নিউইয়র্ক থেকে এনা: উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে মাত্র দুই মাস আগে বাবা মার সাথে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন ১২ বসর বয়সী মুস্তফা রাফিদ। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন এবং আমেরিকার নতুন জীবন কেড়ে নিলো ঘাতক গাড়ি। রাফিদের স্বপ্ন এখন তার নিথর দেহের সাথেই দাফন করা হয়েছে বাফেলোর চিটকোওয়াগা মুসলিম সেন্টারে। মুস্তফা রাফিদের চাচা মোহাম্মদ আব্দুল আলিম বলেন, আমার স্পন্সরেই আমার ভাই মোহাম্মদ আব্দুল আজিম, তার স্ত্রী বেগম খাদিজা এবং দুই পুত্র সন্তান বখতিয়ার আলী (১৯) ও মুস্তফা রাফিদ মাত্র দুই মাস আগে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন। আমি যেহেতু বাফেলোতে থাকি সেহেতু তারা বাফেলো আসে। বাফেলোতে বাসা ভাড়া করে এবং দুই সন্তানকে স্কুলেও ভর্তি করিয়ে দেন। মুস্তফা রাফিদকে ভর্তি করানো হয় চিটকোওয়াগা সেন্ট্রাল স্কুলে। স্কুল চালু হলেই তাদের আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে স্কুলে যাবার কথা। যেহেতু তারা বাংলাদেশ থেকে নতুন এসেছে সেজন্য তাদের ইএসএল শিখানোর জন্য একটি টিউটোরিয়ালে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়।
দুই ভাই বখতিয়ার আলী এবং মুস্তফা রাফিদ অন্যান্য দিনের মত গত ৪ আগস্ট ইএসএল ক্লাস করার জন্য বাসা থেকে দুপুর ১২টা সময় বেরিয়েছিলেন। দুই ভাই-এর দুটো বাইসাইকেল ছিলো। সেই বাইসাইকেলেই বাসা থেকে মাত্র কোয়ার্টার মাইল দূরে স্কুলে যাচ্ছিলেন। রাস্তা ক্রস করলেই স্কুল। রাফিদের চাচা জানান, চিটকোওয়াগার হারলেম ও ওয়ালডিন ক্রস করার জন্য দুই ভাই সিগন্যাল বাটনে টিপ দিয়েছিলেন। কিন্তু সিগন্যাল ঠিক মত কাজ করছিলো না। রাস্তায় কোন গাড়ি না দেখে সিগন্যালের কোন অপেৰা না করে মুস্তফা রাফিদ তার বাইক নিয়ে হারলেম ও ওয়ালডেন স্ট্রিট ক্রস করতে থাকেন। রাফিদ যখন রাস্তার ৮০ ভাগ অতিক্রম করে তখনই সিগন্যাল সবুজ হয়ে যায় এবং একটি প্রাইভেট গাড়ি রাফিদকে প্রচন্ড ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় রাফিদ পড়ে যায় রাস্তায়, আর তার বাইসাইকেলটি ভেঙ্গে পড়ে থাকে সাইডে। চিটকোওয়াগার পুলিশ কর্মকর্তা স্টিফেন ব্রিজের ভাষ্য অনুযায়ী মুস্তফা রাফিদকে প্রথমে একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় এবং দ্বিতীয় গাড়িটি তার উপর দিয়ে চলে যায়। সাথে সাথে পুলিশ ও এ্যাম্বুলেন্স আসে। রাফিদকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। রাফিদের চাচা মোহাম্মদ আব্দুল আলিম আরো জানান, দুই ভাই বাইসাইকেল নিয়ে ইএসএল ক্লাস করতে গেলেও বড় জন সিগন্যাল না দেখে রাস্তা ক্রস করেনি। বখতিয়ার রাস্তার সাইড-ওয়াকেই দাঁড়ানো ছিলেন কিন্তু রাফিদ এত দ্রুত চলে গেল যে তাকে তিনি আটকাতে পারেনি। আর রাস্তাতেই রাফিদের আমেরিকার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল। জনাব আলিম জানান, পুলিশ রাফিদের চাপা দেয়া গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেছে। কিন’ তার বিরুদ্ধে কোন চার্জ গঠন করা হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রাস্তা ক্রস করার সময় অবশ্যই রাফিদের সিগন্যাল দেখা উচিত ছিলো। সিগন্যাল না দেখে রাস্তা ক্রস করার সময়ই এ দুর্ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ৰোভ প্রকাশ করেছেন রাফিদের চাচাসহ বাফেলোতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দ। রাফিদের চাচা বলেন, প্রথমত: সিগন্যালে সমস্যা ছিলো, দ্বিতীয় রাফিদ যদি ভুল করে রাস্তা অতিক্রম করতে যায় তাহলে কী তাকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হবে? একটি মানুষকে চাপা দিয়ে মেরে ফেললো কিন’ কোন চার্জ ছাড়াই তাকে মুক্তি দেয় কীভাবে? তিনি আরো জানান, যে রাফিদকে চাপা দেয় সেও বয়সে ইয়ং ছিলো। তার বয়স ছিলো মাত্র ২০ বছর। তার কানে এয়ারফোন লাগানো ছিলো। তার অভিযোগ চালকও অসতর্ক ছিলো। যে কারণে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
মুস্তফা রাফিদের মৃত্যুতে শোকে হতবিহবল বাংলাদেশ থেকে সদ্য আগত তার মা এবং বাবা। বলতে গেলে তারা এখন বাকরুদ্ধ। কী করবেন, কীভাবে বাকি জীবনকে এগিয়ে নিবেন তাও বুঝতে পারছেন না। রাফিদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাফিদের অনেক স্বপ্ন ছিলো। বিশ্বের উন্নত দেশ আমেরিকায় আসবে, লেখাপড়া করবে, মানুষের মত মানুষ হবে। তার উচ্ছ্বাস থামানো যাচ্ছিলো না। কিন্তু বিধিবাম স্বপ্ন পূরণের আগেই রাফিদ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রাফিদের দেশের বাড়ি ঢাকাতে। তার নামাজে জানাজা গত ৫ আগস্ট চিটকোওয়াগা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তাকে চিটকোওয়াগা মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।
দিশেহারা বাবা- মা: বাফেলো কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া ১২ বছরের শিশু রাফিদের স্বপ্ন ও জীবন কেড়ে নিলো ঘাতক গাড়ি
Thursday, August 7, 2014
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment