নতুন বার্তা,ঢাকা: রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতিতে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকের পর বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিও সংবিধান অনুযায়ী ভূমিকা নেবেন এবং তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই সংকটের একটা সমাধান হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের শেষ চেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে বিকেল পাঁচটা ৫৫ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান খালেদা জিয়া। তবে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায়। এর আগে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় গুলশানের বাসা থেকে তিনি বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা দেন।
বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে।
রাষ্ট্রপতিকে ১৮ দল যা বলেছে
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের সময় ১৮ দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লিখিত বক্তব্যে ফখরুল রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে বলেন, “আমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে আজ আপনার কাছে এসেছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনার কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনি সরকারকে বলুন, তারা যেন অবিলম্বে সংঘাত, হানাহানি ও হিংস্রতার পথ পরিহার করে সংলাপের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা যেন অবিলম্বে র্নিদলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি সমঝোতার পথে অগ্রসর হয়।”
ফখরুল বলেন, “আমরা দেশে গণতন্ত্র, শান্তি-স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে এখনো সংলাপের মাধ্যমে একটি সমঝোতার পৌঁছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। সরকার তাদের জোটের সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন এবং বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে সংলাপের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।”
তিনি বলেন, “প্রজাতন্ত্রের সংবিধান থেকে উৎসারিত আপনার ক্ষমতা ও সীমবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা সচেতন রয়েছি। কিন্তু কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি আসে যখন রাজনীতিকদের হাতে প্রণীত এবং সংকীর্ণ স্বার্থে রদবদলকৃত সংবিধানের ধারা-উপধারা জনগণের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ থাকে না। তখন তা সংকট নিরসনের পথ-নির্দশনা দিতে সক্ষম হয় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণের প্রত্যাশাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সংবিধানকে পুনর্বিন্যস্ত করতে হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিকেও তখন ইতিহাস-নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমরা মনে করি, আজ জাতীয় জীবনে তেমনই একটি সময় এসেছে। দেশ-জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জনগণের ঐক্যের প্রতীক হিসাবে আপনি নিজে উদ্যোগী হয়ে তেমনই একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবেন, দেশবাসীর সেটাই প্রত্যাশা। আমরাও সেই আশাই করি।”
বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন ১৮ দলের ১৯ জন নেতা। এরমধ্যে বিএনপির নয়জন, জামায়াতের একজন ও ১৮ দলের অন্যান্য দলের নয়জন। খালেদার নেতৃত্বে মোট ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রতিনিধিদলে যারা ছিলেন
বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়া প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
জামায়াতে ইসলামীর ছিলেন দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক একেএম নাজির আহমেদ।
১৮ দলের অন্য দলের মধ্যে ছিলেন: এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অব. অলি আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতীক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলু, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি ও খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা ইসহাক।
No comments:
Post a Comment