মোগলাবাজারে খুন হওয়ার তিনদিন পর গৃহবধু রোজিনার লাশ উত্তোলন স্বামী, দেবর ও শ্বাশুড়ী আটক

Thursday, February 27, 2014

আমাদের সিলেট ডটকম:

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারে স্বামীর বাড়িতে খুন হওয়া গৃহবধু রোজিনার লাশ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মুস-াফিজুর রহমান, মোগলাবাজার থানার এসি দেবাশীষ দাস, ওসি মো. মুরসালিন, ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সুহেল সহ প্রায় হাজার দুয়েক জনতার উপসি’তিতে কবর দেওয়ার তিনদিন পর লাশ উত্তোলন করা হলো। স্বামী, দেবর ও শ্বাশুড়ীর কর্তৃক খুন হওয়া রোজিনার পরিবারের মামলা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশে মোগলাবাজার ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের পঞ্চায়েতী কবর স’ান থেকে রোজিনার লাশ উত্তোলন করে মোগলাবাজার থানা পুলিশ। লাশ উত্তোলনের খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রায় দুই সহস্রাধিক উৎসুক নারী-পুরুষ কবর স’ান এলাকায় ভীড় করেন। জনতাকে সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। লাশ উত্তোলনের পর রোজিনার মা আয়াতুন নেছা ও রোজিনার ভাই হেলিম এবং তাদের পরিবারের লোকজন ঘটনাস’লে মূর্ছা যায়। লাশটি উত্তোলনের সময় লাশের মাথার নীচে কবরের মাটিতে জমাট বাধা রক্ত দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে পড়েন। অথচ স্বামীর পরিবার রোজিনার মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে দাফন কাজ সম্পন্ন করেছিল। পুলিশ লাশ উত্তোলনের পর ছুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এর আগে পুলিশ গত বুধবার মোগলাবাজার থানা পুলিশ স্বামী, দেবর ও শ্বাশুড়ীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় এলাকায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় বইছে।

উল্লেখ্য, গোপালগাঁও গ্রামের মুজিবুর রহমানের স্ত্রী রুজিনা বেগম (৩০) কে পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী সোমবার ভোররাত ৪টার দিকে নিজ বসত ঘরে খুন হয়। সকালে রুজিনার স্বাভাবিক মৃত্যু খবর পৌঁছানো হয় তার পিত্রালয় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছত্রিশ গ্রামে।

ঐদিন বাদ যোহর রুজিনার দাফন সম্পন্ন করা হয়। মৃতদেহ গোসল করানোর সময় রুজিনার পিত্রালয়ের জনৈক মহিলা দেখতে পান নিহতের দেহের পেছন দিকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন এবং রক্তপাত না হওয়ার জন্য তুলা ও কাপড় ক্ষতস্থানে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি জনৈক মহিলা রুজিনার পিত্রালয়ের পুরুষ সদস্যদের জানান। অতপর নিহত রুজিনার ছোট ভাই হেলিম মিয়া বাদী গত মঙ্গলবার মোগলাবাজার থানায় একটি হত্যা দায়ের করেন (মামলা নং-১১, তাং-২৬/০২/১৪ইং)।

এরপর মোগলাবাজার থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে নিহতের স্বামী, শ্বাশুড়ী ও দেবরকে আটক করে। পরবর্তীতে গত মঙ্গলবার সিএমএম আদালতে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদনে-র আবেদন করেন রুজিনার ভাই। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছত্রিশ গ্রামের মৃত চেরাগ আলীর মেয়ে রুজিনা বেগম। প্রায় ৫ বছর আগে রুজিনার সঙ্গে দক্ষিণ সুরমার গোপালগাও গ্রামের মুজিবুর রহমানের বিয়ে হয়। তাদের তিন বছরের একটি পুত্র সন-ান রয়েছে। রুজিনাকে খুন করার পর স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে নিহতের পিত্রালয়ের পরিবার রুজিনাকে খুন করা হয়েছে বলে তাদের সন্দেহ হয়।

অন্য একটি সূত্র জানায় মুজিবুর-এর ১ম স্ত্রী ৫টি সন্তান রেখে পাঁচ বছরে পূর্বে পিত্রালয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। মুজিবুর ২য় স্ত্রী হিসেবে রোজিনাকে বিয়ে করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর রোজিনার সতীনের শিশুপুত্র পুলিশকে খুন হওয়ার ঘটনাটি বলে দেয়। মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুরসালিন জানান, রুজিনাকে হত্যা করে লাশ তাড়াহুড়া করে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হলে তিনজনকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, আটককৃত তিনজনকে বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে।





Share on :

No comments:

Post a Comment

 
Copyright © 2015. Sylhet News.
Design by Herdiansyah Hamzah. Published by Themes Paper. Distributed By Kaizen Template Powered by Blogger.
Creative Commons License