আমাদের সিলেট ডটকম:
সিলেট সিটি করর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা আমজাদ হোসেন আবজাদ কর্তৃক পানি বিভাগের অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেনকে মারধরের ঘটনায় কাউন্সিলর রুমে ভাংচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে ঐ রুমে আর বসবেন না বলেও জানিয়েছে কাউন্সিলরদের একটি সূত্র।
সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের পানি শাখার অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আনোয়ার হোসেন জানান, বেলা ১১টা দিকে সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী অফিস পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারে অবস্থান করছিলেন তিনি। এ সময় ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এসএম আমজাদ হোসেন আবজাদ আসেন। তিনি কাজলশাহে ডক্টর ফ্লাওয়ার গার্ডেন নামের একটি ১১ তলা টাওয়ারের ডিপ টিউবওয়েলের পাইপের পরিমাপ নিয়ে জানতে চান। আনোয়ার হোসেন দাবী করেন -কাউন্সিলর যে যে প্রশ্ন করছিলেন, তিনি তার জবাব দিচ্ছিলেন। এর ফাঁকে হঠাৎ করে রেগে গিয়ে আনোয়ার হোসেনকে চপেটাঘাত করেন। পরে অফিসের বাইরে এসে পুনরায় তার উপর হামলে পড়েন কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন আবজাদ।
আনোয়ার হোসেন জানান, এর আগে আমজাদ হোসেন আবজাদ বিল্ডিং কোড ও টিউবওয়েল স্থাপনে সিটি কর্পোরেশনের নীতি মালা মানা হয়নি মর্মে অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ দেন। এর তদন্ত মূলত আনোয়ার হোসেনের উপর ন্যস্ত হয়। আনোয়ার হোসেন দাবী করেন, তিনি বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে অফিসকে অবহিত করেছেন। এরপরও কাউন্সিলর ডিপ টিউবওয়েল তুলে তদন্ত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। টিউবওয়েল উত্তোলন তার কাজ নয়, জানালে কাউন্সিলর ক্ষেপে যান আনোয়ার হোসেনের ওপর। এরপর অনেকেরই সামনে তিনি তাকে মারধর করেন।
কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন আবজাদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, একটি ডিপ টিউবওয়েলের ২ ইঞ্চি পাইপের স্থলে ৫ ইঞ্চি পাইপ ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেনের কথা বার্তায়ও যথেষ্ট অসংলগ্নতা ছিল। তিনি বলেন,আমি চড় তাপ্পড় মারিনি। কেউ নিজে বললে কিছু করার নেই। এর চেয়ে বেশি তিনি কিছু বলতে চাননি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশনের পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারের অফিসে ঘটনা ঘটলেও ঘটনার পরপরই আনোয়ার হোসেন দ্রুত জহুরুল আলম নামের এক কর্মকর্তাকে নিয়ে মেয়রর সাথে নগর ভবনে এসে দেখা করেন। জবাবে মেয়র লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলে অফিস থেকে বেরিয়ে যান।
সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেনকে মারধর করা হয়েছে এমন খবরে দুপুর দেড়টার দিকে নগর ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন কর্মচারীরা। এ সময় তারা মেয়রের হাতে লিখিত অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন। মেয়র কাউন্সিলর এডভোকেট সালেহ আহমদকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন। সালেহ আহমদ পরে আনোয়ার হোসেন সহ কর্মচারীদের নিয়ে কাউন্সিলর মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন। সালেহ আহমদ দু’পক্ষের বক্তব্য শুনছিলেন। এ সময় আবারো কাউন্সিলর ও কর্মচারীরা বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তখন বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা মিলনায়তনের গ্লাস ভাংচুর করেন।
সূত্র আরো জানায়, ভাংচুরের ৫/৭ মিনিট পর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগর ভবনে আসেন। তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানকে প্রধান করে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা সিটি কর্পোরেশনের সচিব মমতাজ বেগম ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সুধাময় মজুমদার। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ডক্টর গার্ডেন ফ্লাওয়ারকে ২০১১ সালে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়। তখন বিল্ডিংয়ের কাজ চলছিল। সিটি কর্পোরেশনের অফিসের অনুমতি নিয়ে তারা টিউবওয়েল স্থাপন করেন। তখন কাউন্সিলর ছিলেন আব্দুল খালিক । মূলত ২ ইঞ্চি পাইপের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে ঐ টিউবওয়েলের ৫ ইঞ্চি রয়েছে।
এ ব্যাপারে ডক্টর ফ্লাওয়ার গার্ডেন এর শেয়ার হোল্ডার ডাঃ শাখাওয়াত হোসেন জানান, তারা যথাযথ অনুমতি নিয়ে টিউবওয়েল স্থাপন করেছেন। কর্তৃপক্ষ কোন ত্র“টি পেলে তা সংশোধনে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধূরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানও ফোন রিসিভ করেননি।
অবশ্য প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান লোদী কয়েস লোদী বলেছেন, গতকাল কর্পোরেশনে যা ঘটেছে, তা খুবই ন্যাক্কারজনক। বিগত ১০/১২ বছরেও নগর ভবনে কাউন্সিলরদের সাথে কর্মচারীদের অসদাচরণ কিংবা কাউন্সিলর মিলনায়তনে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। তিনি দাবী করেন,নিশ্চয় এর সাথে কোন রহস্য লুকায়িত রয়েছে। ঘটনার সাথে কারো ইন্ধন রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দরকার বলে লোদী মন্তব্য করেন।
অপরদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, যে মিলনায়তন ভাংচুর করা হয়েছে-সেখানে আর বসবেন না কাউন্সিলররা। ভাংচুরকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত তারা মিলনায়তনে বসা থেকে বিরত থাকবেন।
অফিস সহকারীকে মারধরের ঘটনায় সিটি কর্পোরেশনে তোলপাড়
Monday, November 18, 2013
Labels:
# আমাদের সিলেট
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment