সার্কিট হাউসে মতবিনিময়: দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হবে – অর্থমন্ত্রী

Thursday, January 23, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম:

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি বলেছেন, আগামী ৫ বছরে দেশের শাসন ব্যবস্থা এমনভাবে হবে যার মুল উন্নয়ন কার্যক্রম জেলা ভিত্তিক হবে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শক্তিশালী করে তোলা হবে। এ জন্য জেলা ভিত্তিক পৃথক বাজেট দেয়া হবে। সরকারের প্রথম বছরেই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ‘পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা’ হাতে নেয়া হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউসে সিলেট জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সরকারের এ কৌশলের কথা জানান তিনি।

বক্তৃতাকালে মন্ত্রী বিগত সরকারের আমলে গৃহিত অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উলে­খ করে বলেন, আমরা অতীতেও অনেক আরাধ্য কাজ সাধন করতে পেরেছি। এবারও সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সমাপ্ত করতে হবে।

বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এ এন এম জিয়াউল আলম। সভার শুরুতেই আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ফুল দিয়ে অর্ভ্যর্থনা জানানো হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম।

সভায় অর্থমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ২০১৩ সালের সরকারের শেষ সময়ে দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দেশের অর্থনীতির ক্ষতি যতটুকু ভাবা হয়েছিলো ততটা হয়নি। যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা থেকে উত্তোরণের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণ করার বিষয়টি সরকার বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। তার জন্য জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় থেকে পরামর্শ ও কৌশল নিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সামগ্রিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়াই হচ্ছে বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। সরকারের গৃহিত লক্ষ্য ও সিদ্ধান্তকে যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আরো বেশি দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হতে হবে।

বিরোধীদলের প্রতি উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, হরতাল অবরোধ ও নাশকতা এদেশের জনগণ গ্রহণ করেনি। বিরোধীদলকে দেশবিরোধী এসকল কর্মকান্ড থেকে সরে আসতে হবে। ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে পুলিশকে আরো বেশি সতর্ক থাকার আহŸান জানান তিনি। যাতে কেউ কোন ধরণের নাশকতা কিংবা জনগণের জান-মালের ক্ষতি সাধন করতে না পারে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত মহাজোট সরকারের সময়ে দেশে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এবার রেলওয়ে এর উন্নয়নে গুরুত্ব দিবে সরকার।

দেশে বর্তমানে ১০হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুত ও জ্বালানীর উৎপাদন আরো বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের কাঙ্খিত চাহিদা মেটাতে সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, মহাজোট সরকার কৃষক ও শ্রমজীবি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ফলে দেশে ক্ষুধা ও দারিদ্রতা হ্রাস পেয়েছে। দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে দেশে কৃষি উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। ধান চাষের পাশাপাশি এদেশে ভূট্টা চাষ অধিক ফলন ও লাভজনক উলে­খ করে মন্ত্রী বলেন, কৃষকদের ভূট্টা চাষে উৎসাহিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবে।

অর্থমন্ত্রী সিলেটের উন্নয়ণ প্রসঙ্গে বলেন, বিগত সময়ে আমার অগ্রাধিকার প্রকল্প ছিলো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারকে স্থানান্তর করা, বিমানবন্দর-বাইপাস সড়ক নির্মাণ, নগরবাসীর পানির সমস্যা নিরসনের জন্য ওয়াটার ট্রিটপ্ল্যান্ট নির্মাণ করা এবং কাজির বাজার সেতু নির্মাণ করা। এসব প্রকল্পের কাজ চলছে। অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

মন্ত্রী বলেন, পুরাতন কারাগারের স্থানে নগরবাসীর স্বস্তির জন্য একটি পার্ক নির্মাণ করা আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন। এ ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। কারাগার স্থানান্তরের সাথে সাথেই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্রকে যানজটমুক্ত করতে নগরীতে কার পার্কিংয়ের জন্য একটি নতুন কার পার্ক নির্মাণের কথা উলে­খ করে তিনি বলেন, যেখানে সবাই কার বা গাড়ি পার্কিং করতে পারবে। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেট নগরীর নির্ধারিত এলাকায় যাতে কোনরকম গাড়ি চলাচল না করতে পারে এবং জনগণের স্বাভাবিক চলাফেরা করে হাট-বাজারেসহ প্রয়োজনীয় কাজ শেষ নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়ারও কথা জানান তিনি।

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ড. এ কে মুবিন, সিলেটের ডিআইজি মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন ভূইয়া, এডিশনাল ডিআইজি মো. সাখাওয়াত হোসেন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা প্রমুখ। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। সভায় জেলা ও বিভাগীয় প্রশানের সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License