন না। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর বাসায় ছোট থেকেই আনছার আলী থাকে। ইলিয়াসকে সে মনেপ্রাণে ভালবাসতো, আর ইলিয়াস আলীও আনছারকে তার পরিবারের সদস্যের মতো দেখতেন, স্নেহ করতেন। আমার ছেলে (আনছার) কে তার বন্ধুরা লন্ডন নিতে চেয়েছিল কিন্ত ইলিয়াস আলীকে ছেড়ে যেতে সে (আনছার) রাজি হয়নি। সেই স্পনসরের কাগজপত্র আজো ঘরে পড়ে আছে। নুরজাহান বেগম বলেন, ‘আর কত অপেৰা ! মন তো মানছে না।’ এখনো তিনি অপেৰা করে আছেন হয়তো তার ছেলে আনছার ফিরে আসবে। আবারো মা বলে ডাকবে। আনছার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগমেরও দৃঢ় বিশ্বাস তার স্বামী একদিন ফিরে আসবেন। আনছার আলীর পরিবারের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই আনছার আলীকে অপহরণ করেছে। ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করতে গিয়েই আনছার আলীকে অপহরণ করা হতে পারে বলে তাদের ধারণা।
নিখোঁজের দুই বছর টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না নিখোঁজ আনছারের মা
Sunday, April 20, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment