আমাদের সিলেট ডটকম:
বালাগঞ্জে নজিরবিহীন এক ব্যাংক কেলেংকারির সংবাদ পাওয়া গেছে। সুকৌশলে গ্রাহকদের কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে দু’জন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বালাগঞ্জ থানার মামলা নম্বর ০৮, তারিখ ১৩ফেব্রুয়ারী ২০১৪। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি নিয়ে তদন- করবে বলে জানা গেছে।
বালাগঞ্জ থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় বাজার শাখার দিলারা বেগম নামের একজন গ্রাহক (এফডিআর নং ৪৭৭৬৭৭/৩২২, তারিখ ০১/০৩/২০০৪ইং) গত ৯ফেব্রুয়ারী ব্যাংকে এসে ১৪লাখ টাকার রশিদসহ বর্তমান সি’তি জানতে চান। এ সময় তার ‘এফডিআর এর সংশ্লিষ্ট লেজার ক্রুটির বিষয়াদিসহ মুড়িবহি, এফডিআর খোলার ফরম, স্বাক্ষরযুক্ত কার্ড ইত্যাদিসহ যাবতীয় কাগজাদি ব্যাংক শাখার সর্বত্র খোঁজাখুজি করে পাওয়া যায়নি’। এরপর এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে দেখা যায় আরও কয়েকটি খাতের হিসাবের টাকা এবং কাগজপত্রের গড়মিল রয়েছে। এসব গড়মিলের বিভিন্ন হিসাব খাতে টাকার পরিমাণ প্রায় ৪০লাখ। তবে ব্যাংকের অডিট শাখার অডিট শেষে টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সার্বিক অনুসন্ধানকালে ব্যাংকের কর্মকর্তা বাবুল রঞ্জন পুরকায়স্থকে জেরা করা হলে তিনি এক পর্যায়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনা স্বীকার করেন।
বাবুল রঞ্জন পুরকায়স্থ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার দত্তগ্রামের মৃত মতিলাল পুরকায়সে’র ছেলে। তিনি ৩১ জুলাই ২০০৮ থেকে এই শাখায় পর্যায়ক্রমে ইন্টার্নী এসিসটেন্ট ও অফিসার হিসেবে কর্মরত। তিনি শাখার ‘ক্যাশ বিভাগে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চেক পোস্টিং, লেজার ব্যালেন্সিং, বিদ্যুৎ বিল গ্রহণসহ ইত্যাদি’ কাজ করতেন।
বাবুল রঞ্জন পুরকায়স্থ ঘটনার ব্যাপারে ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা আকন্দ মো. আল আমিনকে নিজের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। আকন্দ মো. আল আমিন বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার ধারাদোয়া গ্রামের মো. আব্দুর রশীদ আকন্দের ছেলে। আকন্দ মো. আল আমিন ব্যাংকের শাখায় ‘কম্পিউটার জিএল সফটওয়ারে যাবতীয় লেনদেন এর কাজ, সংশ্লিষ্ট লেজার সমুহে পোস্টিং, বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রদানে যাবতীয় কার্যাদি, সময়ে সময়ে ক্যাশ বিভাগে পল্লী বিদ্যুতের বিল গ্রহণ, চেক কেন্সেলেশন ও সুপার ভিশন, নগদ গ্রহণ ও পরিশোধসহ এবং সময়ে সময়ে শাখার প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করতে’।
এদিকে বিপুল পরিমাণ এ অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকার হিসেবে জনগণের আমানতের টাকার উপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে ব্যাংকের স্থানীয় শাখার সিনিয়র অফিসার ও ব্যবস’াপক মোহাম্মদ আবুল মনসুর বাদী হয়ে দু’জনকে বিবাদী করে বৃহস্পতিবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ০৮, তারিখ ১৩ফেব্রুয়ারী ২০১৪।
বিবাদীরা হলেন- ব্যাংক কর্মকর্তা বাবুল রঞ্জন পুরকায়স্থ এবং আকন্দ মো. আল আমিন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে,স্থানীয় বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ মতিন, ব্যাংকের গ্রাহক কাজীপুর গ্রামের মো. আব্দুল হামিদ, খারমাপুর গ্রামের সিরাজুজ্জামান খান এবং নিজের ছেলে বাপ্পন পুরকায়স’সহ অন্যান্য উপস্থিত লোকজনের সামনেই বাবুল রঞ্জন পুরকায়স্থ অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে আত্মসাতকৃত টাকার অংশ বিশেষ ২লাখ টাকা নিজ স্বাক্ষরে (১২/০২/২০১৪ই) ফেরত প্রদান করেন। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ৪০ লাখ বা তার চেয়েও বেশি যে পরিমাণ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাবে তা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে লিখিত অঙ্গিকার করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাবুল রঞ্জন পুরকায়স’কে গত ১২ফেব্রুয়ারী অগ্রণী ব্যাংকের বালাগঞ্জ শাখায় বদলী করা হয়েছে আর আকন্দ মো. আল আমিন ঘটনা প্রকাশের আগে বদলি হয়ে বর্তমানে ব্যাংকে যশোর রোড শাখায় খুলনাতে কর্মরত আছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুছ ছালেক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের বোয়ালজুড় বাজার শাখার সিনিয়র অফিসার ও ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল মনসুর বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এ সংক্রান্ত অপরাধটি দুর্নীতি দমন কমিশনের সিডিউলভূক্ত মামলা হওয়ায় দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে শাখার নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে ফোন করলে ব্যাংকে এক কর্মকতা কল রিসিভ করেন। কিন্তু, তিনি তার নিজের পরিচয় জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন ও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতেও রাজি হননি।
No comments:
Post a Comment