রাজধানীর বিহারী ক্যাম্পে ত্রিমুখী সংঘর্ষ-আগুনে একই পরিবারের ৮জনসহ নিহত ১০

Saturday, June 14, 2014

আমাদের সিলেট ডেস্ক : রাজধানীর বিহারী ক্যাম্পে আঁতশবাজি-পটকা ফোটানোকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী সংঘর্ষ-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসময় দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলি ও প্রতিপক্ষের আগুনে পুড়ে একই পরিবারের ৮সদস্যসহ ১০জন নিহত এবং অন-ত ১৫জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৫জনকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।নিহতদের পরিবারকে দাফন-কাফনে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জনপ্রতি ২০হাজার টাকা আর্থিক অনুদান ও ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে যুগ্ম পুলিশ কমিশনারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের লাশ মর্গের হিমঘরে সংরক্ষণ করা হলেও ফারেনসিক কর্তৃপক্ষ বোর্ড গঠন করে আজ নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হতে পারে। নিহতরা হচ্ছেন, বেবী আক্তার (৪৫), মেয়ে আফসানা (২৫), সাহানা (২৩), রোকসানা (১৮), ছেলে লালু (১৪), বুলু (১৪), নাতী মারুফ (৩), আত্মীয় বাবুল (২৫), অজ্ঞাত যুবক (২৬) ও আজাদ (৩৫)।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এনএনবিকে জানায়, গতকাল শনিবার ভোরে পল্লবীর কালসী রোডের কুর্মিটোলা বিহারী ক্যাম্পে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।স্থানীয়রা জানায়, পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীরা পল্লবীর বিহারী ক্যাম্পের স্থানীয় মসজিদ ও বাসা-বাড়িতে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল ছিলেন। শবেবরাত উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে মেয়ে-জামাতা ও নাতী-নাতনীরা সবাই মিলে বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দা ইয়াছিন মিয়া ও বেবী দম্পতির বাসায় বেড়াতে যান। রাতভর স্থানীয় মসজিদের থেকে ইবাদত বন্দেগী করছিলেন গৃহকর্তা ইয়াছিন মিয়া। এসময় বাসায় ছিলেন তার স্ত্রী-সন্তান-নাতী ও জামাতাসহ অন্তত ১০/১২জন। মধ্য রাতের পর থেকে পল্লবীর বিহারী ক্যাম্প ও তার আশপাশে বিপুল পরিমান পটকা ও আঁতশবাজি ফোটায় স্থানীয় দু’গ্রুপের লোকজন। এনিয়ে গতকাল ভোর ৪টায় আঁতশবাজি ও পটকা পোটানোকে কেন্দ্র করে বিহারীদের সাথে এলাকাবাসির তুমুল তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। মুহুর্মুহু পটকা বিস্ফোরণে দু’গ্রুপের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। থেমে থেমে পটকার বিস্ফোরণ আর পাল্টা ধাওয়ায় ফজরের নামাজারে আগেই দু’গ্রুপের সদস্যরা রণপ্রস্তুতি গ্রহন করে।স্থানীয়রা আরো জানায়, নামাজের পরপরই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বিহারী ক্যাম্পের নারী-শিশুরা যার যার ঘরে অবস্থান নিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টায় হঠাৎ করেই বিহারী ক্যাম্পের ইয়াছিনের ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। এসময় সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা ঘরের বাইরে দরজায় তালা লাগিয়ে পে্রেটাল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা ইয়াছিনের টিনশেড ঘরটি জ্বলে-পুড়ে যায়। ঘটনার সময় স্থানীয়রা প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে ইয়াছিনের ষোঁড়শী কন্যা ফারজানাকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে পারলেও তালাবদ্ধ ঘরে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের শিশুসহ ৯জণ প্রাণ হারায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা ওই ঘর থেকে ৯জনের পোড়া রাশ বের করে পাশের ফাঁকা জায়গায় রেখে পুলিশের নিকট বুঝিয়ে দেয়। এ খবর মুহূর্তের মধ্যে বিহারী ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ভোর ৬টা থেকে বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দা ও এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এসময় উভয়গ্রুপের সদস্যরা লাঠিসোঁটা, রামদা, ছোরা-চাপাতি নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর সকাল ৭টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন পুলিশ পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় বিহারী ক্যাম্পসহ পল্লবীর কালসী এলাকাসহ আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের গুলিতে ও প্রতিপক্ষের লাঠিচার্জে আজাদ, সরদার, আসলাম, নাদিম, আরজু ও তার বাবা বদরউদ্দিন গুরুতর আহত হয়। পরে সকাল সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন- আহত ৬জনকে পর্যায়ক্রমে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান স্থানীয়রা। এসময় বেলা সাড়ে ১১টায় কর্তব্যরত ডাক্তার পুলিশের গুলিতে আহত পথচারি আজাদকে মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, নিহত আজাদ ছিলেন তাঁতের কারিগর। তার বাবার নাম আব্দুস ছাত্তার। স্ত্রীর নাম সুলতানা বেগম। তিনি ছিলেন ৪ভাই ৫বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি চিলেন ২ছেলের জনক। সপরিবারে তাকেন পল্লবীর কালসী রোডের কুর্মিটোলা বিহারী ক্যাম্পে। ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস’লে পৌঁছে সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে টানা ৩ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এদিকে স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, বিহারী ক্যাম্পের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় দু’গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে পরিবত্রও শবেবরাতের রাতে এলাকায় পটকা ও আঁতশবাজি পোটানোকে কেন্দ্র করে নিছক দুর্ঘটনার অপচেষ্টায় পুর্ব পরিকল্পিতভাবে বিহারী ক্যাম্পের ওই ঘরের বাইরে তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে একই পরিবারের ৮জনসহ ৯জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। নিহতের স্বজন-পরিবার জানায়, ঘটনার পর থেকে তাদের আত্মীয় আশিক এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ওই ঘর থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাত পোড়া লাশটি নিখোঁজ আশিকের হতে পারে বলে ধারণা করছেন নিহতের স্বজন-পরিবার ও পুলিশ। ঘটনার পর পরিস্থিতি শান্ত হলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন,স্থানীয় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াছ মোল্লা ও তার লোকজন পরিকল্পিত এসব হত্যাকাণ্ড বা হাতহাতের ঘটনায় জড়িত। এমপির নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে নিরিহ পথচারি ও বাসিন্দাদের উপর গুলি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এদিকে এ ঘটনার পর দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের লাশ দাফন-কাফন ও পরিবহন খরচ বাবদ জনপ্রতি ২০হাজার টাকা আর্থিক অনুদান ও পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে হতাহতদের ক্ষতিপুরণ দেয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এদিকে গতকাল বিকেল পৌনে ৪টায় একটি পিকআপযোগে একই পরিবারের ৮জনেরসহ ৯টি লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License