কোটি কোটি টাকার পাথর ও যন্ত্রাংশ লুটপাট অব্যাহত # ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

Sunday, April 20, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম:

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এবং স্টোন ক্রাশিং প্লান্ট ধ্বংসের দ্বারপান্তে এসে দাড়িয়েছে। রোপওয়ে ও প্লান্ট এলাকায় চলছে পাথর ও মূল্যবান যন্ত্রাংস লুটপাটের মহোৎসব। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে রাতদিন প্রতিদিন সহস্রাধিক লোক রেলওয়ের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মীকর্তা-কর্মচারী, আনসার ও পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সংরক্ষিত এলাকা থেকে অবাধে পাথর লুটে নিচ্ছে দূর্বত্তরা। এর ফলে দেশের একমাত্র রজুপথটি এখন ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী-এমপি, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও উপজেলা পরিষদের একাধিক সভায় ব্যাপক আলোচনা হলেও কোন কিছুই যেন কাজে আসছে না। সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে দীর্ঘদিন থেকে সংবাদ পরিবেশণ করা হলেও দমানো যায়নি দূর্বত্তদের অপতৎপরতা। উপজেলাবাসীর প্রশ্ন দৃর্বৃত্তরাকি এতই ক্ষমতাবান যে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না?

জানা যায় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাংলাদেশের একমাত্র পাথর পরিবহন সংস্থা। এটি নির্মিত হয় ১৯৬৮ সালে। ভোলাগঞ্জ স্টোন ক্রাশিং প্লান্ট ও রোপওয়ে ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত প্রায় ২০ কিঃমিঃ দীর্ঘ রোপওয়ের মাধ্যমে ভোলাগঞ্জ পাথর ক্ষনি থেকে পাথর প্রক্রিয়াজাত করে দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করে আসছে। শুরুর দিকে এ প্লান্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার ঘনফুট পাথর ভাঙ্গা হতো বলে জানা গেছে। এ পাথর প্লান্ট এবং রজ্জুপথকে কেন্দ্র করে ভোলাগঞ্জ এলাকায় পর্যটকের ভীড় লেগে থাকতো। ক্রাশিং প্লান্ট পরিচালনার জন্য ভোলাগঞ্জে নির্মান করা হয় একটি স্বয়ংক্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এ ছাড়া বিস-ীর্ণ এলাকায় নির্মান করা হয় অর্ধশতাধিক আবাসিক কোয়ার্টার। শুরু থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ স্টোন ক্রাশিং প্লান্ট এবং রোপওয়ের পাথর ক্রাশিং এর পরিবহনের মাধ্যমে সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। ৯০ সালের পর থেকে ক্রমশঃ এ প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পাল্লা ভারী হতে থাকে। প্লান্ট এলাকার সংরক্ষিত অঞ্চলের পাথর লুটপাট সহ এ প্রকল্পকে ঘিরে বহুমুখী অপতৎপরতা শুরু হয়। পাথরকে কেন্দ্র করে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও এখানকার সংরক্ষিত পাথর রাতের আধারে চোরাই পথে বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সংশ্লিষ্টরা। পাথর লুটপাটের ফলে ষ্টোন ক্রাশিং প্লান্ট ক্রমশঃ রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। ১৯৯৮ সালে এ প্লান্টে পাথর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় কয়েকজন টালি ক্লার্ক ও পাহারাদার রেখে অন্য সকল কর্মকর্তাকে এ প্লান্ট থেকে অপসারিত করা হয়। ৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার অধিক মূল্যের পাথর ও যন্ত্রাংশ চোরাই পথে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় দূর্বত্তরা বিক্রি করেছে বলে স’ানীয়ভাবে প্রকাশ। মাটি খুড়ে পাথর উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে প্লান্ট এলাকার দুই-তৃতীয়াংশ ভূমি ধলাই নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানে প্লান্ট এলাকার প্রধান চুল্লী পাওয়ার হাউস, আবাসিক ভবন, মসজিদ, স্কুল সহ বিভিন্ন স’াপনা মারাত্বক হুমকীর সম্মখীন হয়ে পড়েছে। রোপওয়ের সংশ্লিষ্ট দূর্নীতিবাজ চক্র, নিরাপত্তার দায়ীত্বে নিয়োজিত আনসার-পুলিশ এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দূর্বৃত্তচক্র লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। সংরক্ষিত এলাকায় ইতিমধ্যে শতাধিক গর্ত খনন করে দূর্বত্তরা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অপর দিকে কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাটের পাশাপাশি প্লান্ট এলাকার মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও লোহা লক্কর রাতের আধারে খুলে নিচ্ছে একাধিক চক্র। পাশাপাশি প্লান্ট এলাকায় পরিত্যক্ত ভবন অপরাধি ও চোরাচালানীদের নিরাপধ আস্তানায় পরিনত হয়েছে।এছাড়াও প্রতিদিন দূর্বত্তচক্র মদ ও জুয়ার আসর বসিয়ে এলাকার পরিবেশকে ভারী করছে তুলছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অধীনে রোপওয়ের নিরাপত্তার দায়ীত্বে নিয়োজিত রয়েছে রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী। আনসার সদস্যরা রয়েছে এর দায়ীত্বে। কিন’ নিরাপত্তার দায়ীত্বে থাকা আনসার সদস্য ও পুলিশের ক্যাশিয়ার পদবীধারী তাজুল ইসলাম (কং নং ১৪৫) এর সহযোগিতায় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের থেকে গর্ত করে ও সেইভ মিশিণ দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে আওয়ামীলীগের একটি প্রভাবশালী মহল। উপজেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে বার বার বলার পরও সংশ্লিষ্টরা এতে পাত্তা দিচ্ছে না। রেলওয়ে ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে একাধিকবার পত্র দেয়া হলেও কাজ হয়নি। ফলে যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে খাচ্ছে। এসব কর্মকান্ডের ফলে দেশের একমাত্র রুজ্জপথটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে।

অর্ধশতকের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ষ্টোন ক্রাশিং প্লান্ট ও রোপওয়ে এলাকায় দূর্ণীতি ও লুটপাটের সহোৎসব অব্যাহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই প্রাচীন স্টোন ক্রাশার প্লান্টটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে উৎপাদনশীল হিসাবে গড়ে তুলতে পারলে তা পরিনত হতো লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানে। অপর দিকে রোপওয়েটি চালু হলে ভোলাগঞ্জ এলাকাটি হতে পারতো পর্যটকদের আকর্ষন কেন্দ্র।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License