সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা থেকে অপহৃত এক জিডিসি পরীক্ষার্থী ছাত্রকে গোয়াইনঘাটের সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে অপহরণের মূল হোতা শাহজাহান আহমদকে।
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে গোয়াইন কলেজের স্ট্যান্ড থেকে তাকে আটক করা হয়। শাহজাহান দক্ষিণ সুরমার থানার বরইকান্দি গাঙ্গু গ্রামের মাসুক মিয়ার পুত্র। সে বর্তমানে গোয়াইনঘাট থানা হাজতে রযেছে। পুলিশের বিশেষ তৎপরতা এবং ইসলামী ব্যাংক তালতলা শাখার বিশেষ সহযোগিতায় মাদ্রসা ছাত্রকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
উদ্ধার হওয়া ইব্রাহীম আলী জানায়, গত ১৬ নভেম্বর রোববার সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে জেডিসি পরীক্ষা দিতে আসে শহরতলীর সিরাজুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসার ছাত্র ইব্রাহীম আলী (১৫)। সে সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের চাতলীবন্দ গ্রামের মৃত আপ্তাব আলীর পুত্র। ইব্রাহীম আলী পরীক্ষা দিয়ে আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বের হলে শাহজাহান আহমদ তাকে ফুসলিয়ে সালুটিকর বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে চৌহাট্টা থেকে নিয়ে যায়।
ইব্রাহীম আলীর বড় ভাই মোহাম্মদ আলী জানান, ৩/৪ মাস আগে তার বাবার সাথে নিজের জমির চাষকৃত তরকারী বিক্রি করতে বন্দর বাজার আসে ইব্রাহীম। তখন পরিচয় হয় শাহজাহানের সাথে। শাহজাহান ইব্রাহীমকে ধর্মের ভাই ডাকে। এরপর শাহজাহান তাদের বাড়িতে যায়। শাহজাহানের সুন্দর ব্যবহার দেখে ঐ ই্রবাহীমের বাবা- মাও তাকে বেশ øেহ করেন। এই সুযোগে বেশ কয়েক দফা ইব্রাহীমদের বাড়িতে বেড়াতে যায় শাহজাহান। পরিচয় ঘটে পরিবারের সদস্যদের সাথে। ফলে বেড়াতে যাওয়ার কথা বললে ইব্রাহীমকে পুনরায় বাড়িতে পৌছে দিবে বলে সে চলে তার সাথে চলে যায়। ১৬ নভেম্বর রাতে ইব্রাহীম ফোন দিয়ে জানায় সে শাহজাহানের সাথে রয়েছে। পরদিন বাড়িতে ফিরে আসবে।
পরদিন শাহজাহানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে শাহজাহন জানায়. তাকে ৭০ হাজার টাকা না দিলেইব্রাহীমকে ছাড়বেন না। তাকে কোথায় রাখা হয়েছে সেটাও গোপন রাখে। তাকে মেরে ফেলবে এমন হুমিকও দেয় শাহজাহান। এরপর থেকে বদলাতে থাকে দৃশ্যপট।
মোহাম্মদ আলী জানান, সোমবার রাতেই আত্মীয়কে বরইকান্দি গাঙ্গু গ্রামে শাহজাহানের বাড়িতে যান তারা। সেখানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর দিনে শুধু মোবাইল ফোনে কথা বলে ইব্রাহীমকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার কোতোয়ালী থানয় একটি সাধারন ডায়েরী করা হয়। যার নং- ৯৫৭ (১৯/১১/২০১৩)। জিডির তদন্তের দায়িত্ব পড়ে এসআই কমরুদ্দিনের উপর। এরপর শুরু হয় ইব্রাহীমকে উদ্ধারের চেস্টা। তখন চাদার টাকা নিয়ে শাহজাহানের সাথে ইব্রাহীমের পরিবারের ধরকসাকসি চলছিল। পুলিশকে বিষয়টি প্রতি মুহূর্ত জানানো হচ্ছিল শাহাজাহানের সাথে আলাপের বিষয়াধি।
এসআই কমরুদ্দিন এরই মধ্যে ঢাকায় তার উর্ধতন অফিসে যোগাযোগ করে শাহজাহান যে মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলছিল, সে ফোনের অবস্থান জানতে সক্ষম হন। গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং টাওয়ারের অধীনে রয়েছে বলে নিশ্চিত হন এসআই কমরুদ্দিন। তখন শাহজাহানের সাথে টাকা লেনদেনের কথাও চলছিল।
মঙ্গলবার রাতে অনেক ধর কষাকষির পর শাহাজাহন ৩০ হাজার টাকা দিলে ইব্রাহীমকে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়। এর আগেই ইসলামী ব্যাংক তালতলা শাখার তার নিজের নামীয় একাউন্ট নাম্বার দেয় শাহজাহান। ঐ একাউন্টে টাকা জমা হওয়ার পর ইব্রাহীমকে ছেড়ে দেবে বলে জানায় সে।
এদিকে শাহজাহানের কথা মত ৩০ হাজার টাকা দিতে সম্মত হন পরিবার। এরপর ইসলামী ব্যাংক সিলেট ব্র্যাঞ্চের ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিনকে অপহরণের বিষয়টি খুলে বলেন, ইব্রাহীমের এক মামা। ঘটনা মুনে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন ব্যাংকের ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিন। এরপ ‘স্টপ পেমেন্ট’ দিয়ে ৩০ হাজার টাকা শাজহানের একাউন্টে জমা দেয়া হয়। একাউন্টে দাবীকৃত ৩০ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়েছে জানালে সে দেড় ঘন্টার মধ্যে সিলেটের কোথাও ইব্রাহীমকে ছেড়ে দিবে বলে জানায়। এরমধ্যে ইসলামী ব্যংকে ফোন দিয়ে তার টাকা জমা হয়েছে কি না জানতে চায়। দায়ত্বি প্রাপ্ত কর্মকর্তা টাকা জমা হয়েছে বলে জানিয়ে যে কোন সময় ঐ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন বলে শাহজাহানকে জানান। তবে চতুর শাহজাহান ব্যাংকের অন্য কোন এক শাখা যোগাযোগ করে ঐ টাকা ‘স্টপ পেমেন্ট’ রয়েছে বলে জানতে পারে। এরপর সে সুর বদলাতে থাকে। স্টপ পেমেন্ট এর শর্ত তুলে না নিলে ইব্রাহীমকে ছাড়বে না বলে জানায়।
অন্য দিকে পুলিশের কাছ থেকে থেকে পাওয়া মোবাইলের অবস্থান জেনে পূর্ব জাফলং এর পাংথুমাই এলাকায় অবস্থান ছুটে যান ঐব্রাহীমের ভাই মোহাম্মদ আলীসহ কজন নিকটাত্মীয়। তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন। গতকাল দুপুরে যখন মাহজাহানের মোবাইলে কথা চলছিল, তখন তার পাশ দিয়ে রাধানগর মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলের মাইকিং চলছিল।
ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে ‘রাধানগর’ শুনা মাত্র নিশ্চিত হওয়া যায় শাহজাহান ঐ এলাকার কোথাও অবস্থান করছে। এরআগ থেকে অবস্থান নেয়া স্বজনদের মাহাজাহান ঐ এলাকায় অবস্থান করছে জানালে তারা তৎপর হয়ে উঠেন। একটি গ্র“প গোয়াইনঘাট কলেজের সামনের সিএনজি অটোরিক্সা স্টেন্ডে অবস্থান নেন। এরমধ্যে দুটি মোটরসাইকেল যোগে
ইব্রাহীমের বড় ভাই মোহাম্মদ আলী তার মামা ও ফুফাতো ভাইকে নিয়ে গোয়াইনঘাট কলেজের সামনে আগ থেকে অবস্থান নেয়া গ্র“পটির সাথে যোগ দেন। বিকেল ৪টার দিকে শাহজাহান পায়ে হেটে এসে দ্রুত সিএনজি অটোরিক্সাকে সিগনাল দিচ্ছিল। এমন সময় মোহাম্মদ আলীকে স্টেন্ডে দাড়ানো দেখে চিৎকার দেয় ইব্রাহীম। তখন মাহজাহান ইব্রহাীমকে রেখে দৌড়ে একটি টিনের ঘরে অবস্থান নেয়। এরপর টিনের ঘর ঘেরাও করে শাহজাহানকে আটক করতে সক্ষম হন এলাকাবাসী। পরে তাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে গোয়াইনঘাট থানায় সোপর্দ করা হয়।
উদ্ধার হওয়ার পর ইব্রাহীম সে ধরা পড়ে যাচ্ছে এমনটা বুঝতে পারে। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছিল। তবে এরআগেই সে ধরা পড়ে যায়।
ধরাপড়ার পর শাহজাহান পুলিশের কাছে জানায়, রোববার থেকে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের ভারতের সীমান্তবর্তী লনি গ্রামের মৃত আব্দুল হকের পুত্র ফয়জুর রহমানের বাড়িতে অবস্থান করছিল। গোয়ানঘাট থানা থেকে ডিউটি অফিসার এসআই ইউনূস ফয়জুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তার নাম আব্দুল হক বলে জানায়। এবং আরো জানায় তার বাড়ি পাংথুমাই গ্রামে। এরআগে ফয়জুর রহমান তার নিজের নাম আব্দুল হক পরিচয়ে ইব্রাহীমের ভাই মোহম্মদ আলীর সাথে টাকা লেনদেনের কথা বলে। এছাড়াও ফয়জুর রহমানের পুত্র আব্দুল লতিফ শাহজাহানের মুলসহযোগী বলে জানাগেছে। গোয়াইনঘাট থানার এসআই ইউনুস জানান, অপহরনের অভিযোগে আটক শাহজাহান থানা হাজতে রয়েছে। আজ তাকে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হবে।
কোতোয়ালী থানার এসআই ও তদন্তকারী কর্মকর্তা কমর উদ্দিন জানান, গোয়াইনঘাট থানা থেকে শাহজাহানকে আটকের বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্ধার হওয়া মাদ্রসা ছাত্র ইব্রাহীমের ভাই বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। আজ শাহজাহানকে সিলেট এনে কোর্টে হাজির করা হবে।
No comments:
Post a Comment