শাবির লোক প্রশাসন বিভাগের আন্দোলন নিয়ে ক্যাম্পাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

Thursday, April 10, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম:

তিন দফা দাবিতে ডাকা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে ক্যাম্পাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেছে আন্দোলনকারীরা।

সূত্র জানায়, গত ২ এপ্রিল থেকে স্নাতক শেষ বর্ষের এক ছাত্রীকে বিভাগের কর্মচারী সালেহ আহমেদ কর্তৃক যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে তার বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় সভায় ঐ ছাত্রী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন দাবি করে ঐ শিক্ষকের পদত্যাগ ও শাস্তি দাবি করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে ১০ এপ্রিলের মধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিলে ক্লাস পরিক্ষা স্থগিত করে আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয় যেখানে বিভিন্ন বিভাগের বহিরাগতরাও উপস্থিত ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসকে ডিঙ্গিয়ে গত ৮ এপ্রিল থেকে ৩ দফা দাবিতে আবারো আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এবার সাথে যোগ হয় বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ দাবি। ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন, মিছিল ও গনস্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে, বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছাত্রী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার একটি ব্যাখ্যা বিভাগের নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয়। বিভাগ থেকে গত ৩ তারিখে অনুষ্ঠিত সভার রির্পোর্টেও তিন নাম্বার সিদ্ধান্তে বলা হয়, বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো: নাসির উদ্দিন বিভাগীয় সভায় অংশগ্রহন করেননি এবং কখনো কোন ধরণের অযাচিত বা আপত্তিকর মন্তব্য করেননি।

উল্লেখ্য, পরীক্ষার ডিউটি ও মডারেশনের পরে তিনি শারিরীক অসুস্থতার কারণে বাসায় চলে গিয়েছিলেন এবং বিভাগীয় সভায় যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তার সাথে তিনি একমত আছেন বলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করেন। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখিত শিক্ষক সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্ঠা করে থাকে, সে বিষয়ে সকল শিক্ষক কর্তৃক তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

একই সাথে বিভাগীয় সভায় উপস্থিত না থেকেও কিভাবে নাছির উদ্দিন এ ধরনের মন্তব্য করেছেন এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এতে ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযুক্ত শিক্ষক নাছির উদ্দিন ও বিভাগীয় প্রধানকে বিপদে ফেলতে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিউল ইসলাম, মাহমুদ হাসানসহ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে আন্দোলনে উসকে দিচ্ছেন এবং আন্দোলনকারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের মিটিং: গতকাল বিভাগের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে আন্দোলন স’গিত করতে শিক্ষার্থীদের আহবান জানানো হয়। পরে শিক্ষার্থীরা আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত আন্দোলন স’গিত করে। তবে বিভাগের কোন ধরনের ক্লাস পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।

এদিকে বৃহস্পতিবার তদন- প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

এ ব্যাপারে তদন- কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম দীপু বলেন, তদন্তে বেশ কয়েকটি বিষয় জড়িত থাকায় আজ (বৃহস্পতিবার) রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমরা যত দ্র্বত সম্ভব রিপোর্ট জমা দেয়ার চেষ্টা করবো।

আন্দোলনের নেপথ্য কাহিনী : সূত্র জানায়, চতুর্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা জাতীয় শিক্ষা সফরে কক্সবাজার গেলে সেখান থেকে তাদের সেন্টমার্টিন যাওয়া নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাছির উদ্দিন ও শাহজাহান চৌধুরীর সাথে বাকবিতন্ডা করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদ্বয় বৈরী আবহাওয়া থাকার কারণে মেয়েদের নিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে অপরাগতা প্রকাশ করলে ১৫ জন শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে। এছাড়াও ঐ ব্যাচের দুইজন ছাত্রী বিভাগের বহিরাগত বয়ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে ভ্রমনে গেলে বিষয়টি শিক্ষকদের নজরে আসে। পরে ছাত্ররা সিলেটে ফিরে আসতে মেয়েদেরকে চাঁপ দেয় এবং তারা বিভাগে ফিরে আসলে সর্বসম্মতিক্রমে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে বিভাগের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেযা হয়। মূলত: এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন । এছাড়া অভিযুক্ত আট জন মেয়ে ছাড়া এই ব্যাচের শিক্ষার্থী কিংবা অন্য কোন ব্যাচের শিক্ষার্থী ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর কোন অভিযোগ তুলেনি । এছাড়া যে কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাম্বারিংয়ে পক্ষপাত্বিতের অভিযোগ তুলেছেন ঐ ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক নাছির উদ্দিনের রিসার্চ পেপার থেকে নকল করে টার্ম পেপার সাবমিট করলে তাদেরকে ঐ শিক্ষক আটকে দেন।

তিন দফা দাবিতে সিনিয়র শিক্ষকদের সাক্ষাত : লোক প্রশাসন বিভাগের অচলাবস্থা নিরসনের জন্য বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় গনিত বিভাগে অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিমের নেতৃত্বে ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভূঁইয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন সিনিয়র শিক্ষকরা।

এ সময় শিক্ষকরা ভিসি’র কাছে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। কেউ প্রকৃত দোষী হলে আইনকানুন মেনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে অন্যথায় অভিযোগ বানোয়াট হলে তার পিছনে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তদন্ত সাপেক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস’া গ্রহণ করতে হবে, একটি বিভাগের আন্দোলনে কোন বাহিরের সংমিৱষ্টতা থাকবে তা দূর করতে হবে ক্যাম্পাসে যে সকল কুরুচিপূর্ন ব্যানার, পোস্টার টানানো হয়েছে তা অবিলম্বে সরাতে হবে ।

এ সময় শিক্ষকরা অচিরেই তাদের দাবি গুলো পূরণ না হলে তাদেও সীমিত শক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়তে বাধ্য হবেন বলেও হুশিয়ারি দেন। একই সাথে বিভাগের তদন্ত কমিটিতে ঐ অনুষদের ডিনকে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষকরা।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License