দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, মামলা-মোকদ্দমায় অধিকাংশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হুলিয়া, প্রকাশ্য কর্মসূচিতে ফিরতে না পারা সত্ত্বেও চরম সঙ্কটের মধ্যেও স্থানীয় এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। কেউ কেউ আবার এ নির্বাচনকে অস্তিত্ব রক্ষার শেষ উপায় মনে করছেন। এজন্য প্রথম দফা নির্বাচনে দেশের ৯৭ উপজেলার মধ্যে প্রায় সবকটি উপজেলায় প্রার্থী দিয়েছে দলটি।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের যার যার এলাকায় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অবশ্য স্থানীয় রাজনৈতিক বৈরিতা ও জটিলতার কারণে বিএনপির শীর্ষ নেতার নির্দেশনা কতটা কার্যকর হবে তা কারো কারো মতে বলা সহজ নয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে একক প্রার্থী দেয়ার নির্দেশ থাকলেও নির্দেশ অমান্যের ক্ষেত্রে কঠোর হতে পারছে না দলটি। বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত থাকলেও তা বাস্তায়নের রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সামনে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে। এখন বহিষ্কার করলে কোন্দল আরো বাড়বে। তবে ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা প্রভাব খাটিয়ে বিদ্রোহী কয়েকজনকে বহিষ্কার করিয়েছেন।
সূত্র জানায়, যেখানে একাধিক প্রার্থী আছে অথবা বিদ্রোহী প্রার্থী আছে সেখানে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। একক প্রার্থী নির্ধারণ করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন দলের পাঁচ যুগ্ম মহাসচিব এবং বিভাগীয় কমিটিতে আছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের বাসিন্দা দলের ভাইস চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলার নেতারা।
যেসব উপজেলায় এখনো একই পদে একাধিক প্রার্থী রয়েছে খুব শিগগিরই তাদের মধ্যে সমন্বয় করে একক প্রার্থী দিতে কাজ করছে দলের বিভাগীয় কমিটি। যেসব প্রার্থী বিভাগীয় এই কমিটির সিদ্ধান্ত মানছেন না তাদের ব্যাপারে জেলা কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্র সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। জেলার এই সুপারিশ পর্যালোচনা করে যুগ্ম মহাসচিবদের সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ কমিটি সিদ্ধান্তও দিচ্ছে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, নীলফামারী, খুলনা, রাজবাড়ী, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি সংশ্লিষ্ট উপজেলার বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। জেলা বিএনপির সুপারিশের ভিত্তিতে গোপনে কোনো কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করে চিঠি পাঠানো হয়েছে বা মৌখিকভাবে শাস্তির বিষয় জানানো হয়েছে। আরো বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে জানানো হবে। তবে জেলার সুপারিশ বাস্তবায়ন করা পুরোপুরি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতার প্রভাবের ওপর।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা কোনো দলীয় নির্বাচন নয়। তারপরেও দল এই নির্বাচনের ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। এই মুহূর্তে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকে যদি বহিষ্কারের চিঠিও দল দেয়, তা নির্বাচনের পরে তুলে নেয়া হবে। এটা মাত্র ভয় দেখানোর জন্য। কারণ এই মুহূর্তে তৃণমূলের কোনো নেতাকর্মীকে দল হারাতে চায় না। এছাড়া বিগত আন্দোলন সংগ্রামে এসব তৃণমূল নেতার ভূমিকার কারণেই বিএনপি ঢাকার বাইরে উল্লেখ যোগ্য আন্দোলন জোরদার করতে পেরেছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম দফায় ৯৭ উপজেলায় ১৯ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় দফায় ১১৭ উপজেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় দফায় ৮৩ উপজেলায় ১৫ মার্চ ভোটের দিন ধার্য করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে দল বা জোট সমর্থক প্রার্থীদের পক্ষে যাতে তৃণমূল বা সংশ্লিষ্ট এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বিঘ্ন কাজ করতে পারেন, সে কারণে ৭৫ সাংগঠনিক জেলা সফরের জন্য ৫৬টি টিম গঠন ও গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম প্রধানদের জেলা সফর করার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। শুধু এই সফরই নয়; উপজেলা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তৃণমূলের কেন্দ্রীয়ভাবে সব ধরনের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
- See more at: http://ift.tt/1aIiyxj
No comments:
Post a Comment