পদ্মার তলদেশে ধাতব কাঠামোর অবস্থান চিহ্নিত # মাওয়ায় লঞ্চডুবি : ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার ২৭ টি হস্তান্তর ॥ এখনও নিখোঁজ ১২২

Saturday, August 9, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম : মুন্সীগঞ্জে মাওয়া ঘাটের কাছে পদ্মায় ডুবে যাওয়া ‘পিনাক-৬’ লঞ্চের ৪৩ জন যাত্রীর লাশ এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বজনদের কাছে ২৭টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

তবে দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত ২শ’ কিলোমিটার দূরে ভোলাসহ ভাটি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে লাশ ভেসে উঠছে ।

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, সরকারী তালিকা অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১শ’২২ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে।

গতকাল শনিবার ভোলার হাতিয়ায় আহম্মেদ হোসেন (৪২) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার ইব্রাহিম খানের পুত্র।

এছাড়া দৌলতখানে মঈন (৩) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে বরিশালের হিজলায় শিশুটির মা রোকসানা বেগমের (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয় । এই মা ও পুত্রসহ ৩টি লাশ সনাক্তের পর গতকাল শনিবার স্বজনদের কাছে হস-ান-র করা হয়েছে।

এছাড়া দুপুরে মুন্সীগঞ্জের ক্রাউন সিমেন্টের কাছে ধলেশ্বরী নদী থেকে সাদা গেঞ্জি লাল প্যান্ট পরিহিত আড়াই বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা ৪৩ জনে দাঁড়ালো।

এর মধ্যে ভোলা থেকে ১২, শরীয়তপুর থেকে ১০, বরিশাল থেকে ৯, চাঁদপুরে ৫, লক্ষীপুরে ১, মাদারীপুরে ১ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ায় পর স্বজনদের কাছে হস-ান-র করা হয়েছে।

১২টি অজ্ঞাত লাশ দাফন করা হয়েছে। বাকী ৪টি লাশ মাদারীপুরের শীবচরের পাঁচ্চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্যাম্পে স্বজনের শনাক্তের জন্য রাখা আছে।

উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ১৬ জন নারী, ১৪ শিশু ও ১৩ জন পুরুষ ।

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, লঞ্চ উদ্ধারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

এদিকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুসন্ধানী জাহাজ জরিপ-১০ ও কান্ডারী-২ এবং সাইড স্ক্যান সোনার যন্ত্র ব্যবহার করে ‘তিস-া’, ‘সন্ধান’, ‘আইটি ৯৭’ ও ‘ব দ্বীপ’ শনিবার সকাল থেকে নতুন কৌশলে কাজ করছে।

নৌ বাহিনীর সদর দপ্তরের উপ-পরিচালক কমান্ডার হাবিবুল আলম জানান, দুর্ঘটনাস’লের আশেপাশের ৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা কয়েক দফা সার্চ করার পর এখন স্রোতের অনুকূলে নদীর তলদেশের মাটির সাথে ‘গ্রাফনল’ বেধে জাহাজটি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। স্রোতে যেদিকে যাচ্ছে ‘গ্রাফনল’সহ জাহাটিও সেদিকেই যাচ্ছে। এভাবে প্রায় দুর্ঘটনাস’ল থেকে ভাটি অঞ্চলের দিকে ২০ কিলোমিটার এগিয়ে যাচ্ছে কান্ডারী-২।

এছাড়া গত সোমবার ডুবে যাওয়ার পর লঞ্চটির ওজন অনুযায়ী এবং স্রোতের তীব্রতায় কোথায় গিয়ে লঞ্চটি পড়ে থাকতে পারে তা হিসাব-নিকাশ করে কয়েকটি সম্ভাব্য লোকেশন চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত লোকেশনে জরীপ-১০ কাজ করছে।

এছাড়া ‘তিস্তা’, ‘সন্ধান’, ‘আইটি ৯৭’ ও ‘ব দ্বীপ’ এই চারটি জাহাজ বিভিন্ন লোকেশন টার্গেট করে সাইড স্ক্যান সোনার দিয়ে জোরালোভাবে সন্ধান চালাচ্ছে। নদীর তলদেশ ১০ মিটার থেকে ৪৬ মিটার পর্যন- গভীরতায় এসব সন্ধানী দল কাজ করে যাচ্ছে।

লঞ্চের অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় উদ্ধারকারী জাহাজ ‘নির্ভীক’ ও ‘রুস্তম’ মাঝ পদ্মায় অলস বসে আছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার জানান, চেষ্টার কোন ত্রুটি হচ্ছে না। দুর্ঘটনাস’লে প্রবল ঘুর্নি স্রোতে এবং পানির গভীরতা প্রায় ৮০/৯০ ফুট। ঘুর্নি স্রোতের কারণে নদীর তলদেশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্রোতে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি দূরে সরে গিয়ে বালুর নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারে। তাই লঞ্চটি সনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বিশ্বমানের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা যতদিন পর্যন্ত লঞ্চটি উদ্ধারে সম্ভাবনা দেখছেন, ততদিন পর্যন-ই উদ্ধার তৎপরতা চলানো হবে।

এদিকে সনাক্তাকরী জাহাজ কান্ডারী-২ এর ইনচার্জ (চট্টগ্রাম বন্দরের চিপ হাইট্রো গ্রাফার) নৌ বাহিনীর ক্যাপ্টেন মঞ্জুরুল করিম চৌধুরী জানান, সনাক্তকারী জাহাজ কান্ডারী-২ দুর্ঘটনাস’লের কাছাকাছি ১ কি.মি. ভাটিতে ধাতব কিছু বস-ুর খোঁজ পেয়েছে । তবে এটি পদ্মায় চলমান রয়েছে। স্রোতের কারণে এটি বিভিন্ন দিকে সরে যাচ্ছে।

নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা কমান্ডার মঞ্জুর শনিবার দুপুরে জানান, ‘কয়েকদিনের অনুসন্ধান শেষে আজকে (শনিবার) সার্বিক পর্যালোচনা করে সন্দেহজনক কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সন্দেহের জায়গাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।’

কমান্ডার মঞ্জুর ‘কান্ডারি-২’ জাহাজে অবস’ান করছিলেন। তিনি জানান, ‘বেশি সন্দেহের জায়গাটির গভীরতা ৬০ থেকে ৭০ ফুটের বেশি নয়।’ কমান্ডার মঞ্জুর বলেন, ‘জরিপ-১০’ এর ‘সাইড স্ক্যান সোনার’ যন্ত্রের মাধ্যমে দুর্ঘটনা স’লের দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি ধাতব কাঠামোর অবস’ান চিহ্নিত করা হয়েছে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সন্দেহের জায়গা।’

তিনি জানান, কেবল তথ্য বিশ্লেষনের কাজ শেষ হয়েছে। নদীর তলদেশে প্রচুর স্রোত থাকায় ধাতব পদার্থটি সি’র জায়গায় থাকছে না। খুব ধীরে হলেও স’ান পরিবর্তন করছে। ধাতব খন্ডটির কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License