আমাদের সিলেট ডটকম:
সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন দৈনিক সিলেটের ডাক এর ডেপুটি চীফ রিপোর্টার সাংবাদিক মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন। শনিবার বিকেলে নগরীর মিরবক্সটুলায় সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার উপর হামলা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাজ উদ্দিনকে প্রথমে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়,শনিবার বিকেলে সাংবাদিক তাজউদ্দিন তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে মীরবক্সটুলাস্থ উইমেন্স হাসপাতালে যান। চিকিৎসা শেষে আসার সময় হাসপাতালের সামনের শাহরিয়ার ফার্মেসী ও সার্জিকেল স্টোরে পাওনা টাকা আনতে যান তাজউদ্দিন। ফার্মেসী মালিক শাহ আলম টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দু’জন বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে শাহ আলম, তার স্ত্রী ও ফার্মেসীর কর্মচারীরা তাজউদ্দিনের উপর হামলা চালায়। এ সময় ফার্মেসীর সামনে আড্ডারত সনি, রণিসহ ছাত্রদলের ৮-১০ জন ক্যাডার সংঘবদ্ধভাবে তাজউদ্দিনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাজউদ্দিনের মাথা ও নাক থেতলে দেয় সন্ত্রাসীরা। আঘাতপ্রাপ্ত হয় তার বাম চোখও। মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন তাজউদ্দিন। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার প্রাইভেট গাড়ি চালক কয়েস আহমদ সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। তার বুকে ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সন্ধ্যায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের চতুর্থ তলার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফার্মেসীর মালিক শাহ আলমের স্ত্রী, শ্বশুর ও ছাত্রদল ক্যাডার রনিকে গ্রেফতার করে।
ছাত্রদলের উঠতি সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকা
ছাত্রদলের ১০/১২ জন উঠতি ক্যাডারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকা। সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। আর এর নেতৃত্বে রয়েছে-মীরবক্সটুলার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে ছাত্রদল ক্যাডার রাইসুল ইসলাম সনি ও আরাফাত ইসলাম বনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এদের নেতৃত্বে প্রায়শ ছাত্রদল ক্যাডাররা মীরবক্সটুলার গলিতে আড্ডা দেয়। মিরবক্সটুলার পাশাপাশি কুমারপাড়া ও কাজিটুলা এলাকার ক্যাডাররাও এখানে এসে জড়ো হয়। তাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ এই এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু, ‘অপমানিত’ হওয়ার ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, মীরবক্সটুলায় সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতার বিষয়টি জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায়ও বেশ কয়েকবার আলোচিত হয়। কিন্তু, এদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মাঝে-মধ্যে তারা জেলে গেলেও আইনের ফাঁক ফোঁকরে বেরিয়ে এসে আবার পুরনো অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে ওই বাসিন্দা জানান।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, এসব ক্যাডারদের কারণে মিরবক্সটুলার বাসিন্দারা চরম অশান্তিতে রয়েছেন। বিভিন্ন মানুষজনকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে এনে এই এলাকায় টর্চার করে। নগরীর অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে সনি ও বনির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তারা অভিযোগ করেন।
অন্য একটি সূত্র জানায়, শাহরিয়ার ফার্মেসীকে ঘিরেও তাদের অপতৎপরতা ছিল লক্ষ্যণীয়। শাহরিয়ার ফার্মেসীর সত্বাধিকারী শাহ আলম কয়েক বছর আগেও নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকের ওয়ার্ডবয় ছিলেন। কয়েক বছরের মাথায় তিনি উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখে ফার্মেসী খুলে বসেন। তাদের সাথে সনি-বনি পার্টনারশীপের বিষয়টিও রহস্যজনক। অভিযোগ আছে-এই ফার্মেসীতে কিছু কিছু ঔষধ নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশী দরে বিক্রি হয়। এ ব্যাপারে কাস্টমাররা কোন অভিযোগ-অনুযোগ করলেই সনি-বনিরা তাদের দিকে তেড়ে আসত।
এলাকাবাসীর দাবি-ওই এলাকায় নিয়মিত র্যাব-পুলিশের টহল জোরদার করা গেলে তাদের অপতৎপরতা অনেকাংশে কমে আসবে।
No comments:
Post a Comment