আমাদের সিলেট ডটকম : এবার ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর হাতে আটক হলেন সাদা পোশাকে থাকা ১৪ র্যাব সদস্য। মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের শিবালয়ের প্রত্যন্ত শালজানা গ্রামে। রাতেই জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে তাদের থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতভর আটকে থাকার পর গতকাল বুধবার সকালে র্যাব-৪ এর একটি টিম শিবালয় থানায় উপসি’ত হয়ে র্যাবের ওই ১৪ সদস্যকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাত ২টার দিকে শালজানা গ্রামে আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ির পাশের রাস্তায় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ- ৫৩-৪৭৯২) কাদায় আটকে পড়ে। গ্রামের নৈশ প্রহরীদের মাইক্রোবাসের আরোহীদের দেখে ডাকাত বলে সন্দেহ হয়। ইতিমধ্যে জড়ো হওয়া লোকজন মাইক্রোবাসে থাকা ৫ জনের নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের র্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেন। এ সময় গাড়ির আরোহীরা মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলেন। পরে স’ানীয়রা গ্রাম পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, থানার পুলিশসহ বিভিন্ন মহলে খবর দেন। এক পর্যায়ে পায়ে হেঁটে আরো ৯ ব্যক্তি ঘটনাস’লে উপসি’ত হয়ে নিজেদের র্যাব সদস্য বলে দাবি করেন। পুরো ঘটনায় উপস্থিত জনতা, জন প্রতিনিধি ও পুলিশের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। মাইক্রোবাসে আসা ৫ জনকে উদ্ধারের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে অপর ৯ জন হেঁটে কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলো- এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। উত্তেজনা-উত্কণ্ঠার এক পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর পুলিশ ওই ১৪ জনকে থানায় নিয়ে আসে।
ওসি রকিবুজ্জামান জানান, তাদের নিকট থেকে তিনটি পিস-ল, ২১ রাউন্ড গুলি, ৩টি জ্যাকেট এবং কালো গ্লাস ও রঙের ১টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন, মেজর এইচএম সেলিমুজ্জামান, লেফটেন্যান্ট সরফরাজ, ডিএডি এনামুল, সার্জেন্ট আব্দুল আলীম, এসআই হানিফ, এএসআই ইউনুস, কর্পোরাল কাবিরুল, লেফটেন্যান্ট কর্পোরাল চালক ওয়াজ উদ্দিন, আলমগীর, সৈনিক শফিক, আজিবুল, দিদার, কনস্টেবল শাহবুর ও কর্পোরাল রফিক। তবে শালজানা এলাকায় কি কারণে ওই ১৪ জন র্যাব সদস্য সাদা পোশাকে গিয়েছিল তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়া থানায় আটককৃতদের ছবি তুলতে ও তথ্য দিতে র্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আটককৃতদের নিতে আসা র্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার মুহা. ফয়জুল ইসলাম মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শালজানা গ্রামে জনতার হাতে আটক র্যাব সদস্যদের থানা থেকে বুঝে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে এ ব্যাপারে র্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক উইং কামান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান জানান, একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করতে র্যাব সদস্যরা শালজানা গ্রামে গিয়েছিল। প্রথম টিমটি ছিল আভিযানিক দল। দ্বিতীয় টিম ছিল রিজার্ভ ফোর্স। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে আটক করার জন্যই এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। কিন’ বৃষ্টির কারণে গ্রামের কাঁচা রাস-ায় গাড়ির চাকা আটকে যায়। গভীর রাতে এ ধরনের ঘটনায় উত্সুক জনতা ভিড় করে। পরে র্যাব সদস্যরা থানায় যান। ভোরে গাড়ি উদ্ধার হওয়ার পর তারা অভিযান অসমাপ্ত রেখেই ঢাকায় ফিরে আসেন।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের সাথে র্যাবের তিন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর সারাদেশে র্যাব সদস্যদের জড়িয়ে আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে গত ১৪ মে কুমিল্লা থেকে চার যুবককে ধরে এনে তাদের ইয়াবা দিয়ে মুগদা থানায় সোপর্দ করার ঘটনায় র্যাব-৩ এর খিলগাঁও ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডারসহ ১৭ সদস্যকে প্রত্যাহার করে সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। অবশ্য পরে বিষয়টি তদন্ত করার পর র্যাব সদর দফতর থেকে তাদেরকে আবারও খিলগাঁও ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়।
২৮ মে সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে একটি দোকানে ৫শ’ টাকার একটি জাল নোট দিয়ে জিনিস ক্রয়ের সময় দোকানদারের হাতে র্যাব-১০ এর সদস্য শামসুর রহমান আটক হন। পরে তার পকেট থেকে আরো ৯টি জাল নোট উদ্ধার করা হয়। তাকে যাত্রাবাড়ী থানায় সোপর্দ করা হয়।
এছাড়া গত ৮ জুন উত্তরখানে একটি জমি দখল করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হন র্যাব সদস্য আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও কর্পোরাল মিজানুর রহমান। তাদেরকে গ্রেফতার করার পর আদালতের মাধ্যমে নিজ বাহিনীতে বিচারের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জে র্যাবের ১৪ সদস্যকে পুলিশে দিল জনতা
Wednesday, June 11, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment