আমাদের সিলেট ডেস্ক: বাংলাদেশ সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তে ঐ দেশ সমরশক্তি বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে। ২০০৬ সালের পর থেকে আরাকানের আন শহরে সেনাঘাঁটি ও এয়ারবেস নির্মাণ ছাড়াও গত কয়েক মাসের ব্যবধানে তারা নৌ-বাহিনীতে যোগ করেছে আধুনিক ৩টি যুদ্ধজাহাজ। সর্বশেষ যুদ্ধজাহাজ গত ৯ মে মিয়ানমার ন্যাভাল ফোসের্র রেঙ্গুন ডকইয়ার্ড থেকে কমিশনপ্রাপ্ত হয়। এর আগে গত মাচের্র শেষদিকে মিয়ানমার নৌ-বাহিনীতে যুক্ত হয় নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তৃতীয় যুদ্ধজাহাজ (ফ্রিগেট) ১০৮ মিটার দীর্ঘ ‘সিন ফো শিন’ এবং এর আগে ‘ফার্স্ট এট্যাক ক্রাফ্ট এফ-১৪’ নামে আরেকটি যুদ্ধযান। মিয়ানমার নৌবাহিনীর ফেসবুকে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিতে তারা নৌ-বাহিনীর শক্তি বাড়াচ্ছে। নেভির ‘টর্পোডো বোট প্রজেক্টে’র আওতায় তারা একটি বিশাল প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে গত কয়েক মাসে তারা বঙ্গোপসাগরে ৩টি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ নামিয়েছে। প্রথম নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধযান ‘টি-২০১’ গত মাসের ৯ তারিখ মিয়ানমার ন্যাভাল ফোসের্র রেঙ্গুন ডকইয়ার্ড থেকে কমিশনপ্রাপ্ত হয়। ৪৩ মিটার দীর্ঘ এই যুদ্ধ জাহাজ বর্তমানে বঙ্গোসাগরে টহলে রয়েছে। এটি রাডার, ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়। এছাড়া উচ্চগতির এই যুদ্ধজাহাজ যুদ্ধ জাহাজ বিধ্বংসী ৮টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন গাইডেড মিসাইল ও টর্পোডো রয়েছে- যেগুলো সমপ্রতি ‘অতি সস্তা’য় রাশিয়া ও চীন থেকে পাওয়া গেছে বলে মিয়ানমার নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। গত মার্চে উদ্বোধন হওয়ার পর বঙ্গোপসাগরে দায়িত্ব পালনরত মিয়ানমার নৌবাহিনীর ১০৮ মিটার দীর্ঘ যুদ্ধজাহাজ (ফ্রিগেট) ‘সিন ফো শিন’ যোগাযোগ প্রযুক্তি ও আধুনিক ইলেকট্রনিক যুদ্ধাস্ত্র সজ্জিত জাহাজ। এছাড়া ‘ফার্স্ট এটাক ক্রাফট’ নামের গাইডেড মিসাইল সম্বলিত আরেকটি যুদ্ধজাহাজ বঙ্গোপসাগরে নিয়োজিত হয়েছে, যেটি এয়ারক্রাফ্ট ও যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশ নেভি সমপ্রতি চীন থেকে ‘রোমিও’ ক্লাসের দুটি পুরনো যুদ্ধজাহাজ কেনায় পাল্টা ব্যবস’া হিসাবে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছে মিয়ানমার সরকার। মাত্র ৩ বছর আগে তারা রাশিয়া থেকে ‘ফক্সটট’ শ্রেণীর একটি সাবমেরিন কিনেছে, যেটি ‘রোমিও’ ক্লাসের তুলনায় অনেক উন্নত। বর্তমানে মিয়ানমার নৌবাহিনী রাশিয়া থেকে ‘কিলো’ ক্লাসের সাবমেরিন সংগ্রহের চেষ্টা করছে। সেটা সফল হলে তারা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তুলনায় সমরশক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। একটি ‘কিলো’ ক্লাসের সাবমেরিনে ১৮টি টর্পোডো এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ৮টি ক্রুজ মিসাইল থাকে। এছাড়া সমুদ্রে বিচরণের ক্ষমতাও বেশি-প্রায় সাড়ে ৬শ’ কিলোমিটার। এছাড়া মিয়ানমার তাদের পুরনো যুদ্ধজাহাজগুলোকেও আধুনিকায়ন করে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে মিয়ানমার বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমানে- সেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান ঘাঁটি এবং নৌবাহিনীর এয়ারবেস স’াপন করে। ২০০৬ সাল থেকে মিয়ানমার ‘অজ্ঞাত কারণে’ বাংলাদেশকে টার্গেট করে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। তারা আরকানের আন শহরের পাশে সুরক্ষিত সেনা ও বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছে এবং বিশাল এলাকায় সাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। এসব ঘাঁটি দিন দিন সমপ্রসারিত হচ্ছে এবং পাশাপাশি আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র যুক্ত করার মাধ্যমে সমরশক্তি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ২০০৫ সালে তোলা গুগ্ল আর্থ-এর ছবি এবং পরের বছর তোলা ছবির সাথে মিলিয়ে বাংলাদেশ সীমান-বর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাঘাঁটি ও এয়ারবেস স’াপনের বিষয়টি স্পষ্ট ধরা পড়ে। কয়েক বছর আগে কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের মাত্র ১ কিলোমিটার ভিতরে স’াপন করা হয়েছে সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান আঞ্চলিক কার্যালয়। এছাড়া সীমান্তে নির্মাণ করা হয়েছে বাংকার ও পোস্ট। মিয়ানমার নৌবাহিনী দাবি করেছে, এই এলাকার সমুদ্রের তলদেশে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক তেল ও গ্যাস রয়েছে। বর্তমানে মিয়ানমার সরকার সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাইল্যান্ড ও চীনে রফতানি করছে। তারা বঙ্গোপসাগরের বিতর্কিত জলসীমাতেও রিগ স্থাপন করতে চায়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। মাত্র ৬ বছর আগে বিতর্কিত জলসীমায় মিয়ানমারের রিগ বসানো নিয়ে দুই প্রতিবেশী মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর থেকেই মূলত নৌ-শক্তি বাড়াচ্ছে মিয়ানমার। বর্তমানে তারা শক্তিমত্তায় বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে দাবি করে আরো বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডের সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশকেই তারা প্রধান ‘ছায়াশত্রু’ বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে সামরিক কৌশল নির্ধারণ করেছে। সূত্র ইত্তেফাক।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment