ডিডব্লিউ: মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বিদেশি বন্ধুদের দেয়া ক্রেস্টে এক ভরি সোনার বদলে সোনা আছে ৪ আনা আর ১২ আনাই ফাঁকি৷ এই খবর বাংলাদেশের একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তা নিয়ে চলছে তোলপাড়৷
কিন্তু এই প্রতারণার জন্য কারা দায়ী তা এখনো জানা যায়নি৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে ৩৩৮ বিদেশি ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে সম্মাননা দেয়া হয়৷ আর সম্মাননায় অন্যান্য উপহার সামগ্রীর মধ্যে দেয়া হয় একটি করে ক্রেস্ট৷ ক্রেস্টে ১ ভরি সোনা এবং ৩০ ভরি রূপা থাকার কথা৷ কিন্তু সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই-র পরীক্ষায় দেখা গেছে, তৃতীয় পর্বের ক্রেস্টে ১ ভরি সোনায় আসল সেনা মাত্র সোয়া তিন আনা৷ আর পৌনে ১৩ আনাই সোনা নয়৷ এক ভরি সমান ১৬ আনা৷ অন্যদিকে ৩০ ভরি রূপার পুরোটাই মিছে৷ রূপার বদলে আছে পিতল ও তামা৷ এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে এখন চলছে তোলপাড়৷
সোমবার সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞাকে৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ক্রেস্ট তৈরির বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাজ ছিল না৷ তাই এ বিষয়টি আমার বলার বিষয় নয়৷” তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রতিটি কাজের একটি বিভাজন থাকে৷ আমাদের কাজ ছিল সাইটেশন ও দাওয়াত কার্ড তৈরি করা এবং আসন বিন্যাস করা৷ কিছু কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তাই কে কী করেছে, সেটা আমার বলার বিষয় নয়৷”
আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ক্রেস্ট নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে বলেন, ‘‘আমিও কিছুটা শুনেছি ৷ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে যে-ই হোক৷” ক্রেস্ট সরবরাহ করে ‘এমিকন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান৷ আর সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান মীর দাউদ আহমেদের দাবি, ‘‘গলিয়ে পরীক্ষা করার সময় সোনার সঙ্গে রূপা মিশে গেছে৷” তবে যে যেভাবেই দায় এড়ানোর চেষ্টা করুক না কেন, বিষয়টি নিয়ে সরকার বিব্রত৷ তাই অপরাধীকে চিহ্নিত করার কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷
এ নিয়ে টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য খুবই বিব্রতকর৷ এটি জাতির জন্য অবমাননাকর৷ কারণ এর সঙ্গে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আবেগ জড়িত৷ আর সেই মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বিদেশি বন্ধুদের দেয়া সম্মাননা ক্রেস্টে জালিয়াতি করা হয়েছে – যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷” তিনি বলেন, ‘‘টাকার অঙ্কে এই দুর্নীতি হয়তো খুব বড় নয়৷ তবে সম্মান এবং মর্যাদার প্রশ্নে এটি ক্ষমার অযোগ্য দুর্নীতি৷ কারণ যারা এটা করেছেন, যারা এর জন্য দায়ী, তারা দেশের সম্মানের দিকেও খেয়াল রাখেনি৷ খেয়াল রাখেনি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মানের দিকে৷”
তিনি বলেন, ‘‘দায় এড়ানো নয়, এই জালিয়াতি ও দুর্নীতি নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷ আর দায়ীদের দিতে হবে শাস্তি৷” ড. ইফতেখার আরও বলেন, ‘‘এই ঘটনা প্রমাণ করে, দুর্নীতি কীভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে৷”
No comments:
Post a Comment